ঢাকা ০১:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই এমপির ভাগ্য ঝুলছে আদালতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ২৭২ বার

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রভাবশালী দুই এমপির ভাগ্য ঝুলছে আদালতে। তাদের একজন দণ্ড পেয়েছেন দুর্নীতি মামলায়। কক্সবাজারের টেকনাফ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদিকে তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করেছেন তিনি। এখানে তিনি হেরে গেলে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অযোগ্য হয়ে যাবেন। বেকায়দায় আছেন ফেনীর প্রভাবশালী এমপি নিজাম হাজারীও। সাজা কম খেটে সর্বশেষ নির্বাচনে এমপি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ সত্য হলে পদ হারাবেন ফেনী-২ আসনের এ এমপি। আজ সোমবার এ সংক্রান্ত রিটের রায় দেবেন হাইকোর্ট। নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এর আগে রিট আবেদন হয়েছিল হাইকোর্টে।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্রও দেয় তারা। এতে বদির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। পাশাপাশি ঘোষিত আয়ের বাইরে এমপি বদি অতিরিক্ত সম্পদেরও মালিক হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ থেকে আদালত বদিকে খালাস দিলেও তথ্য গোপনের অভিযোগ এড়াতে পারেননি তিনি। গত ২ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আবু আহমদ জমাদার তার রায়ে আওয়ামী লীগ এমপি বদিকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে আরও তিন মাস কারাভোগ করতে হবে বলে নির্দেশ দেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করেছেন এমপি বদি। এ আপিলে আগের রায় বহাল থাকলে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ হারাবেন তিনি। রায় তার পক্ষে গেলে নির্বাচন করতে কোনো বাধা থাকবে না।

এদিকে ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর এমপি পদে থাকা, না থাকার বিষয়টিও নির্ধারিত হতে যাচ্ছে আদালতে। কয়েক দফা পেছানোর পর আজ উচ্চ আদালত রায় ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক করেছেন। নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া রিট আবেদনটি করেন। এ রিটে নিজাম হাজারী সাজা কম খেটেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না। ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে এমপি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে। এ রিট আবেদনের পর ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে এমপি পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না_ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

শুনানিকালে ৩০ মার্চ হাইকোর্ট নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলার রায় ও নথিপত্র ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলেন। এরপর ২৬ মে অপর এক আদেশে হাইকোর্ট অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি-প্রিজন্স) নির্দেশ দেন। ১৯ জুলাই আইজি প্রিজনের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে নিজাম হাজারী সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনও সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন। শুনানি শেষে রায় দিতে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয় আজ সোমবার। এ রায় নিজাম হাজারীর বিপক্ষে গেলে এমপি পদে থাকার বৈধতা হারাবেন তিনিও।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, ‘মানুষের ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক আদালতের কাছে তার কোনো মূল্য নেই। যুক্তিতর্কই সেখানে প্রধান উপজীব্য। প্রভাবশালী দুই এমপির বিরুদ্ধে এর আগে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা অত্যন্ত গুরুতর। একজন এমপি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। আরেকজন আইনকে ফাঁকি দিয়ে সাজা কম খেটে এমপি হয়েছেন।’ আদালত থেকে সঠিক বিচারই পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। দৈনিক সমকাল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুই এমপির ভাগ্য ঝুলছে আদালতে

আপডেট টাইম : ১২:০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রভাবশালী দুই এমপির ভাগ্য ঝুলছে আদালতে। তাদের একজন দণ্ড পেয়েছেন দুর্নীতি মামলায়। কক্সবাজারের টেকনাফ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদিকে তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করেছেন তিনি। এখানে তিনি হেরে গেলে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অযোগ্য হয়ে যাবেন। বেকায়দায় আছেন ফেনীর প্রভাবশালী এমপি নিজাম হাজারীও। সাজা কম খেটে সর্বশেষ নির্বাচনে এমপি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ সত্য হলে পদ হারাবেন ফেনী-২ আসনের এ এমপি। আজ সোমবার এ সংক্রান্ত রিটের রায় দেবেন হাইকোর্ট। নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এর আগে রিট আবেদন হয়েছিল হাইকোর্টে।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্রও দেয় তারা। এতে বদির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। পাশাপাশি ঘোষিত আয়ের বাইরে এমপি বদি অতিরিক্ত সম্পদেরও মালিক হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ থেকে আদালত বদিকে খালাস দিলেও তথ্য গোপনের অভিযোগ এড়াতে পারেননি তিনি। গত ২ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আবু আহমদ জমাদার তার রায়ে আওয়ামী লীগ এমপি বদিকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে আরও তিন মাস কারাভোগ করতে হবে বলে নির্দেশ দেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করেছেন এমপি বদি। এ আপিলে আগের রায় বহাল থাকলে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ হারাবেন তিনি। রায় তার পক্ষে গেলে নির্বাচন করতে কোনো বাধা থাকবে না।

এদিকে ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর এমপি পদে থাকা, না থাকার বিষয়টিও নির্ধারিত হতে যাচ্ছে আদালতে। কয়েক দফা পেছানোর পর আজ উচ্চ আদালত রায় ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক করেছেন। নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া রিট আবেদনটি করেন। এ রিটে নিজাম হাজারী সাজা কম খেটেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না। ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে এমপি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে। এ রিট আবেদনের পর ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে এমপি পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না_ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

শুনানিকালে ৩০ মার্চ হাইকোর্ট নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলার রায় ও নথিপত্র ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলেন। এরপর ২৬ মে অপর এক আদেশে হাইকোর্ট অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি-প্রিজন্স) নির্দেশ দেন। ১৯ জুলাই আইজি প্রিজনের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে নিজাম হাজারী সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনও সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন। শুনানি শেষে রায় দিতে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয় আজ সোমবার। এ রায় নিজাম হাজারীর বিপক্ষে গেলে এমপি পদে থাকার বৈধতা হারাবেন তিনিও।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, ‘মানুষের ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক আদালতের কাছে তার কোনো মূল্য নেই। যুক্তিতর্কই সেখানে প্রধান উপজীব্য। প্রভাবশালী দুই এমপির বিরুদ্ধে এর আগে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা অত্যন্ত গুরুতর। একজন এমপি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। আরেকজন আইনকে ফাঁকি দিয়ে সাজা কম খেটে এমপি হয়েছেন।’ আদালত থেকে সঠিক বিচারই পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। দৈনিক সমকাল