চার দেশীয় সড়ক যোগাযোগে হোঁচট খেল বাংলাদেশ অস্বস্তি প্রকাশ করে চুক্তি অনুমোদন করেনি ভুটান সংসদ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও চালু করা যাচ্ছে না চার দেশীয় আন্তঃসড়ক যোগাযোগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটা করে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভুটানের আপত্তির কারণে যাত্রীপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা সীমান্তে বিবিআইএনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ড. বিজয় কুমার সিংহ।

প্রসঙ্গত, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে এখন শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য পরিবহন হয়। বিবিআইএন সড়ক পথ চালু করা গেলে ওই বন্দর দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়িও চলাচল করতে পারতো চার দেশে। বাংলাবান্ধা হতো চার দেশের মধ্যে চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ও স্থলবন্দর।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ২০ নভেম্বর ভুটান সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের আপত্তির মুখে চুক্তির রেটিফিকেশন প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। বাংলাদেশ কিংবা নেপাল তাদের জন্য ঝুঁকি না হলেও ভারতকে তারা ঝুঁকি হিসাবে দেখছে। তারা মনে করছে এ ধরনের আঞ্চলিক সীমান্তে কিছু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বাস রয়েছে। এই সড়ক বাস্তবায়ন হলে তাদের সেই আবাসস্থল বিপন্ন হতে পারে। ভুটান মনে করে এ ধরনের আঞ্চলিক সড়কের ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হলেও পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে যাবে। ভুটানে গত দেড় দশকে অভ্যন্তরীণ যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৩৩ শতাংশ। দেশটিতে ভারতীয় যানবাহন চলাচল শুরু হলে এই চাপ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমান সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় ভুটানে বাড়তি যানবাহনের চাপ নেওয়া সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র অবশ্য জানায়, আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে একটা ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী।

১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধা বন্দর ও ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উদ্বোধন করেছিলেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গত বছরের ১৬-১৭ নভেম্বর ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাবান্ধা দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার, নেপালের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। নেপাল ও দার্জিলিংয়ে প্রচুর বিদেশি পর্যটক সারা বছর বেড়াতে আসেন। বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলে তারা বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কুয়াকাটা এবং অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসে জানান, ভুটানকে নিয়েই বিবিআইএন বাস্তবায়নে আগ্রহী বাংলাদেশ। যদিও তারা এখনো সেদেশের সংসদে এ বিষয়ে রেটিফিকেশন করেনি। বাংলাদেশ আশা করছে ভুটান শেষ পর্যন্ত এটি করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অংশের অবকাঠামো উন্নয়নের কিছু কাজ শুরু বা শেষ করা যায়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারতীয় আর্থিক সহায়তার চুক্তি করেন। কিন্তু চুক্তির টাকা পাওয়া যায়নি। ফলে ওই সেতুর নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছে না। এছাড়াও আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের ৫০ কিলোমিটার ভারতীয় অর্থায়নে হওয়ার কথা। কিন্তু সেটিও অর্থের অভাবে শুরু করা যায়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ বিষয়ে সচেষ্ট আছেন। চারদেশীয় সড়ক চলাচলেই আগ্রহী বেশি বাংলাদেশ।

তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, শেষপর্যন্ত যদি ভুটানকে রাজি করানো না যায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালকে কেন্দ্র করে এক আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার বিকল্প চিন্তাও রয়েছে সরকারের।

সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব আব্দুল মালেক জানান, বিষয়টি এখনো সরকারিভাবে তাদের কাছে আসেনি। তবে ঘটনা সত্য। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি হাতে পাওয়ার পর সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক চ্যানেলে আলাপ-আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর