ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অঙ্গদানের বিধান অপব্যবহারের শঙ্কা, সতর্কতা ও নজরদারির তাগিদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • ২০ বার

দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়। রোগীদের একটি বড় অংশের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আইনি জটিলতায় অনেকেই তা করতে পারেন না।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশে-২০২৫ পাস হয়েছে। এতে তিনটি বড় পরিবর্তন হয়েছে। এখন থেকে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে ভাগনা-ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিজি ও সৎ ভাইবোনও অঙ্গ দিতে পারবেন। আর আত্মীয় না হলেও সোয়াপ ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে অন্যদের অঙ্গও দেয়া-নেয়া করা যাবে।

তবে এই অধ্যাদেশে সবচেয়ে বড় সংশোধনী হলো ইমোশনাল ডোনার। অর্থাৎ এখন থেকে রোগীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা অঙ্গ দিতে পারবেন। এজন্য অঙ্গদাতার সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সক্ষমতা, মানসিক সুস্থতা, অঙ্গগ্রহীতার সঙ্গে পূর্ব পরিচয়সহ অনেক বিষয় যাচাই করা হবে। আর অঙ্গদাতার ন্যুনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

এই বিষয়গুলো যাচাইয়ের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ, ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং মানবাধিকার কমিশন থেকে সদস্য হিসেবে একজন করে থাকবেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, আত্মীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন। তাই একটি শক্তিশালী কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি বিষয়গুলোকে যাচাই-বাছাই করবে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ থেকে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। যাতে একজন ব্যক্তি অর্থের লেনদেন নয় ইমোশনাল জায়গা থেকে অঙ্গ দান করেছে তা নিশ্চিত করা যায়।

অধ্যাদেশে অঙ্গ বিক্রি প্রতিরোধে সাজার বিধান রাখা হয়েছে। অঙ্গ বিক্রেতা, সহায়তাকারী এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে দুই থেকে তিন বছর কারাদণ্ড এবং পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সায়েদুর রহমান আরও বলেন, আইন যাতে বাঁধা তৈরি না করে সে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই আইনকে ব্যবহার করে যাতে অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের ব্যবসা শুরু না হয় সেটি বন্ধের চেষ্টা করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ যাতে অঙ্গ বিক্রির সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য সতর্কতা ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিডনি বিকল ছিল। কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে ম্যাচিং না হওয়ায় তাদের কিডনি নিতে পারেননি তিনি। পরে তার অনুসারীদের দুইজন কিডনি দানের আগ্রহ দেখালে আইনে তা আটকে যায়। পরে তারা উচ্চ আদালতে গেলে ইমোশনাল ডোনারদের বিষয়ে নির্দেশনা দেয় আদালত। সে অনুযায়ী বিষয়টি অধ্যাদেশে যুক্ত করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অঙ্গদানের বিধান অপব্যবহারের শঙ্কা, সতর্কতা ও নজরদারির তাগিদ

আপডেট টাইম : ১০:২৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়। রোগীদের একটি বড় অংশের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আইনি জটিলতায় অনেকেই তা করতে পারেন না।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশে-২০২৫ পাস হয়েছে। এতে তিনটি বড় পরিবর্তন হয়েছে। এখন থেকে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে ভাগনা-ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিজি ও সৎ ভাইবোনও অঙ্গ দিতে পারবেন। আর আত্মীয় না হলেও সোয়াপ ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে অন্যদের অঙ্গও দেয়া-নেয়া করা যাবে।

তবে এই অধ্যাদেশে সবচেয়ে বড় সংশোধনী হলো ইমোশনাল ডোনার। অর্থাৎ এখন থেকে রোগীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা অঙ্গ দিতে পারবেন। এজন্য অঙ্গদাতার সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সক্ষমতা, মানসিক সুস্থতা, অঙ্গগ্রহীতার সঙ্গে পূর্ব পরিচয়সহ অনেক বিষয় যাচাই করা হবে। আর অঙ্গদাতার ন্যুনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

এই বিষয়গুলো যাচাইয়ের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ, ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং মানবাধিকার কমিশন থেকে সদস্য হিসেবে একজন করে থাকবেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, আত্মীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন। তাই একটি শক্তিশালী কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি বিষয়গুলোকে যাচাই-বাছাই করবে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ থেকে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। যাতে একজন ব্যক্তি অর্থের লেনদেন নয় ইমোশনাল জায়গা থেকে অঙ্গ দান করেছে তা নিশ্চিত করা যায়।

অধ্যাদেশে অঙ্গ বিক্রি প্রতিরোধে সাজার বিধান রাখা হয়েছে। অঙ্গ বিক্রেতা, সহায়তাকারী এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে দুই থেকে তিন বছর কারাদণ্ড এবং পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সায়েদুর রহমান আরও বলেন, আইন যাতে বাঁধা তৈরি না করে সে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই আইনকে ব্যবহার করে যাতে অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের ব্যবসা শুরু না হয় সেটি বন্ধের চেষ্টা করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ যাতে অঙ্গ বিক্রির সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য সতর্কতা ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিডনি বিকল ছিল। কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে ম্যাচিং না হওয়ায় তাদের কিডনি নিতে পারেননি তিনি। পরে তার অনুসারীদের দুইজন কিডনি দানের আগ্রহ দেখালে আইনে তা আটকে যায়। পরে তারা উচ্চ আদালতে গেলে ইমোশনাল ডোনারদের বিষয়ে নির্দেশনা দেয় আদালত। সে অনুযায়ী বিষয়টি অধ্যাদেশে যুক্ত করা হয়।