ভ্রমণ গোলাপের গ্রামে…

ছোট ছোট দ্বীপ সবুজে ঢাকা। চারপাশে নীলাভ জলের ঢেউ। পানকৌড়ির ডুব সাঁতার, বকের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা। ছোট ছোট নৌকায় মাছ ধরার দৃশ্য আপনাকে নিয়ে যাবে নৈসর্গিক এক ভুবনে। নদীর চারপাশে সবুজে ঢাকা গ্রামগুলো দেখতে মনে হবে ছবির মতো। যেতে পারেন নদীর ওপারে গ্রামে। বড় বটবৃক্ষের নিচে ছোট ছোট দোকান, নদীর মাছ বিক্রি করা, মিষ্টির দোকান, গ্রাম্য খাবারের হোটেল, পাশেই শাক-সবজির মাচা। তার পাশেই বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। কিভাবে গোলাপের চাষ করা হয় তা নিজ চোখে দেখতে পাবেন। গোলাপের চারা তৈরি, গোলাপ খেত পরিচর্যা, গোলাপ তোলা দেখতে দেখতে আপনার মন হারিয়ে যাবে ফুলের রাজ্যে।

সাদুল্যাপুর। চোখ জুড়ানো এক গ্রাম। গ্রামটিতে যেতে হলে আপনাকে ট্রলার ভ্রমণ করতে হবে। মিরপুর মাজার রোড থেকে বাসযোগে বটতলা মোড়ে নামতে হবে। গাড়ি থেকে নেমেই হাতের বাঁয়ে গুদারা ঘাট। সেখান থেকে ট্রলারে যাত্রা শুরু। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর ট্রলার যাত্রা করে। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। গন্তব্যে পৌঁছতে ১ ঘণ্টা সময় লাগবে। ট্রলারে যেতে যেতে আপনি দেখবেন জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, ছোট ছোট সবুজে ঢাকা দ্বীপসদৃশ। পাশ দিয়ে মাঝেমধ্যে যেতে দেখা যাবে মালবাহী বড় বড় ট্রলার। যাত্রী নেওয়ার জন্য ট্রলার কয়েকটি ঘাটে থামে। সেখানে চোখে পড়বে ছোটবেলার দৃশ্য। নদীতে মানুষের গোসল করা, বালু নিয়ে বাচ্চাদের খেলা করা, নদীতে হই-হুল্লোড় করা, ফিরে যাবেন আপনি সেই দুরন্ত শৈশব কৈশোরে।

যাত্রা শুরুর আগে আপনি কিছু শুকনা খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে নিতে পারেন। সঙ্গে ক্যামেরা নিতে মোটেও ভুলবেন না। মাঝেমধ্যে দেখতে পাবেন নদীর বুকে একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দু-একটি গাছ। দেখা যাবে নদীর খনন কাজের জন্য ড্রেজিং পাইপ, খনন মেশিং আর রাশি রাশি বালুর স্তূপ। এসব দেখতে দেখতে কখন যে আপনি সাদুল্যাপুর ঘাটে পৌঁছে যাবেন তা টেরই পাবেন না।

ঘাটে নেমেই দেখতে পাবেন সবুজে আচ্ছাদিত নদীর পার, হাঁসের সারি, বড় বড় বটগাছ, মন্দির প্রভৃতি। সরুপথ ধরে সামনে এগুতে থাকলে দেখবেন দু পাশে ছোট ছোট দোকান। মনে হবে কোনো এক নিভৃত পল্লিতে এসেছেন। আসলেই এক নিভৃত পল্লি। স্থানীয় কারো কাছে জিজ্ঞাসা করলেই বলে দিবে গোলাপের মাঠ কোন দিকে। আপনি কাউকে জিজ্ঞাসা না করেও যেতে পারেন। ঘাট থেকে উঠেই হাতের ডান দিকে চলতে থাকলেই কিছুক্ষণ পর আপনার চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ গোলাপের মাঠ। মাঠে ঢুকে অনুমতি নিতে মোটেও ভুলবেন না কৃষকের কাছ থেকে। তারপর আপনি সবুজ ঘাসের আইল ধরে হাঁটতে থাকবেন গোলাপের মাঠে। ফুটন্ত গোলাপ, কুঁড়ি গোলাপ, বিভিন্ন রঙের গোলাপ চোখে পড়বে। কখনো পানি দেওয়া হচ্ছে গোলাপ খেতে, কেউ কেউ ফুল তুলছেন, ফুলের তোড়া বাঁধছেন, আছে সেখানে ছোট কুঁড়েঘর। আপনি চাইলে কিছুক্ষণ বিশ্রামও নিতে পারবে। তবে অবশ্যই একটু সাবধানে চলাচল করবেন।

গোলাপ যতই সুন্দর হোক না কেন কাঁটা কিন্তু আপনাকে আদর করবে না। আপনি চাইলে গোলাপ খুব স্বল্পমূল্যে কিনতে পারবেন এখান থেকে। আবার অর্ডারও করে আসতে পারেন। পাশেই রয়েছে গোলাপের চারা উৎপাদনের নার্সারি। গোলাপ বাগানের পাশেই আবার নদীর পার। আপনি সেখানেও কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন। সমতল পারে জলের ওপর কচুরিপানার সবুজ আচ্ছাদন। ফুলে ফুলে তা অন্য এক স্বর্গ রচনা করে আছে। একটু দূরেই ধানের খড়ের বড় বড় গম্বুজ দেখতে পাবেন, যা একদম ছোটবেলায় গ্রামে দেখেছেন।

দেখতে দেখতে কখন যে আপনি অনেকটা সময় পার করে দিয়েছেন তা টেরই পাবেন না। তবে পেট আপনার সময়ের কথা জানান দিবে। হ্যাঁ ক্ষুধা লেগেছে। খেতে হবে। কি খাবেন? গরম গরম সিঙ্গারা, পিঁয়াজু, পুরি থেকে শুরু করে চা-কফি, মিষ্টি, ভাত-মাংস এবং বিভিন্ন আইটেমের টাটকা শাক-সবজি, ভাজি, ভর্তা ও নদীর একদম জ্যান্ত মাছের রান্না। খাবারের স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। মনে হবে আপনি একেবারে গ্রামের কোনো বাড়িতে খাবার খাচ্ছেন। নদীর পার থেকে কিনতে পারেন জ্যান্ত মাছ। তবে একটু দরদাম করে নিতে হবে। মিষ্টি কিনতে পারেন দু-এক কেজি। ঢাকার তুলনায় অনেক সস্তা দামে পাওয়া যাবে সুস্বাদু মিষ্টি। এবার ফেরার পালা। ঠিক ৩০ মিনিট পর পরই একটা করে ট্রলার ছেড়ে আসবে সাদুল্যাপুর ঘাট থেকে। সন্ধ্যার সময় এক অপরূপ দৃশ্যে পরিণত হয়। ছোট ছোট নৌকায় কুপির আলো নদীর মধ্যে জোনাকির মতো জ্বলে ওঠা, পাখির কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশ।

ছোট নৌকা ভাড়া করে দ্বীপগুলোতে যাওয়া যাবে। আর যদি আপনি নৌকা ভ্রমণ করেন তাহলে তো কোনো কথা নেই। সারা দিনও কাটিয়ে দিতে পারেন এখানে। জলে নেমে গোসল করতে পারেন যদি মন চায়। জলের বুকে চাইলে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটতেও পারেন। তাহলে সেভাবে আপনাকে পোশাক সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। এখন ওখানে গেলে আপনি ঘুরতে পারবেন কাশফুলের স্বর্গরাজ্যে। চারদিকে এখন কাশফুল আর কাশফুল। ঢেউয়ের মতো বাতাসে বয়ে যাওয়া কাশফুলে আপনাকে মোহিত করবে অন্যরকম এক আবেশে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যেতে হলে মিরপুর মাজার রোড হয়ে বেড়িবাঁধ সড়কে যাবেন। এ ক্ষেত্রে মিরপুর-১ থেকে বাস, টেম্পো, অটোরিকশা বা রিকশায় চড়তে হবে। বেড়িবাঁধ তুরাগের তীর তথা শিন্নিরটেক ঘাট থেকে ট্রলারে উঠতে হবে। এই জলযান আপনাকে সাদুল্যাপুর ঘাটে নিয়ে যাবে। তবে শুকনো মৌসুমে নদী পার হয়ে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর