ঢাকাতেই রয়ে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ট্রফি। বিপিএলের চার আসরে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো ঢাকার দলটি। বিপিএলের জোয়ার আনতে হলে প্রতিটি বিভাগে একটি করে ট্রফি চাই। সেই চাওয়াটা আর হল কই! প্রটোকল ভেঙে গতবার কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন হলেও এবার ফাইনালের আগে অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল ট্রফিটা যেন রাজশাহীর ঘরে উঠে।
কিন্তু বিপিএলের চতুর্থ আসরের শুরু থেকে দারুণ খেলা রাজশাহী কিংস ফাইনালে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললো। ১৬০ রানের জবাব দিতে নেমে ১০৩ রানে গুটিয়ে গেল ড্যারেন স্যামির দল। ৫৮ রানের জয় নিশ্চিত করে তৃতীয়বারের মতো ট্রফি জিতে নেয় ঢাকা ডায়নামাইটস। যদিও এর আগে দুবার তারা ট্রফি জিতেছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স নামে।
ট্রফির এমন কাছেও গিয়েও হোঁচট খাওয়াটা সত্যিই বেদনায় দায়ক। আবার কবে রাজশাহীর ট্রফির দ্বারপ্রান্তে যেতে পারবে তা হলফ করে বলা মুশকিল। সেই দিক থেকে বললে রাজশাহীর ক্রিকেটপ্রেমীদের বিপিএল জয়ের ট্রফির স্বাদ পাওয়ার অপেক্ষা আরো বেড়ে গেল।
শিরোপা জিততে না পারলেও সাব্বির-মুমিনুলরা ড্যানের স্যামির নেতৃত্বে ফাইনাল পর্যন্ত যে এসেছে, সেটাও কম কিসে! তারুণ্য নির্ভর দলটির প্রধান অস্ত্রই ছিলো টিম হিসেবে খেলা। দলে তারকা বলতে এক সাব্বির আর স্যামি। তাদের দায়িত্বশীলতনা এবং তরুণ নূরুল, মুমিনুল, আফিফ এবং মিরাজ, রেজাদের প্রত্যাশিত পারফরম্যান্সে ভর করে ফাইনালে খেলে রাজশাহী।রাজশাহীকে গুড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা
এদিন শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টসে হেরে ঢাকার হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন মেহেদি মারুফ এবং এভিন লুইস। চতুর্থ ওভারে নিজের দ্বিতীয় বলেই মেহেদি মারুফকে বিদায় করেন মিরাজ। ১০ বলে একটি চারের সাহায্যে ৮ রান করেন ঢাকার ওপেনার মেহেদি মারুফ।
ফাইনালের মঞ্চে তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি নাসির হোসেন। মাত্র ৫ রান করে বিদায় নেন তিনি। দলীয় ৩৫ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় ঢাকা। ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন স্যামি। এসেই প্রথম বলে বিদায় করেন মোসাদ্দেক হোসেনকে। এলবির ফাঁদে পড়ার আগে মোসাদ্দেক করেন ৫ রান। দলীয় ৪২ রানের মাথায় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় ঢাকা।
এরপর জুটি গড়েন এভিন লুইস এবং কুমার সাঙ্গাকারা। এই জুটি থেকে আসে ২৫ বলে ৪১ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে ফরহাদ রেজার বলে উইলিয়ামসের তালুবন্দি হন এভিন লুইস। সাজঘরে ফেরার আগে ক্যাবিবিয় এই ওপেনার ৩১ বলে করেন ৪৫ রান। তার ইনিংসে ছিল আটটি চারের মার। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় ঢাকা।রাজশাহীকে গুড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা
ইনিংসের ১৩তম ওভারে বিদায় নেন ডোয়াইন ব্রাভো। তিনি ১০ বলে করেন ১৩ রান। দলীয় ১০১ রানে পাঁচ উইকেট হারায় ঢাকা। ইনিংসের ১৬তম ওভারে বিদায় নেন এই আন্দ্রে রাসেল। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় ঢাকা।
দলীয় ১৩০ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব। ঢাকার দলপতি ৭ বলে দুই চারে ১২ রান করে ফরহাদ রেজার বলে বোল্ড হন। ইনিংসের ১৮তম ওভারে সপ্তম উইকেট হারায় ঢাকা। দলীয় ১৩৩ রানে বিদায় নেন আলাউদ্দীন বাবু। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে ঢাকা।
জবাবে রাজশাহীর হয়ে ব্যাটিংয়ে ওপেন করতে নামেন মুমিনুল হক ও নুরুল হাসান সোহান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন নুরুল হাসান সোহান। আবু জায়েদের বলে আন্দ্রে রাসেলের তালুবন্দি হওয়ার আগে সোহান করেন মাত্র ৫ রান। দলীয় ১৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় রাজশাহী।রাজশাহীকে গুড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা
এরপর জুটি গড়েন সাব্বির রহমান এবং মুমিনুল হক। সেট হয়েও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি সাব্বির। ইনিংসের দশম ওভারে সাজঘরে ফেরেন রানআউট হয়ে। ব্যক্তিগত ২৬ রানে বিদায় নেন তিনি। ২২ বলে সাব্বির দুটি চার হাঁকান। সাব্বির-মুমিনুল মিলে স্কোরবোর্ডে আরও ৪৭ রান যোগ করেন। ইনিংসের ১১তম ওভারে সাকিব ফেরান মুমিনুলকে। রাজশাহীর এই ওপেনার ৩০ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৭ রান করে এলবির ফাঁদে পড়েন। দলীয় ৬৬ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় রাজশাহী।
চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন জেমস ফ্রাঙ্কলিন। ইনিংসের ১৩তম ওভারে সাঞ্জামুলের বলে ব্রাভোর তালুবন্দি হন তিনি। বাউন্ডারি সীমানায় ধরা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৫ রান। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় কিংসরা। সামিত প্যাটেল এবং ড্যারেন স্যামি দলকে বেশি দূর টানতে পারেননি। ইনিংসের ১৪তম ওভারে সাকিব বোল্ড করেন স্যামিকে (৬)। আর এই উইকেটের মধ্যদিয়ে কেভিন কুপারকে হটিয়ে সাকিব বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটের (৬১) মালিক হন। পরের ওভারে সাঞ্জামুল ফিরিয়ে দেন সামিত প্যাটেলকে। ব্যক্তিগত ১৭ রানে আন্দ্রে রাসেলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার আগে ১২ বলে একটি বাউন্ডারির দেখা পান প্যাটেল। দলীয় ৯১ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় রাজশাহী।
দলীয় ৯৩ রানের মাথায় বিদায় নেন মেহেদী মিরাজ। ১৭তম ওভারে ব্রাভো বোল্ড করেন ফরহাদ রেজাকে (২)। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় অষ্টম উইকেট হারায় রাজশাহী। একই ওভারে ব্রাভোর থ্রোতে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামস (৪)। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে আন্দ্রে রাসেল ফেরান নাজমুল ইসলামকে। আফিফ ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানে থামে ঢাকা। আর এর মধ্যদিয়ে তৃতীয় শিরোপা নিজেদের ঘরেই রাখে ঢাকা।