ঢাকা ০২:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাখি হয়েও দুধ দেয় কবুতর, প্রকৃতির বিস্ময়কর রূপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • ২২ বার

দুধ মানেই আমরা ভাবি গরু, ছাগল, মানুষ বা অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা। কিন্তু প্রকৃতির এক আশ্চর্য দান হলো—কবুতরের দুধ। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি, কবুতরও দুধ দেয়! এই দুধকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন “পিজন মিল্ক” (Pigeon Milk), যা কবুতরছানার জীবনের শুরুতে একমাত্র খাদ্য হিসেবে কাজ করে।

কীভাবে তৈরি হয় এই দুধ?

এই দুধ স্তন্যপায়ীদের মতো স্তনগ্রন্থি থেকে আসে না। বরং এটি কবুতরের গলার ভেতরে থাকা ‘ক্রপ’ (crop) নামের একটি থলি সদৃশ অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয়। কবুতর ডিম ফোটার কয়েকদিন আগে থেকেই ক্রপের ভেতরের কোষগুলো ঘন হয়ে দুধের মতো এক ধরনের সাদা তরল তৈরি করতে শুরু করে। ছানা ফুটে বের হওয়ার পর মা-বাবা উভয়েই ঠোঁটের মাধ্যমে এই দুধ খাওয়ায়।

কী আছে কবুতরের দুধে?

গবেষণায় দেখা গেছে, কবুতরের দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ইমিউন সেল থাকে। এসব উপাদান নবজাতক কবুতরছানার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা ইমিউন কোষ ও প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বাচ্চাকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো—পুরুষ ও স্ত্রী উভয় কবুতরই এই দুধ তৈরি করতে পারে। প্রাণিজগতে এ ধরনের উদাহরণ অত্যন্ত বিরল। সাধারণত দুধ উৎপাদন কেবল মাদার প্রাণীর কাজ হলেও কবুতরের ক্ষেত্রে বাবারাও ছানার খাবার তৈরিতে সমান ভূমিকা রাখে।

শুধু কবুতর নয়, আরও কিছু পাখি যেমন ফ্লেমিংগো ও সম্রাট পেঙ্গুইন প্রজাতির পাখিরাও দুধজাতীয় তরল উৎপাদন করে। তবে কবুতরের দুধ সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর এবং জৈবিকভাবে জটিল বলে মনে করা হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিজন মিল্কের রাসায়নিক গঠন ও জৈব প্রক্রিয়া মানুষের বুকের দুধের সঙ্গে আশ্চর্য মিল রয়েছে। এটি শুধু পুষ্টির উৎস নয়, বরং এক ধরনের ইমিউন সিস্টেম ট্রেনার—যা নবজাতক ছানাকে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম করে।

বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এই দুধ নিয়ে বায়োটেকনোলজিক্যাল গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা খুঁজে দেখছেন, এটি থেকে মানব ব্যবহারের উপযোগী কোনো ইমিউন বুস্টার বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা সম্ভব কি না।

প্রকৃতিতে এমন অনেক বিস্ময় লুকিয়ে আছে যা আমাদের জীবনবিজ্ঞানের ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে। কবুতরের দুধ সেই বিস্ময়গুলোর একটি—যেখানে কোনো স্তন্যগ্রন্থি ছাড়াই প্রাণী তার সন্তানকে পুষ্টি জোগাতে সক্ষম হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বোঝা গেলে ভবিষ্যতে প্রাণিজগতে খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টিবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাখি হয়েও দুধ দেয় কবুতর, প্রকৃতির বিস্ময়কর রূপ

আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

দুধ মানেই আমরা ভাবি গরু, ছাগল, মানুষ বা অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা। কিন্তু প্রকৃতির এক আশ্চর্য দান হলো—কবুতরের দুধ। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি, কবুতরও দুধ দেয়! এই দুধকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন “পিজন মিল্ক” (Pigeon Milk), যা কবুতরছানার জীবনের শুরুতে একমাত্র খাদ্য হিসেবে কাজ করে।

কীভাবে তৈরি হয় এই দুধ?

এই দুধ স্তন্যপায়ীদের মতো স্তনগ্রন্থি থেকে আসে না। বরং এটি কবুতরের গলার ভেতরে থাকা ‘ক্রপ’ (crop) নামের একটি থলি সদৃশ অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয়। কবুতর ডিম ফোটার কয়েকদিন আগে থেকেই ক্রপের ভেতরের কোষগুলো ঘন হয়ে দুধের মতো এক ধরনের সাদা তরল তৈরি করতে শুরু করে। ছানা ফুটে বের হওয়ার পর মা-বাবা উভয়েই ঠোঁটের মাধ্যমে এই দুধ খাওয়ায়।

কী আছে কবুতরের দুধে?

গবেষণায় দেখা গেছে, কবুতরের দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ইমিউন সেল থাকে। এসব উপাদান নবজাতক কবুতরছানার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা ইমিউন কোষ ও প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বাচ্চাকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো—পুরুষ ও স্ত্রী উভয় কবুতরই এই দুধ তৈরি করতে পারে। প্রাণিজগতে এ ধরনের উদাহরণ অত্যন্ত বিরল। সাধারণত দুধ উৎপাদন কেবল মাদার প্রাণীর কাজ হলেও কবুতরের ক্ষেত্রে বাবারাও ছানার খাবার তৈরিতে সমান ভূমিকা রাখে।

শুধু কবুতর নয়, আরও কিছু পাখি যেমন ফ্লেমিংগো ও সম্রাট পেঙ্গুইন প্রজাতির পাখিরাও দুধজাতীয় তরল উৎপাদন করে। তবে কবুতরের দুধ সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর এবং জৈবিকভাবে জটিল বলে মনে করা হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিজন মিল্কের রাসায়নিক গঠন ও জৈব প্রক্রিয়া মানুষের বুকের দুধের সঙ্গে আশ্চর্য মিল রয়েছে। এটি শুধু পুষ্টির উৎস নয়, বরং এক ধরনের ইমিউন সিস্টেম ট্রেনার—যা নবজাতক ছানাকে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম করে।

বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এই দুধ নিয়ে বায়োটেকনোলজিক্যাল গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা খুঁজে দেখছেন, এটি থেকে মানব ব্যবহারের উপযোগী কোনো ইমিউন বুস্টার বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা সম্ভব কি না।

প্রকৃতিতে এমন অনেক বিস্ময় লুকিয়ে আছে যা আমাদের জীবনবিজ্ঞানের ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে। কবুতরের দুধ সেই বিস্ময়গুলোর একটি—যেখানে কোনো স্তন্যগ্রন্থি ছাড়াই প্রাণী তার সন্তানকে পুষ্টি জোগাতে সক্ষম হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বোঝা গেলে ভবিষ্যতে প্রাণিজগতে খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টিবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।