ঢাকা ১১:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোদীকে খতমের হুঁশিয়ারি পাক নেতার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৩০৭ বার

সিন্ধু নদের জলবণ্টন ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিরোধিতা করে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের এক ইসলামিক নেতা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামি নেতা সিরাজুল হক। শনিবার তিনি করাচিতে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানকে বার্তা দিয়েছেন যে তিনি আমাদের নদীগুলি বন্ধ করে দেবেন। আমি আজ করাচিতে, মহান নেতা মহম্মদ আলি জিন্নার সমাধির কাছে দাঁড়িয়ে মোদীকে জানাতে চাই যে, ওঁর হাতে এমন কোনও রেখা নেই যার জোরে তিনি যা এমন সব কথা বলতে পারেন। মিস্টার মোদী, যদি আমাদের জল বন্ধ করেন, তবে আমরা আপনার দমবন্ধ করে দেব।’

এই বিস্ফোরক ভাষণটি উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার পঞ্জাবের একটি সভায় বলেন, যে বিপাশা, শতদ্রু ও রবি— এই তিনটি নদীর উপরে ভারতের অধিকার থাকলেও এই নদীগুলির জল ভারতের কৃষকের কোনও কাজে লাগে না। সব জল

চলে যায় পাকিস্তানে এবং শেষমেশ সমুদ্রে। তিনি অভিযোগ করেন যে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে একাধিক সরকার ক্ষমতায় এলেও এই সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। আর এভাবে চলতে পারে না।

গত সপ্তাহে পঞ্জাবে একটি জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জল পাকিস্তানও ব্যবহার করছে না আবার ভারতীয় কৃষকদের কাছেও পৌঁছয় না। আমি একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করছি। আমি কথা দিচ্ছি, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ভারতের প্রাপ্য জলের এক এক বিন্দু ফিরিয়ে দেওয়া হবে পঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর এবং দেশের অন্যান্য প্রান্তের মানুষের কাছে…।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে নদীর জল পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথা একবারও বলেননি। তবু নদীর জল ব্লক করার কথা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন জামাত নেতা। সিন্ধু উপত্যকার জলবণ্টন নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৬০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে। এই চুক্তির পিছনে মুখ্য ভূমিকা ছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক সংস্থার। এই চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু উপত্যকার পূর্বদিকের নদনদীগুলি ( বিপাশা, রবি, শতদ্রু) নিয়ন্ত্রক ভারত ও পশ্চিমদিকের নদনদীগুলির (সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলম) নিয়ন্ত্রক পাকিস্তান। যেহেতু সিন্ধু উপত্যকার নদীগুলির উৎসস্থল ভারত, তাই নদীগুলির জল কীভাবে বণ্টিত হবে দু’দেশের মধ্যে সেই নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক ছিল।

পাকিস্তানের আশঙ্কা ছিল যে এই নদীগুলির জল থেকে ভারত তাদের বঞ্চিত করতে পারে এবং যুদ্ধের সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খরা তৈরি করতে পারে। মূলত এই আশঙ্কা থেকেই এই চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। জলবণ্টন নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এই চুক্তি কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশের অন্যতম সফল জলবণ্টন চুক্তি। এখনও পর্যন্ত এই চুক্তি সংক্রান্ত যে সমস্যাই হয়েছে, তা কাগজে-কলমেই মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে কোনও বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেননি। তিনি শুধুমাত্র পর্যালোচনা করে দেখতে চাইছেন কীভাবে ভারত তার নদীর জল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। তাই এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে জামাত নেতার হুঁশিয়ারি অত্যন্ত আপত্তিজনক।-এবেলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মোদীকে খতমের হুঁশিয়ারি পাক নেতার

আপডেট টাইম : ১০:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

সিন্ধু নদের জলবণ্টন ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিরোধিতা করে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের এক ইসলামিক নেতা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামি নেতা সিরাজুল হক। শনিবার তিনি করাচিতে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানকে বার্তা দিয়েছেন যে তিনি আমাদের নদীগুলি বন্ধ করে দেবেন। আমি আজ করাচিতে, মহান নেতা মহম্মদ আলি জিন্নার সমাধির কাছে দাঁড়িয়ে মোদীকে জানাতে চাই যে, ওঁর হাতে এমন কোনও রেখা নেই যার জোরে তিনি যা এমন সব কথা বলতে পারেন। মিস্টার মোদী, যদি আমাদের জল বন্ধ করেন, তবে আমরা আপনার দমবন্ধ করে দেব।’

এই বিস্ফোরক ভাষণটি উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার পঞ্জাবের একটি সভায় বলেন, যে বিপাশা, শতদ্রু ও রবি— এই তিনটি নদীর উপরে ভারতের অধিকার থাকলেও এই নদীগুলির জল ভারতের কৃষকের কোনও কাজে লাগে না। সব জল

চলে যায় পাকিস্তানে এবং শেষমেশ সমুদ্রে। তিনি অভিযোগ করেন যে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে একাধিক সরকার ক্ষমতায় এলেও এই সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। আর এভাবে চলতে পারে না।

গত সপ্তাহে পঞ্জাবে একটি জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জল পাকিস্তানও ব্যবহার করছে না আবার ভারতীয় কৃষকদের কাছেও পৌঁছয় না। আমি একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করছি। আমি কথা দিচ্ছি, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ভারতের প্রাপ্য জলের এক এক বিন্দু ফিরিয়ে দেওয়া হবে পঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর এবং দেশের অন্যান্য প্রান্তের মানুষের কাছে…।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে নদীর জল পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথা একবারও বলেননি। তবু নদীর জল ব্লক করার কথা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন জামাত নেতা। সিন্ধু উপত্যকার জলবণ্টন নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৬০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে। এই চুক্তির পিছনে মুখ্য ভূমিকা ছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক সংস্থার। এই চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু উপত্যকার পূর্বদিকের নদনদীগুলি ( বিপাশা, রবি, শতদ্রু) নিয়ন্ত্রক ভারত ও পশ্চিমদিকের নদনদীগুলির (সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলম) নিয়ন্ত্রক পাকিস্তান। যেহেতু সিন্ধু উপত্যকার নদীগুলির উৎসস্থল ভারত, তাই নদীগুলির জল কীভাবে বণ্টিত হবে দু’দেশের মধ্যে সেই নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক ছিল।

পাকিস্তানের আশঙ্কা ছিল যে এই নদীগুলির জল থেকে ভারত তাদের বঞ্চিত করতে পারে এবং যুদ্ধের সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খরা তৈরি করতে পারে। মূলত এই আশঙ্কা থেকেই এই চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। জলবণ্টন নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এই চুক্তি কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশের অন্যতম সফল জলবণ্টন চুক্তি। এখনও পর্যন্ত এই চুক্তি সংক্রান্ত যে সমস্যাই হয়েছে, তা কাগজে-কলমেই মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে কোনও বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেননি। তিনি শুধুমাত্র পর্যালোচনা করে দেখতে চাইছেন কীভাবে ভারত তার নদীর জল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। তাই এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে জামাত নেতার হুঁশিয়ারি অত্যন্ত আপত্তিজনক।-এবেলা