ঢাকা ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাদের সৌরবিদ্যুৎ : বড় সম্ভাবনার হাতছানি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৭
  • ২৭৪ বার

সৌরবিদ্যুৎকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করে মূল সঞ্চালন লাইনের অংশ করার উপায় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এর উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন ইমারতের ছাদে বিচ্ছিন্নভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো। এ দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯৮ শতাংশই এখনো আসে জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) দ্বারা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। এর প্রধান কারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া বিদ্যুতের তুলনায় অনেক সস্তা।

পৃথিবীর অনেক দেশে বাতাস, নদীর পানিপ্রবাহ, সমুদ্রের স্রোত ও ঢেউ, ভূগর্ভের তাপ ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এত উৎস কার্যকরভাবে নেই; এখানে সৌরশক্তিই প্রধান নবায়নযোগ্য উৎস। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় সৌরবিদ্যুৎ অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। ধনী দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আমাদের ভর্তুকি দেওয়ার সামর্থ্য সীমিত, কিন্তু ভর্তুকি চায় এমন খাতের সংখ্যা অনেক। এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ৪-৫ একর খোলা জায়গা দরকার। গ্রিডলাইন আছে এমন স্থানে এ রকম খোলা জায়গা দুর্লভ। সৌরবিদ্যুৎ সূর্যালোকের তীব্রতা ও স্থায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। পৃথিবীর অনেক স্থানের তুলনায় আমাদের দেশে সূর্যালোকের তীব্রতা কম। রাতে বা মেঘলা দিনে সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। ফলে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে এটা যুক্ত করলে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের ওঠানামা ও ভোক্তার চাহিদার মধ্যে দ্রুত সামঞ্জস্যবিধানের যে কারিগরি বাধ্যবাধকতা দেখা দেবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় স্মার্ট গ্রিড আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি।

তাই সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা (সোলার হোম সিস্টেম) প্রসার লাভ করছে গ্রিড সংযোগের বাইরের জনপদগুলোতে। এ দেশে এখন প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ হাজার নতুন সোলার হোম সিস্টেম বসানো হচ্ছে; এর সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। আজকাল কয়েকজন গ্রাহকের জন্য ‘মিনি গ্রিড’ সোলার সিস্টেমও চোখে পড়ছে, ‘সৌর সেচ’ব্যবস্থাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেল সেচ পাম্পকে পর্যায়ক্রমে ‘সৌর পাম্পে’ রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে সেচ মৌসুমে প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিকল্প উৎস মিলবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে যে মোট ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার ১০ শতাংশ উৎপাদন করা হবে সৌরবিদ্যুৎ ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে—এমন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাধাহীন সূর্যালোক পায় এমন ভবনগুলোর ছাদ ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও অনেক কথা চলছে। বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার একটা শর্ত দেওয়া হয়েছে, গ্রাহককে তাঁর বাসার ছাদে সোলার প্যানেল বসাতে হবে। সরকারি হিসাবে দেশে ইতিমধ্যে গ্রাহকদের বাসাবাড়ির ছাদে যেসব সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে, তা থেকে মোট ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু আসলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

দেশের বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ছাদে (রুফটপ) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটা বাণিজ্যিক মডেল দাঁড় করানোর বিষয়ে আলোচনা ও সমীক্ষা চলছে। জামালপুর জেলার কিছু সরকারি ভবনের ছাদ ব্যবহার করে একটা পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকার এই মডেলকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছে, বিদেশি বিনিয়োগের সঙ্গে দেশি উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। শিল্পকারখানার ছাদ ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। বাণিজ্যিক উদ্যোক্তারা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সরকার তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে কিনে নিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার পথও প্রশস্ত করছে।

ভারত ইতিমধ্যে এক গিগাওয়াট (১ হাজার মেগাওয়াট) ক্ষমতার রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ কাঠামো স্থাপন করেছে এবং ২০২২ সালে ৪০ গিগাওয়াট রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি আশা করছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের সাড়ে ১২ শতাংশ আসবে সৌরবিদ্যুৎ থেকে (বর্তমানে ১ শতাংশ)। দুবাই ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ওয়াটার অথোরিটি ও ডিপি ওয়ার্ল্ড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা যৌথ উদ্যোগে দুবাইয়ের প্রতিটি বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনা বসাবে।
পৃথিবীর বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ চীনের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩ শতাংশ আসে সৌরবিদ্যুৎ থেকে এবং এতে রুফটপ সৌরবিদ্যুতের অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ রাজপ্রাসাদ ও মসজিদের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জর্ডান ইতিমধ্যে ১৬০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ পার্ক নির্মাণ করেছে। জার্মানি বাসাবাড়ির ছাদে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে যে বিপুল ভর্তুকি ও ‘ফিড-ইন-ট্যারিফ’ সুবিধা দিয়ে আসছিল, তার অনেকটা সংকুচিত করেছে (আগে ‘ফিড ইন ট্যারিফ’ ইউনিট প্রতি ৫২ ইউরো সেন্ট পর্যন্ত দিত, কিন্তু এখন ১৩ ইউরো সেন্ট/কিলোওয়াট ঘণ্টা (ইউনিট) নির্ধারণ করা হয়েছে)।

সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করুক বা না করুক, জার্মানির সব বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উচ্চ ও দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষিত মূল্য দেওয়া নিশ্চিত করতে (ফিড ইন ট্যারিফ) সরকারের দেওয়া ভর্তুকির বড় বোঝা বইতে হয়। বাজারমূল্যের বিবেচনায় জার্মানির আবাসিক স্থাপনায় ও রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ লাভজনক নয়। ৭৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার চেয়ে বড় সব নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনার পুঁজি জোগানের জন্য ২০১৭ সালের শুরু থেকে জার্মানিতে নিলামের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে নবায়নযোগ্য উৎসের বিদ্যুতের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় যে হারে কমেছে, সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয় সে তুলনায় সামান্যই কমেছে। ফলে আশাব্যঞ্জক অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও নানাবিধ সীমাবদ্ধতায় সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার আগামী কয়েক দশক সীমিতই থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাদের সৌরবিদ্যুৎ : বড় সম্ভাবনার হাতছানি

আপডেট টাইম : ১২:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৭

সৌরবিদ্যুৎকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করে মূল সঞ্চালন লাইনের অংশ করার উপায় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এর উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন ইমারতের ছাদে বিচ্ছিন্নভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো। এ দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯৮ শতাংশই এখনো আসে জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) দ্বারা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। এর প্রধান কারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া বিদ্যুতের তুলনায় অনেক সস্তা।

পৃথিবীর অনেক দেশে বাতাস, নদীর পানিপ্রবাহ, সমুদ্রের স্রোত ও ঢেউ, ভূগর্ভের তাপ ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এত উৎস কার্যকরভাবে নেই; এখানে সৌরশক্তিই প্রধান নবায়নযোগ্য উৎস। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় সৌরবিদ্যুৎ অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। ধনী দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আমাদের ভর্তুকি দেওয়ার সামর্থ্য সীমিত, কিন্তু ভর্তুকি চায় এমন খাতের সংখ্যা অনেক। এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ৪-৫ একর খোলা জায়গা দরকার। গ্রিডলাইন আছে এমন স্থানে এ রকম খোলা জায়গা দুর্লভ। সৌরবিদ্যুৎ সূর্যালোকের তীব্রতা ও স্থায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। পৃথিবীর অনেক স্থানের তুলনায় আমাদের দেশে সূর্যালোকের তীব্রতা কম। রাতে বা মেঘলা দিনে সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। ফলে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে এটা যুক্ত করলে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের ওঠানামা ও ভোক্তার চাহিদার মধ্যে দ্রুত সামঞ্জস্যবিধানের যে কারিগরি বাধ্যবাধকতা দেখা দেবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় স্মার্ট গ্রিড আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি।

তাই সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা (সোলার হোম সিস্টেম) প্রসার লাভ করছে গ্রিড সংযোগের বাইরের জনপদগুলোতে। এ দেশে এখন প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ হাজার নতুন সোলার হোম সিস্টেম বসানো হচ্ছে; এর সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। আজকাল কয়েকজন গ্রাহকের জন্য ‘মিনি গ্রিড’ সোলার সিস্টেমও চোখে পড়ছে, ‘সৌর সেচ’ব্যবস্থাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেল সেচ পাম্পকে পর্যায়ক্রমে ‘সৌর পাম্পে’ রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে সেচ মৌসুমে প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিকল্প উৎস মিলবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে যে মোট ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার ১০ শতাংশ উৎপাদন করা হবে সৌরবিদ্যুৎ ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে—এমন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাধাহীন সূর্যালোক পায় এমন ভবনগুলোর ছাদ ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও অনেক কথা চলছে। বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার একটা শর্ত দেওয়া হয়েছে, গ্রাহককে তাঁর বাসার ছাদে সোলার প্যানেল বসাতে হবে। সরকারি হিসাবে দেশে ইতিমধ্যে গ্রাহকদের বাসাবাড়ির ছাদে যেসব সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে, তা থেকে মোট ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু আসলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

দেশের বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ছাদে (রুফটপ) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটা বাণিজ্যিক মডেল দাঁড় করানোর বিষয়ে আলোচনা ও সমীক্ষা চলছে। জামালপুর জেলার কিছু সরকারি ভবনের ছাদ ব্যবহার করে একটা পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকার এই মডেলকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছে, বিদেশি বিনিয়োগের সঙ্গে দেশি উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। শিল্পকারখানার ছাদ ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। বাণিজ্যিক উদ্যোক্তারা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সরকার তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে কিনে নিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার পথও প্রশস্ত করছে।

ভারত ইতিমধ্যে এক গিগাওয়াট (১ হাজার মেগাওয়াট) ক্ষমতার রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ কাঠামো স্থাপন করেছে এবং ২০২২ সালে ৪০ গিগাওয়াট রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি আশা করছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের সাড়ে ১২ শতাংশ আসবে সৌরবিদ্যুৎ থেকে (বর্তমানে ১ শতাংশ)। দুবাই ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ওয়াটার অথোরিটি ও ডিপি ওয়ার্ল্ড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা যৌথ উদ্যোগে দুবাইয়ের প্রতিটি বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনা বসাবে।
পৃথিবীর বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ চীনের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩ শতাংশ আসে সৌরবিদ্যুৎ থেকে এবং এতে রুফটপ সৌরবিদ্যুতের অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ রাজপ্রাসাদ ও মসজিদের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জর্ডান ইতিমধ্যে ১৬০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ পার্ক নির্মাণ করেছে। জার্মানি বাসাবাড়ির ছাদে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে যে বিপুল ভর্তুকি ও ‘ফিড-ইন-ট্যারিফ’ সুবিধা দিয়ে আসছিল, তার অনেকটা সংকুচিত করেছে (আগে ‘ফিড ইন ট্যারিফ’ ইউনিট প্রতি ৫২ ইউরো সেন্ট পর্যন্ত দিত, কিন্তু এখন ১৩ ইউরো সেন্ট/কিলোওয়াট ঘণ্টা (ইউনিট) নির্ধারণ করা হয়েছে)।

সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করুক বা না করুক, জার্মানির সব বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উচ্চ ও দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষিত মূল্য দেওয়া নিশ্চিত করতে (ফিড ইন ট্যারিফ) সরকারের দেওয়া ভর্তুকির বড় বোঝা বইতে হয়। বাজারমূল্যের বিবেচনায় জার্মানির আবাসিক স্থাপনায় ও রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ লাভজনক নয়। ৭৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার চেয়ে বড় সব নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনার পুঁজি জোগানের জন্য ২০১৭ সালের শুরু থেকে জার্মানিতে নিলামের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে নবায়নযোগ্য উৎসের বিদ্যুতের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় যে হারে কমেছে, সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয় সে তুলনায় সামান্যই কমেছে। ফলে আশাব্যঞ্জক অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও নানাবিধ সীমাবদ্ধতায় সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার আগামী কয়েক দশক সীমিতই থাকবে।