এই নগরে জমি খুব দামি। বাগান করা এক বিলাস। সবার সাধ্যে কুলায় না। কিন্তু গাছ আর ফুল যাদের ভালোবাসা তারা তো উপায় খুঁজে নেবেনই। তাই বাগানের বদলে ফুল গাছের জায়গা হয়েছে টবে।
বাড়ির ছাদ, বারান্দার ফাঁকা জায়গায় স্থান পেয়েছে এসব ছোট বা বড় টব। বাড়ির সামনে সামান্য একটু মাটি পেলে তো কথাই নেই।
ঘর সামলান মধ্যবয়সী নারী মাহফুজা শেফালী। দুই সন্তানকে বড় করেছেন। ফুলের গাছ তার ভীষণ প্রিয়। দুই সন্তান মাঝেমধ্যে রসিকতা করে বলেন, তাদের চেয়ে গাছের আদরই বেশি বাসায়।
বড় সন্তান সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে মাহফুজা শেফালী তার শখ পূরণের একটু বাড়তি সুযোগ পেয়েছেন। বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক কোয়ার্টারে একটু বাড়তি জায়গার পুরোটাই তিনি ভরে ফেলেছেন নানা ফুল গাছে।
সারা বছরই ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকে শেফালীর ঘর। তাতে তিনি মোহিত হন, আহ্লাদিত হন, বাসায় ঘুরতে আসা মানুষরা হয় মুগ্ধ, বিমোহিত।
শেফালীর মতো বাগানপ্রিয় মানুষদের গাছ সরবরাহ করে সড়কের ধারে ফুটপাতের নার্সারিগুলো। এমনিতে ফুটপাত দখল করে অন্য কোনো স্থাপনা হলে বিরক্ত হয় পথচারীরা। কিন্তু নার্সারি করলে একটু পক্ষপাত মানুষের থাকেই। তাই এগুলো উচ্ছেদও হয় না সচরাচর।
হাঁটতে হাঁটতে ফুলের গাছ দেখলে বা সুঘ্রাণ পেলে খারাপ লাগার কারণ নেই। বরং মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে যায়।
রাজধানীর পুরাতন এালিফ্যান্ট রোড, কলাবাগান, ধানমন্ডি, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব নার্সারি চোখে পড়ে।
কথা হয় পুরাতন এালিফেন্ট রোড এলাকার ফুল ব্যবসায়ী সুন্নত আলীর সঙ্গে। তিনি তাঁর বলেন, ‘পাঁচ বছর ধইরা আমি এখানে ফুলের ব্যবসা করতাসি। আমার এহানে প্রায় সব ধরনের ফুলের গাছ পাওয়ন যায়। গোলাপ, গাঁদা, সূর্যমুখী, নয়নতাঁরা, কাঠ গোলাপসহ প্রায় ১৫ ধরনের গাছ আছে আমার এইখানে। যে গাছের চাহিদা বেশি সে গাছগুলো রাখি আমার কাছে।’
ফুলের বাগান করতে আলাদা ভাবে কী প্রয়োজন জানতে চাইলে সুন্নত আলি বলেন, ‘একলগে দুই ফুল এক গাছের মধ্যে পাইতে চাইলে গাছের কলম করা লাগে। আর গাছের জন্য প্রয়োজন সার। আমার কাছে সব পদের সার রয়েছে।’
দাম কেমন-জানতে চাইলে সুন্নত বলেন, ‘কোনটা কম আর কোনটা বেশি। মাঝারি আকারের গোলাপ টবসহ ১৫০, গাঁদা ৯০, কাঠগোলাপ ৩০০, বাগান বিলাস ৪৫০ টাকা। ছোট গাছের মধ্যে নয়নতারা ৬০, রঞ্জন ৮০, নীলকণ্ঠ ৫০ টাকা।’
বাসায় জায়গার সংকুলান না থাকায় অনেকেই বাসার বারান্দায় ফুলের চাষ করে। জায়গা কম থাকায় অনেক গাছের স্থান না হলেও ছোট গাছ গুলো অনায়াসে রাখা যায়। দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্চা। সময়মত পানি ও সারের ব্যবহার করতে হয়।
কবি নজরুল ফুলকে বলেছিলেন প্রকৃতির হাসি জ্ঞান। বলেছিলেন, ‘যেন দেবকুমার শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি/ আরতির মৃদুজ্যোতি প্রদীপ কলি দোলে, যেন দেউল আঙিনাতে…।’
কবিগুরু লিখেন, ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিংবা মৃদু বায়/তটিণী-র হিল্লোর তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়/পিক কিংবা কুঞ্জে কুঞ্জে’।
সত্যিই তাই ফুল, তা ফুটপাতেই হোক, বাড়ির বাইরের আঙ্গিনাতেই হোক, আর ঘরের ভেতরেই হোক। সব জায়গাতেই বাড়ায় শোভা, ছড়ায় মুগ্ধতা।