ব্রেইন স্ট্রোকে সংকটাপন্ন কৃষি প্রকৌশলী, বিশিষ্ট কৃষি সাংবাদিক ও লেখক ড. নিয়াজউদ্দিন পাশার (নিয়াজ পাশা) পরিবারকে সুচিকিৎসার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে অসুস্থ কৃষিবিদ নিয়াজউদ্দিন পাশার শ্বাশুড়ি আফরোজা সরকার ও ছোট ভাই নজরুল ইসলাম দেখা করতে গেলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন।
ড. পাশার স্ত্রী ফারজানা আশা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তাঁর চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আমার স্বামীর চিকিৎসার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। নিয়াজ পাশার সুচিকিৎসার বিষয়ে তিনি (রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও সাক্ষাৎ করতে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের জানান।
এদিকে, স্ট্রোক করার চারদিন অতিবাহিত হতে চললেও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছেন বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. নিয়াজ পাশা। তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
গত ২৭ ডিসেম্বর স্ট্রোক করার পর প্রথমে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ধানমন্ডির একটি ক্লিনিকে স্থানান্তর করা হয় তাকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’তে স্থানান্তর করা হয় তাকে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ড. নিয়াজ পাশার অবস্থা ক্রমেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে তিনি কথা বলতে পারছেন না। তাঁর শরীরের বাম পাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নতর চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বহুমাত্রিক.কম-কে জানান, তিনি (নিয়াজউদ্দিন পাশা) একইসাথে বেশ কিছু জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন আগে থেকেই। তাঁর কিডনি ফেইলিয়র, বাইপাস সার্জারি, ডায়াবেটিকস, দু’পায়ে গ্যাংরিন, নিউমোনিয়া রয়েছে। এসবের মাঝেই তাঁর স্ট্রোক হয়েছে।
ঢামেকের আইসিইউ’র সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘উনার ডায়ালাইসিস দরকার হবে। কিন্তু তা আইসিইউ’তে দেওয়ার সুবিধা নেই। কিডনি চিকিৎসা বিভাগে নিয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে আবার আইসিইউ’তে আনাও তার শরীরের জন্য উপযোগী নয়।’
সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়াজউদ্দিন পাশাকে অবিলম্বে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নততর চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।
পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে ড. নিয়াজউদ্দিন পাশার স্ত্রী ফারজানা আশা বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক অসুস্থতার সাথে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসায় আমরা নিঃস্ব প্রায়। এই মুহূর্তে তাকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ পরিবারের নেই।
স্বামীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি আরও বলেন, ‘ড. নিয়াউদ্দিন পাশা সারাজীবন দেশের কৃষি ও অবহেলিত হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। হাওর অঞ্চল তথা রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে আকুল আবেদন জানাই, আপনার স্নেহধন্য নিয়াজকে বাঁচাতে দেশের বাইরে তাঁর উন্নততর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’
এদিকে, নিয়ােউদ্দিন পাশার অসুস্থতার খবরে দেশের বিশিষ্ট কৃষিবিদ-কৃষিবিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার তাঁর শুভানুধ্যায়িরা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। একই সাথে তারা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনার সাথে সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসা সহায়তারও দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষাজীবন থেকেই কৃষি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত নিয়াজউদ্দিন পাশা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি)।
বর্তমানে সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, ঢাকায় কর্মরত বিশিষ্ট এই কৃষিবিদ দেশের কৃষকদের স্বার্থ ও কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে মূলধারার গণমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে লিখে আসছেন।
‘হাওর ভূমিপুত্র’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করা নিয়াজউদ্দিন পাশা অনগ্রসর হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যাায়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে নানা শারীরিক জটিলতার মাঝেও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হাওর ও কৃষি বিষয়ক নানা ইস্যুতে অব্যাহত লেখালেখিতেও নিরলস ছিলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির সহায়তা চান কৃষিবিদ নিয়াজ পাশার স্ত্রী
ব্রেইন স্ট্রোকে সংকটাপন্ন ড. নিয়াজ পাশা, কৃষিবিদদের উদ্বেগ