যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর মধ্যে আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের লড়াই শুরু হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতাতে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে বলে সিআইএর প্রতিবেদনের পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পরবর্তী কমান্ডার ইন চিফের এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা জাতীয় দায়িত্ব পালনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কয়েক দশকের মধ্যে একটা বৈরী পরিবেশের মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ায় এ প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে, ট্রাম্প প্রশাসনে সরকারের ১৬ গোয়েন্দা সংস্থা কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ও সাইবার লড়াইয়ে তারা প্রেসিডেন্টের কতটা সহায়তা পাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ক কমিটি সিআইএকে কটাক্ষ করে বলেছে, ‘এরা তো সেসব লোক, যারা বলেছিল সাদ্দাম হোসেনের কাছে মারাত্মক গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে।’
সিআইএর কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের সাবেক উপপরিচালক পল পিলার বলেন, ‘ট্রাম্পের পাতলা চামড়ার সঙ্গে মিশে যাওয়া প্রতিশোধপ্রবণতা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার আস্থার সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলবে।’ গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রমের প্রতি এমন প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মনেও দ্বিধা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সিনিয়র একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি জানি না এই খেলার শেষ কোথায়। আগামী ২০ জানুয়ারির পর আমরা হয়তো এক অচেনা দেশের কর্মী হব।’ পিলারের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের চেয়েও ট্রাম্পের প্রতিহিংসা মানসিকতা খুব খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। নিক্সনের সঙ্গেও গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কে স্থরিবতা ছিল।
রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে বারাক ওবামার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। জেমস আর ক্লাপারের (জুনিয়র) নেতৃত্বে কয়েক ডজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এই প্রজেক্টে কাজ করছেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চান ওবামা। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এরিক শুলজ বলেছেন, ‘আমরা কংগ্রেসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে তুলে ধরতে চাই আসলে আমাদের নির্বাচন কারা পরিচালনা করেছে।’ কিন্তু এমন পদক্ষেপ নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এমনিতেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার মেজাজের ভারসাম্যহীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে অনভিজ্ঞতা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির তথ্য হ্যাকিংয়ে রুশ ভূমিকার শক্ত প্রমাণ থাকার পরও ট্রাম্প বরাবরই তা অস্বীকার করে এসেছেন। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না, তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে।’ এর আগেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বলেছিলেন, তিনি ওবামার চেয়েও ভালো নেতা।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে সিরিয়া ও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ইরানের পরমাণু চুক্তি, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও চীনের নৌশক্তি বৃদ্ধির ওপর নজর রাখছে মার্কিন গোয়েন্দারা। সিআইএ সিরিয়ার মডারেট বিদ্রোহীদের সামরিকায়ন করে কভার্ট অপারেশন পরিচালনা করছে যাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতন ঘটানো যায়। অথচ আসাদকে পুতিনের সমর্থনকে প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত গোয়েন্দা ব্রিফিংও গ্রহণ করছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যাকে নিয়োগ করেছেন সেই জেনারেল মাইকেল ফ্লিন ওবামা প্রশাসনে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান থেকে পদচ্যুত হয়েছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ট্রাম্পের নীতি কেমন হবে- তা নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। বিশেষ করে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়ার যেসব নির্যাতন পদ্ধতি ওবামা প্রশাসন বাতিল করেছিলেন, তা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে।
গোয়েন্দা ব্রিফিং না নেয়ার ব্যাপারে তার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প অত্যন্ত ব্যস্ত সিডিউল পার করছেন, তাই সময় পাচ্ছেন না। কিন্তু বারাক ওবামা জর্জ ডব্লিউ বুশ সব ব্যস্ততার মধ্যেও সপ্তাহে কয়েক দফা গোয়েন্দা ব্রিফিং নিতেন।