মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট ও এর আশপাশের এলাকা। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে ফেরিঘাটের অংশবিশেষ, পাশের মাছের আড়তসহ বেশ কয়েক শ বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে ফেরিঘাটের দোতলা মসজিদসহ বিশাল পার্কিং ইয়ার্ড ও একটি স্কুল। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি বস্তা ফেলা শুরু করেছে। এদিকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঈদগাহ মাঠসহ ওই গ্রামের ৩০ পরিবারের বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও মূল্যবান গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চাঁদপুর : চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সড়কপথে দ্রুততম সময়ে পণ্য পরিবহনের জন্য ২০০০ সালে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস চালু হয়। এ জন্য চাঁদপুরের হরিণা এবং শরীয়তপুরের নরসিংহপুর এলাকায় ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়। কিন্তু চলতি বর্ষার শুরুতে উজানের পানির তীব্র চাপে মেঘনা নদীর পূর্ব পাড় হরিণা এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ফেরিঘাটের অংশবিশেষ, উত্তর পাশের পাইকারি মাছের আড়তের ৩০-৩৫টি দোকান, দক্ষিণ পাশের দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এলাকার কয়েক শ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে প্রচণ্ড হুমকির মুখে ফেরিঘাটের দোতলা মসজিদ, বিশাল পার্কিং ইয়ার্ড ও একটি স্কুল।
এলাকার বিল্লাল হোসেন গাজী বলেন, ‘হঠাৎ নদীভাঙনের কারণে অনেকে দিশাহারা হয়ে পড়েছে।’
হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি অনেক আগে প্রশাসনকে জানানো হয়। কিন্তু সময়মতো কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) হরিণা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন বলেন, ‘ঘাট রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরিভাবে জানানো হয়েছে। এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ঈদের আগে ফেরিঘাটের পন্টুন দেবে গিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।’
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন পরিদর্শনে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আপৎকালীন ভাঙন রক্ষায় বালুভর্তি বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে স্থায়ীভাবে ভাঙন রক্ষায় ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতি কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক) থেকে টাকা ছাড়ের অনুমোদন পেলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে হরিণা ফেরিঘাট ও এর আশপাশের এলাকা রক্ষার কাজ শুরু হবে।’
গাইবান্ধা : পানি কমে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্রের তীব্র স্রোতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে ফুলছড়ির কামারপাড়া গ্রামে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঈদগাহ মাঠসহ ওই গ্রামের ৩০ পরিবারের বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও মূল্যবান গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজ, ফুলছড়ি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা, একটি মন্দিরসহ ওই এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার।
সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল মিয়া, ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোতোষ রায় মিন্টু, ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সবুর সরকার প্রমুখ।
এলাকাবাসী জানায়, দুই মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন চলছে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামে। কামারপাড়া ঈদগাহ মাঠসহ ওই এলাকার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফুলছড়ি-বরমতাইর সড়কটি হুমকির মুখে থাকায় নদীপারের মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে তাদের ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গৃহহারা পরিবারের লোকজন তাদের সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা ডেপুটি স্পিকারের কাছে সহায়-সম্বল রক্ষার আবেদন জানায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে প্রথমে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে।’
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ফুলছড়ি-বরমতাইর সংযোগ রাস্তা ও কামারপাড়া রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে আরো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে ত্বরিতগতিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদের কিনারে ফেলে ভাঙন ঠেকানো যায়।’