ঢাকা ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের যেকোনো স্থানে ভূমি ব্যবহারে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭
  • ৩১৮ বার

দেশের যে কোনো স্থানে উন্নয়ন কাজে ভূমি ব্যবহারে সরকারের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমন বিধান রেখে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, নতুন আইন না মেনে ভূমিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালালে সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তিনি বলেন, এটি অনেকদিনের একটি প্রত্যাশিত আইন। আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনায় যাতে শৃঙ্খলা আসে এজন্য এটা করা। যাতে পরিকল্পিতভাবে ভূমি ব্যবহার করা হয়। খসড়া আইনে একটি উচ্চপর্যায়ের পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি বড় কমিটি হবে। এ কমিটির মূল দায়িত্ব পলিসি সাপোর্ট দেয়া। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর বা তাদের যে ছোট পরিষদ আছে তাদের দিক-নির্দেশনা দেয়া এবং তদারকি করা। রাজউকসহ এ সংক্রান্ত অন্য কর্তৃপক্ষের কাজের সমন্বয় করবে উপদেষ্টা পরিষদ। শফিউল আলম বলেন, দৈনন্দিন কাজ করার জন্য থাকবে নির্বাহী পরিষদ। নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান বা সভাপতি হবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব। অন্যান্য সদস্য মিলে এটা হবে ২৫ জনের কমিটি। এখানে বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে এ পরিষদ। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী নির্বাহী পরিষদ উপদেষ্টা পরিষদের কাছে পরিকল্পনা সুপারিশসহ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা ও এ সংক্রান্ত উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে হবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ছাড়পত্র দিতে নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে পারবে। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে নগর ও অঞ্চলের পরিকল্পনা ও ভূমির ব্যবহার ব্যবস্থাপনা প্রণয়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ করা যাবে। খসড়া আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এই আইনের অধীন প্রণীত পরিকল্পনা, বিধি, কোনো আদেশ, নির্দেশ মোতাবেক কাজ না করলে বা কোনো ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এগুলো লঙ্ঘন করে কাজ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। গ্রাম এলাকায় কাজ করতে হলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো তাদের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাগুলোতে নিজেরা অনুমোদন দেবে। পৌরসভা ও স্থানীয় পরিষদ নিজেদের গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করবে। এর আগে তারা যেসব কাজ করছে তা এই আইনের মধ্যে গণ্য হবে। ভূমিতে উন্নয়ন কাজে এখনো ছাড়পত্র নিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এখন গ্রামে একটা বাড়ি করতে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নিতে হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেয়া হয় না। নতুন আইন অনুযায়ী সারা দেশের যে কোনো জমি ব্যবহার করতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। অনেক বিষয়ই আইনে নেই। বিধিতে সেগুলো পরিষ্কার করা হবে। শফিউল আলম বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে মানুষের বাড়িঘর নির্মাণের বিষয়টি আছে। ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়টি গ্রাম পর্যায়ে চলে যাবে, এটি পুরো দেশ কাভার করবে। জমির মিস ইউজ যেন কম হয়। প্রতি বছর এক শতাংশ কৃষি জমি কমে যাচ্ছে, সেটা ঠেকানো দরকার। এদিকে জরিমানা বাড়িয়ে ‘বালাইনাশক আইন, ২০১৭’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্সকে বাংলায় অনুবাদ করে বালাইনাশক আইন হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। নতুন আইনে অপরাধগুলোর ধরন একই রয়েছে, তবে কোনো কোনো জায়গায় শাস্তি একটু বাড়ানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর ২০০৭ ও ২০০৯ সালে সংশোধন করে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। রেজিস্ট্রার্ড ব্র্যান্ডের কোনো বালাইনাশক বিক্রি বা বিক্রির জন্য উন্মুক্ত, মজুত বা বিজ্ঞাপন দিলে যার ট্যাগ, লেবেল বা প্যাকেজ চিহ্নিত ব্র্যান্ডের প্রকৃতি, উপাদান বা গুণাগুণ যুক্ত না হলে এবং বিজ্ঞাপনে বালাইনাশক মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। শফিউল আলম বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী প্রথমবার এ সব অপরাধ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একই অপরাধ আবার করলে জরিমানা এক লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে। আগে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করার ক্ষেত্রে জরিমানা ছিল ৭৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ জরিমানা ছিল এক লাখ টাকা। বিভিন্ন অপরাধের জন্য কারাদণ্ড আগের মতোই এক বছর ও ২ বছর রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশের যেকোনো স্থানে ভূমি ব্যবহারে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭

দেশের যে কোনো স্থানে উন্নয়ন কাজে ভূমি ব্যবহারে সরকারের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমন বিধান রেখে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, নতুন আইন না মেনে ভূমিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালালে সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তিনি বলেন, এটি অনেকদিনের একটি প্রত্যাশিত আইন। আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনায় যাতে শৃঙ্খলা আসে এজন্য এটা করা। যাতে পরিকল্পিতভাবে ভূমি ব্যবহার করা হয়। খসড়া আইনে একটি উচ্চপর্যায়ের পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি বড় কমিটি হবে। এ কমিটির মূল দায়িত্ব পলিসি সাপোর্ট দেয়া। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর বা তাদের যে ছোট পরিষদ আছে তাদের দিক-নির্দেশনা দেয়া এবং তদারকি করা। রাজউকসহ এ সংক্রান্ত অন্য কর্তৃপক্ষের কাজের সমন্বয় করবে উপদেষ্টা পরিষদ। শফিউল আলম বলেন, দৈনন্দিন কাজ করার জন্য থাকবে নির্বাহী পরিষদ। নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান বা সভাপতি হবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব। অন্যান্য সদস্য মিলে এটা হবে ২৫ জনের কমিটি। এখানে বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে এ পরিষদ। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী নির্বাহী পরিষদ উপদেষ্টা পরিষদের কাছে পরিকল্পনা সুপারিশসহ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা ও এ সংক্রান্ত উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে হবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ছাড়পত্র দিতে নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে পারবে। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে নগর ও অঞ্চলের পরিকল্পনা ও ভূমির ব্যবহার ব্যবস্থাপনা প্রণয়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ করা যাবে। খসড়া আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এই আইনের অধীন প্রণীত পরিকল্পনা, বিধি, কোনো আদেশ, নির্দেশ মোতাবেক কাজ না করলে বা কোনো ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এগুলো লঙ্ঘন করে কাজ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। গ্রাম এলাকায় কাজ করতে হলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো তাদের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাগুলোতে নিজেরা অনুমোদন দেবে। পৌরসভা ও স্থানীয় পরিষদ নিজেদের গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করবে। এর আগে তারা যেসব কাজ করছে তা এই আইনের মধ্যে গণ্য হবে। ভূমিতে উন্নয়ন কাজে এখনো ছাড়পত্র নিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এখন গ্রামে একটা বাড়ি করতে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নিতে হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেয়া হয় না। নতুন আইন অনুযায়ী সারা দেশের যে কোনো জমি ব্যবহার করতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। অনেক বিষয়ই আইনে নেই। বিধিতে সেগুলো পরিষ্কার করা হবে। শফিউল আলম বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে মানুষের বাড়িঘর নির্মাণের বিষয়টি আছে। ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়টি গ্রাম পর্যায়ে চলে যাবে, এটি পুরো দেশ কাভার করবে। জমির মিস ইউজ যেন কম হয়। প্রতি বছর এক শতাংশ কৃষি জমি কমে যাচ্ছে, সেটা ঠেকানো দরকার। এদিকে জরিমানা বাড়িয়ে ‘বালাইনাশক আইন, ২০১৭’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্সকে বাংলায় অনুবাদ করে বালাইনাশক আইন হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। নতুন আইনে অপরাধগুলোর ধরন একই রয়েছে, তবে কোনো কোনো জায়গায় শাস্তি একটু বাড়ানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর ২০০৭ ও ২০০৯ সালে সংশোধন করে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। রেজিস্ট্রার্ড ব্র্যান্ডের কোনো বালাইনাশক বিক্রি বা বিক্রির জন্য উন্মুক্ত, মজুত বা বিজ্ঞাপন দিলে যার ট্যাগ, লেবেল বা প্যাকেজ চিহ্নিত ব্র্যান্ডের প্রকৃতি, উপাদান বা গুণাগুণ যুক্ত না হলে এবং বিজ্ঞাপনে বালাইনাশক মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। শফিউল আলম বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী প্রথমবার এ সব অপরাধ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একই অপরাধ আবার করলে জরিমানা এক লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে। আগে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করার ক্ষেত্রে জরিমানা ছিল ৭৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ জরিমানা ছিল এক লাখ টাকা। বিভিন্ন অপরাধের জন্য কারাদণ্ড আগের মতোই এক বছর ও ২ বছর রয়েছে।