ঢাকা ০৫:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংসদ রানার জামিন প্রশ্নে রুলের রায় বৃহস্পতিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০১৭
  • ৩০১ বার

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদ হত্যা মামলায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন রানা। তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি রানার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

আদালতে রানার পক্ষে শুনানি করেন আব্দুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন রানা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ৬ এপ্রিল আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। টাঙ্গাইলের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন। আসামিদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির হোসেন আগেই গ্রেপ্তার হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন। আসামি ফরিদ হোসেন কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। আর আসামি আবদুল হক পলাতক অবস্থায় কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহম্মেদ হত্যা মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামের আরও একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই জড়িত।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন (২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি) সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা রাজাকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহম্মেদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজপাড়ায় তার একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহম্মেদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিকশা ছেড়ে ফারুক আহম্মেদের রিকশায় ওঠেন এবং তাকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে রানা ও ফারুক আহম্মেদের কথা হয়। রানা ফারুককে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফারুক এতে রাজি হননি। একপর্যায়ে ফারুক সেখান থেকে বের হলে সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। এ সময় অন্যরা তার মুখ চেপে ধরেন। ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রানার নির্দেশে সেখান থেকে রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় লাশ তুলে নেন রাজাসহ দুজন। তারা ফারুকের বাসার কাছে তার লাশ ফেলে চলে যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাংসদ রানার জামিন প্রশ্নে রুলের রায় বৃহস্পতিবার

আপডেট টাইম : ১২:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদ হত্যা মামলায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন রানা। তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি রানার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

আদালতে রানার পক্ষে শুনানি করেন আব্দুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন রানা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ৬ এপ্রিল আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। টাঙ্গাইলের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন। আসামিদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির হোসেন আগেই গ্রেপ্তার হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন। আসামি ফরিদ হোসেন কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। আর আসামি আবদুল হক পলাতক অবস্থায় কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহম্মেদ হত্যা মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামের আরও একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই জড়িত।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন (২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি) সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা রাজাকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহম্মেদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজপাড়ায় তার একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহম্মেদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিকশা ছেড়ে ফারুক আহম্মেদের রিকশায় ওঠেন এবং তাকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে রানা ও ফারুক আহম্মেদের কথা হয়। রানা ফারুককে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফারুক এতে রাজি হননি। একপর্যায়ে ফারুক সেখান থেকে বের হলে সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। এ সময় অন্যরা তার মুখ চেপে ধরেন। ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রানার নির্দেশে সেখান থেকে রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় লাশ তুলে নেন রাজাসহ দুজন। তারা ফারুকের বাসার কাছে তার লাশ ফেলে চলে যান।