মোঘল আমলের স্থাপত্য শিল্পের স্মৃতি বহনকারী ২৭৬ বছরের পুরনো নোয়াখালীর ১৫ কিলোমিটার অদূরে অবস্থিত বজরা শাহী মসজিদ। দিল্লি শাহী মসজিদের আদলে নির্মিত এ মসজিদটি ১১৫৪ হিজরি, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ ইংরেজি সালে মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের আমলে জমিদার আমান উল্লাহ’র তদারকিতে নির্মাণ করা হয়।
স্থাপত্য শিল্পের সুপ্রাচীন নির্দশন বহনকারী মসজিদটি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বজরা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটির বাউন্ডারি দেয়ালের গেইটের ওপরের অংশে এবং মসজিদের ভেতরের দেয়ালে লাগানো বাংলা ও ফার্সি ভাষায় লিখিত শিলালিপির তথ্যানুযায়ী ১৩১৮ থেকে ১৩৩৫ মোতাবেক ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের দিকে বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ এবং খান বাহাদুর মুজির উদ্দীনা কর্তৃক এ
মসজিদটি পুরোপুরি সংস্কার করা হয়।
জমিদার আমান উল্লাহ তাঁর বাড়ীর সামনে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর উঁচু পাড়যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে আকর্ষণীয় তোরণ বিশিষ্ট প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক মসজিদখানা নির্মাণ করেন।
মসজিদের ভিত্তিকে মজবুত করার লক্ষ্যে প্রায় ২০ফুট মাটির নিচ থেকে ভিত্তি স্থাপন করা হয়। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দ্বারা গম্বুজগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। মসজিদের রয়েছে ৩টি ধনুকাকৃতি কারুকার্যখচিত দরজা। মসজিদের প্রবেশ পথের উপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেওয়ালে ৩টি কারুকার্য খচিত মিহরাব আছে।
মসজিদের বাইরের চার কোণায় রয়েছে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ এবং এর দেওয়ালের পুরুত্ব ছিল ১.২২ মিটার এবং বর্তমানে মসজিদের প্রতিটি অংশকে বিভিন্ন রংয়ের চীনা মাটির পাত্রের টুকরা দ্বারা অতিসূক্ষ্মভাবে অলঙ্কৃত করা হয়েছে।
মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরীফের অধিবাসী তৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হযরত শাহ আবু সিদ্দীক এ ঐতিহাসিক মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর বংশধরগণ যোগ্যতা অনুসারে আজও প্রাচীন এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমান ইমাম হাসান সিদ্দিক প্রথম ইমাম শাহ আবু সিদ্দিকের সপ্তম পুরুষ।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নোয়াখালীর এ ঐতিহাসিক মসজিদটির ঐতিহ্য রক্ষার্থে এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।