গাছ শব্দটির মধ্যে জীবনের ঘ্রাণ আছে। গাছের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুনিবিড়। আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জোগায় গাছ। প্রকৃতিতে গাছ গুরুত্বপূর্ণ হলেও আর্থিক দিক বিবেচনায় সব গাছ আমদের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়।কিছু কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো অর্থের মূল্য বিচারে অনেক দামি। আজ জানব এমন একটি গাছের কথা, যার মূল্য স্বর্ণের চেয়েও বেশি।
এই মহামূল্যবান গাছটির নাম আগর উড বা আগর গাছ। হাজার বছর আগে থেকেই আগরের রেনিনযুক্ত কাঠ ধ্যানের সময় সুগন্ধী ছড়নোর জন্য জ্বালানো হতো। খ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকেই চীন, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যে আগর গাছ সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
আগর গাছ থেকে আহরিত তেল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধী। ধর্মীয় কারণে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা আগরের সুগন্ধীকে মহামূল্যবান বস্তু মনে করে। এই সুগন্ধীর মূল বৈশিষ্ট হলো- এটি সম্পূর্ণ অ্যালকোহল মুক্ত। ফলে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে এই সুগন্ধীর আকাশ ছোঁয়া চাহিদা রয়েছে।
আগরের সুগন্ধীকে কেউ কেউ প্রশান্তিদায়ক ও শরীরের জন্য শক্তিবর্ধক বলে মনে করে। মালয় ও চীনাদের আদি চিকিৎসা পদ্ধতিতে আগর ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আগর গাছ থেকে তৈরি কাঠের টুকরা, আগর তেল বা আতর উভয়ই সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আগর কাঠ থেকে তৈরি পাউডারজাতসামগ্রী প্রজ্বলনের মাধ্যমে সুবাস নেওয়া হয়। এ ছাড়া আগর গাছে নির্যাস সুগন্ধী সাবান, শ্যাম্পুসহ অন্যান্য প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
যে গাছের নির্যাস থেকে এই মহামূল্যবান সুগন্ধী তৈরি হয় সেই গাছের দামও যে আকাশ ছোঁয়া হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতি কেজি পরিশোধিত আগর কাঠ ৫৮ হাজার ডলার দরে বিক্রি হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকার সমান (১ ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। এ জন্য আগর গাছের নির্যাসকে তরল সোনা বলে অভিহিত করা হয়।
আগর গাছের আদি আবাসভূমি হলো- দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার রেইন ফরেস্ট। থাইল্যান্ড, মালোয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়া ভারত ও বাংলাদেশে অল্প পরিমাণে আগর গাছ পাওয়া যায়। ছোট পরিসরে হলেও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আগর শিল্প গড়ে উঠছে।