সুদীপ বিশ্বাস: ছোটবেলা থেকেই পদ্মফুল খুব ভালোবাসি. পুজোর সময় যখন পদ্মফুল আনা হতো তখন সেখান থেকে পদ্মফুল নিয়ে চম্পট দিতাম.শুনেছিলাম পদ্মবিলে নাকি হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটে থাকে। পদ্মপরাগের মোহনীয় ঘ্রানে সর্পদল নাকি সবসময় পদ্মবিলে থাকে। তাই আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল কোন এক পদ্মবিলে হারিয়ে যাবো আর দু হাত ভরে পদ্ম তুলব।
হঠাৎ একদিন আমার ইচ্ছে সত্যি সত্যি পূরন হলো.ফেসবুকে দেখলাম আমাদের গোপালগঞ্জেই অসাধারণ একটি পদ্মবিল আছে.গোপালগঞ্জ থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে বলাকইর নামের একটি গ্রামে গেলেই এই অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
পদ্মবিলের সন্ধান পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারিনা.যে কোন প্রকারেই হোক পদ্মবিলে আমাকে যেতেই হবে. বন্ধুদের রাজি করিয়ে ঈদের ছুটিতে পাড়ি দিলাম অজানা পদ্মবিলের
পানে।
আমার খুশির বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল. লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে করে আমার হাজির হলাম বলাকইর গ্রামে. গ্রামটা একটি অজপাড়া গা.বন্ধুরা আমাকে দোষারোপ করতে লাগলো এ আমাদের কোথায় নিয়ে এলি? এখানে পদ্মবিল কোথায়?
ইট বিছানো এবড়ো থেবড়ো রাস্তা দিয়ে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম. ১০ মিনিট পরে আমার স্বপ্ন সার্থক হলো. দেখতে পেলাম চির কাঙ্ক্ষিত পদ্মবিল তা সৌন্দর্যের পসরা মেলে আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে. আমি মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার পদ্মফুল দেখতে লাগলাম।
কিন্তু অনেকক্ষন খোঁজার পরও কোথাও নৌকা পেলাম না. এদিকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার ও সময় হয়ে যাচ্ছিল. বন্ধুরা আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলছিলো. কিন্তু আমি ও নাছোড়বান্দা. পদ্মবিলে নৌকা নিয়ে পদ্ম তুলবোই। অনেক খোঁজার পর ১০ টাকা দিয়ে একটা নৌকা ভাড়া করে পদ্মবিলে ঘুরতে লাগলাম।
ফুটন্ত পদ্মফুলগুলোর ওপর দিয়ে ভ্রমর খেলা করে যাচ্ছিল.আর সাপেরা ছিল পদ্মপাতায়. হাজার হাজার পদ্মফুলের মোহনীয় ঘ্রান আর সৌন্দর্য আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিলো। এই দিন প্রথম দু হাত ভরে পদ্মতুললাম. ভাবসম্প্রসারণে পড়েছিলাম কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে? দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কে মহীতে?
তাই পদ্মফুল তুলতে কাঁটার আঘাত সহ্য করতে হয়েছিলো একটু কিন্তু পদ্মফুল তোলার আনন্দের কাছে ও ব্যথা ফিকে হয়ে গিয়েছিলো.
বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না. মনে হচ্ছিল পদ্মফুলের বিছানায় শুয়ে থাকি। কিন্তু বাড়ি তো ফিরতেই হবে। পদ্মবিলে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো আমার, তাই তো বার বার বার যেতে ইচ্ছে করে বলাকইরের পদ্মবিলে।