ধোয়ামোছা আর নামমাত্র সংস্কার দিবস এলেই

বছর জুড়ে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও স্মৃতিসৌধে ধোয়ামোছার কাজ দেখলে বোঝা যায় এসে গেছে ১৪ ডিসেম্বর। প্রতিবছরের মতো এবছরও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সামনে রেখে এখন শেষ মুহূর্তের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর রঙের কাজ চলছে।

সোমবার সরেজমিন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে চোখে পড়লো পরিষ্কার-পরিচ্ছতায় নিয়োজিত কর্মীদের তোড়জোড়। কারণ একদিন পরেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসটি ঘিরে রয়েছে নানা কর্মসূচি।

রংমিস্ত্রী রজব সরদার জানালেন, ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে আমরা এখানে কাজ শুরু করেছি। রাত দিন কাজ করছি। ফিনিশিংয়ের কাজ এখন করছি। কালকের (মঙ্গলবার) মধ্যেই সব কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। আজকে সারারাত তাই কাজ করতে হবে।

ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছেন ২০-৩০ জন নারী-পুরুষ। তাদের একজন মনিরা বেগম জানান, সারাবছর গাছের পাতা পড়ে ময়লার স্তূপ হয়ে থাকে। দু’একমাস পরপর কোনোমতে পরিষ্কার করা হয়। তবে ডিসেম্বর এলেই বেশি কাজ করা হয়।

মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাত্র ৮ জন আনসার সদস্য এর দেখাশোনা করেন। কিন্তু যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে এ বছর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এ বছর ৩৮ লাখ টাকায় সংস্কারের কাজ পেয়েছে মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোং নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব পাটোয়ারী বলেন, তাঁরা ধোঁয়ামোছা, আগাছা পরিষ্কার, রং করা এবং কিছু নতুন টাইলস বসানোর কাজ পেয়েছেন। ধোয়ামোছার কাজ বাদে বাকি কাজগুলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।

ঢাকা উত্তর করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৪) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ জানান, স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা থাকলে বাজেট স্বল্পতায় তা সম্ভব হয়ে ওঠেছে না। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধের মূল ফলকে অতিরিক্ত লাইটা ও অস্থায়ী সিসি ক্যামেরা সংস্থাপন করা হয়েছে।

মূল ফটক থেকে বাঁ দিকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। বাইরের দিকের কবরগুলো নতুন রং করায় বেশ চকচকে; তবে ভেতরের দিককার অনেক কবরের পাশের আগাছা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়নি। কবরস্থানে প্রাচীরের নিচু থামগুলোর কয়েকটির ওপরের অংশ ক্ষয়ে গেছে। মেরামত না করেই তাতে রং করা হয়েছে।

মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত রয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তানেরা। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, শহীদ জননী জানাহারা ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও কবীর চৌধুরী, ভাষাসৈনিক সৈয়দ ফজলুল হকসহ অসংখ্য ভাষাসৈনিক, খেতাবপ্রাপ্ত বীরপ্রতিক ও বীরউত্তম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী শায়িত রয়েছেন এথানে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর