ঢাকার কাছে সাভারে রানা প্লাজা ধস মামলার শুনানিতে বহুল আলোচিত রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে আদালতে হাজির না করায় কারাকর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত তলব করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ জুন) মামলার চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এ দিন মামলার শুনানিতে সোহেল রানাকে আদালতে হাজির করেনি কারাকর্তৃপক্ষ।
মামলার বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য আগামী ৮ জুলাই দিন ধার্য করে ওই তারিখের আগে এর ব্যাখ্যা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।
এ ছাড়াও এদিন মামলার তিন আসামি সরকারি কর্মকর্তা ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, কলকারখানা পরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলাম ও মো. ইউসুফ আলীকে আসামি করতে সরকারি মঞ্জুরি আদেশের অনুমতি দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষে আবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান, এ আদেশের ওপর ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক কোনো আদেশ দেননি। এ বিষয়ে রোববার বিকেল নাগাদ হয়ত আদেশ দিতে পারেন।
গত ১ জুন রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে পৃথক দুটি চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র এএসপি বিজয় কৃষ্ণ কর।
দুই মামলার দুই চার্জশিটে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ মোট ৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির মামলায় ৪১ জন ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জন আসামি হয়েছেন।
মাহবুবুল আলম নামে এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে দণ্ডবিধির মামলায় আসামি করা হয়নি। ফলে দুটি মামলা মিলিয়ে আসামি হয়েছেন মোট ৪২ জন।
দুই মামলায় মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৭২৯ জনকে।
আসামির তালিকায় আরো রয়েছেন ১২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী; সাভার পৌরসভার মেয়র, রানার অনুগত বাহিনীর সদস্য এবং তাকে পালাতে সহায়তাকারীরা।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক ও মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌর মেয়র আলহাজ রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্টাইপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. মধু, অনীল দাস, মো. শাহ আলম ওরফে মিঠু, মো. আবুল হাসান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সাবেক উপপ্রধান পরিদর্শক মো. আব্দুস সামাদ, উপপ্রধান পরিদর্শক মো. জামশেদুর রহমান, উপপ্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক প্রকৌশল মো. ইউসুফ আলী, মো. শহিদুল ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, ইথার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মো. আতাউর রহমান, মো. আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটার, মো. আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মো. আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মো. ইউসুফ আলী, তসলিম ও মাহবুবুল আলম।
আসামিদের মধ্যে মাহবুবুল আলমকে শুধুমাত্র ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধিতে দায়ের করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি।
আসামিদের মধ্যে ২৬ জন পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
মামলা দুটির আসামিদের মধ্যে রানাসহ চারজন ছাড়া সব আসামি জামিন নিয়ে কারাগারের বাইরে রয়েছেন।
প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক, ডেভিট মেয়র রিকো, প্রকৌশলী এমতেমাম হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী আলম মিয়া, আব্দুল মান্নান, রাসেল আহমেদ, আলমগীর হোসেন ও তন্ময় হাউজিং কোম্পানির চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হয়েছে।
অবহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা হলেও পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে কেন চার্জশিট দেওয়া হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বাবুল জানান, ভবনে ফাটল থাকায় যে কোনো সময় তা ধসে মৃত্যু হতে পারে জেনেও ওইদিন শ্রমিকদের বাধ্য করা হয়েছিল ভবনে প্রবেশ করতে। আর তারই ফলশ্রুতিতে ভবন ধসে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। ফলে, যুক্তি সঙ্গতভাবেই হত্যার অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নয়তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১ হাজার ১৩৬ জন মারা যান। ১ হাজার ৫শ ২৪ জন আহত হন।
ইমারত বিধি মেনে রানা প্লাজা নির্মাণ করা হয়নি- এমন অভিযোগে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। রানাসহ ১৩ জন আসামি হন এ মামলায়।