তিতুমীরে ছাত্রলীগের তাণ্ডব মোটরসাইকেল আটকে শাস্তির মুখে পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষোভ-ভাঙচুর, ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকের ওপর হামলা

রাজধানীর মহাখালীতে গতকাল বুধবার সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার মোটরসাইকেল আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অরাজক কাণ্ড ঘটিয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা গুলশান-মহাখালী সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিলে রমজানে ঘরমুখো মানুষ মহাদুর্ভোগে পড়ে। এ সময় একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ সমর্থকরা। তাদের ভাঙচুরের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক সকালের খবরের সহসম্পাদক আসলাম আকন্দ। হামলাকারীরা আসলামকে বাস থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করেছে। এক ঘণ্টা পর সড়কে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উপরন্তু যিনি মোটরসাইকেলটি আটক করেছেন, পুলিশের সেই এএসআই আব্দুল মান্নান-২-কে পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুরে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন বিপ্লবসহ তিনজন মোটরসাইকেলে করে বারিধারা এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত এএসআই মান্নান তাঁদের থামিয়ে তল্লাশি করেন। তাঁদের কারো মাথায়ই হেলমেট ছিল না। কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথাকাটাকাটি হয়। পুলিশ মোটরসাইকেল আটকানোয় ক্ষুব্ধ বিপ্লব কলেজে খবর দিলে একদল ছাত্রলীগকর্মী ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে তারাও পুলিশের সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়ায়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিও হয়। এরপর বিকেল ৩টার দিকে মহাখালী-গুলশান লিংক রোডে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, গুলশান থানার এসআই আব্দুল মান্নান-২ তাদের সাবেক নেতা বিপ্লবের গায়ে হাত তুলেছেন। তিতুমীর কলেজের সামনে বিক্ষোভের সময় ‘মান্নানের দুই গালে, জুতা মার তালে তালে’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ছাত্রলীগ লড়বে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায় সংগঠনটির কর্মীদের। এ সময় মহাখালী থেকে গুলশানের পথে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। বাড্ডা ও গুলশানের বিভিন্ন গন্তব্যের যানবাহন আটকে পড়ায় হাজারো যাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরে বনানী থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মুস্তাক আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে এএসআই মান্নান-২-কে স্ট্যান্ড রিলিজের ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তল্লাশি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটি হয়েছে। সেখানে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তিতুমীর কলেজের গেটে ছাত্রলীগকর্মীরা একটি প্রাইভেট কার নির্বিচারে ভেঙেছে। এ সময় কয়েকটি বাসেও ইটপাটকেল ছোড়ে তারা। বাসের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে ঘটনার দৃশ্য ধারণ করার সময় ছাত্রলীগকর্মীরা দৈনিক সকালের খবরের সহসম্পাদক আসলাম আকন্দের ওপর হামলা চালায়। আসলাম অভিযোগ করেন, তাঁকে বাস থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে প্রথমে কিলঘুষি মারে, এরপর ইট দিয়ে তাঁর মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হামলাকারীরা। রক্তাক্ত হওয়ার পর তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আসলামের মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় রাতে জিডি করেছেন আসলাম।
বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহাবুব হাসান বলেন, ‘গুলশানের এসআই মান্নান-২ এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। তাঁকে প্রত্যাহার করা হবে জানানোর পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। পরে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর