ঢাকা ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বিদেশে রফতানি হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৭
  • ৪০৮ বার

বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এখানে উত্পাদিত অন্যতম দশ প্রজাতির ফুল বিদেশে রফতানি হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের কাঁচা ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁচা ফুল আমেরিকা, বৃটেন, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান, বেলজিয়াম, ইটালি, কেনিয়া, কলম্বিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, পর্তুগাল, কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এসব ফুল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে রফতানি হচ্ছে।

আমাদের দেশ থেকে বিদেশে কাঁচা ফুল রফতানি শুরু হয় ৯০ দশকের দিকে। বিদেশে রফতানি ছাড়াও আমাদের দেশেও কাঁচা ফুলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত কাঁচা ফুলের মধ্যে রয়েছে গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গাদা, লিলিয়াম, থাই অর্কিড, কার্নেশন, শর্বরা, গ্লোবাল, জাতীয় ফুল। কাঁচা ফুল উত্পাদনের জন্য আমাদের দেশের মাটি এবং জলবায়ু খুবই উপযোগী। দেশের বিভিন্ন স্থানে কাচাঁফুল উৎপাদন হয়ে থাকে।

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় বেশিরভাগ ফুল উৎপন্ন হয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচা ফুলের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে আরো আট হাজার একর জায়গা কাঁচা ফুল চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। কাঁচা ফুল উৎপাদন এবং এর সাথে সরাসরি প্রায় দেড় লাখ লোক জড়িত আছে। দেশের কাঁচা ফুলের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ছয় লাখ লোক জড়িত আছে। কাঁচা ফুল চাষে বড় আকারের মূলধনের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু গরীব চাষীরা মূলধনের অভাবে ফুলের চাষ করতে পারছেন না।

দেশে কাঁচা ফুল চাষের ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে তেমন সাহায্য সহযোগিতা পায় না ফুল চাষিরা। ফুল চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা উন্নতজাতের বীজ, চারা, সার, কীটনাশক, সহজে পায় না। কৃষকরা ফুল উৎপাদন করে প্রকৃত মূল্য পায় না। উত্পাদিত কাঁচা ফুল বিপণন, পরিবহনে সমন্বয় না থাকায় কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ফুল সংরক্ষণের হিমাগার এবং পরিবহনের জন্য ফ্রিজারভ্যানের ব্যবস্থা আজো করা হয়নি। দেশে কাঁচা ফুলের ব্যবসা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে ।

রাজধানী ঢাকাতে প্রায় পাঁচ শতাধিক কাঁচা ফুলের দোকান রয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কাঁচা ফুলের দোকান গড়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে কাঁচাফুল রফতানি করে আয় হয় ১৬.২৮ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ মিলিয়ন ডলারের উন্নীত হয়েছে। বিদেশে আমাদের দেশের কাঁচা ফুল দিয়ে নানা ধরনের সুগন্ধী দ্রব্য, হার্বাল প্রসাধনী সামগ্রী এবং ভেষজ ওষুধ তৈরি হচ্ছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের দেশের কাঁচা ফুলের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে চাহিদ অনুযায়ী কাঁচা ফুল রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশে কাঁচা ফুলের বাজার সন্ধান করে সরকারি উদ্যোগে কাঁচা ফুল রফতানির ব্যবস্থা করলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুল ব্যবসায়ী এবং ফুল চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। দেশের কাঁচা ফুল উত্পাদন এবং রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন জায়গা ফুল চাষের আওতায় আনতে হবে।

বেকার তরুণ যুবকদেরকে কাঁচা ফুল চাষের ব্যাপারে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বল্প অথবা বিনাসুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদেরকে স্বল্পমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক প্রদান করতে হবে। কাঁচা ফুল সংরক্ষণ এবং উন্নত প্যাকিং-এর ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কাঁচা ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। ফুল উৎপাদন বাজারজাতকরণ এবং রফতানির ব্যাপারে নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।

বীজ উত্পাদন প্রযুক্তি গবেষণায় ল্যাবটেরি স্থাপন, ফুল চাষি, ফুল ব্যবসায়ী এবং ডিজাইনারদের জন্য পোস্ট হারভেস্ট ম্যানেজমেন্টের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের কাঁচা ফুল একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেওয়া প্রয়োজন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বিদেশে রফতানি হচ্ছে

আপডেট টাইম : ১০:১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৭

বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এখানে উত্পাদিত অন্যতম দশ প্রজাতির ফুল বিদেশে রফতানি হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের কাঁচা ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁচা ফুল আমেরিকা, বৃটেন, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান, বেলজিয়াম, ইটালি, কেনিয়া, কলম্বিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, পর্তুগাল, কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এসব ফুল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে রফতানি হচ্ছে।

আমাদের দেশ থেকে বিদেশে কাঁচা ফুল রফতানি শুরু হয় ৯০ দশকের দিকে। বিদেশে রফতানি ছাড়াও আমাদের দেশেও কাঁচা ফুলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত কাঁচা ফুলের মধ্যে রয়েছে গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গাদা, লিলিয়াম, থাই অর্কিড, কার্নেশন, শর্বরা, গ্লোবাল, জাতীয় ফুল। কাঁচা ফুল উত্পাদনের জন্য আমাদের দেশের মাটি এবং জলবায়ু খুবই উপযোগী। দেশের বিভিন্ন স্থানে কাচাঁফুল উৎপাদন হয়ে থাকে।

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় বেশিরভাগ ফুল উৎপন্ন হয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচা ফুলের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে আরো আট হাজার একর জায়গা কাঁচা ফুল চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। কাঁচা ফুল উৎপাদন এবং এর সাথে সরাসরি প্রায় দেড় লাখ লোক জড়িত আছে। দেশের কাঁচা ফুলের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ছয় লাখ লোক জড়িত আছে। কাঁচা ফুল চাষে বড় আকারের মূলধনের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু গরীব চাষীরা মূলধনের অভাবে ফুলের চাষ করতে পারছেন না।

দেশে কাঁচা ফুল চাষের ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে তেমন সাহায্য সহযোগিতা পায় না ফুল চাষিরা। ফুল চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা উন্নতজাতের বীজ, চারা, সার, কীটনাশক, সহজে পায় না। কৃষকরা ফুল উৎপাদন করে প্রকৃত মূল্য পায় না। উত্পাদিত কাঁচা ফুল বিপণন, পরিবহনে সমন্বয় না থাকায় কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ফুল সংরক্ষণের হিমাগার এবং পরিবহনের জন্য ফ্রিজারভ্যানের ব্যবস্থা আজো করা হয়নি। দেশে কাঁচা ফুলের ব্যবসা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে ।

রাজধানী ঢাকাতে প্রায় পাঁচ শতাধিক কাঁচা ফুলের দোকান রয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কাঁচা ফুলের দোকান গড়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে কাঁচাফুল রফতানি করে আয় হয় ১৬.২৮ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ মিলিয়ন ডলারের উন্নীত হয়েছে। বিদেশে আমাদের দেশের কাঁচা ফুল দিয়ে নানা ধরনের সুগন্ধী দ্রব্য, হার্বাল প্রসাধনী সামগ্রী এবং ভেষজ ওষুধ তৈরি হচ্ছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের দেশের কাঁচা ফুলের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে চাহিদ অনুযায়ী কাঁচা ফুল রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশে কাঁচা ফুলের বাজার সন্ধান করে সরকারি উদ্যোগে কাঁচা ফুল রফতানির ব্যবস্থা করলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুল ব্যবসায়ী এবং ফুল চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। দেশের কাঁচা ফুল উত্পাদন এবং রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন জায়গা ফুল চাষের আওতায় আনতে হবে।

বেকার তরুণ যুবকদেরকে কাঁচা ফুল চাষের ব্যাপারে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বল্প অথবা বিনাসুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদেরকে স্বল্পমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক প্রদান করতে হবে। কাঁচা ফুল সংরক্ষণ এবং উন্নত প্যাকিং-এর ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কাঁচা ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। ফুল উৎপাদন বাজারজাতকরণ এবং রফতানির ব্যাপারে নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।

বীজ উত্পাদন প্রযুক্তি গবেষণায় ল্যাবটেরি স্থাপন, ফুল চাষি, ফুল ব্যবসায়ী এবং ডিজাইনারদের জন্য পোস্ট হারভেস্ট ম্যানেজমেন্টের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের কাঁচা ফুল একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেওয়া প্রয়োজন।