ঢাকা ০৩:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথনকশা প্রস্তুত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৬ বার

জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব রেখে সুপারিশ চূড়ান্ত করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ শুক্রবার কিংবা আগামীকাল শনিবারের মধ্যে সরকারের কাছে এটি হস্তান্তর করা হতে পারে। চলতি মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত জানাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবে কমিশন।

এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করব। আমাদের বিবেচনার দিক হচ্ছে, এটি বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ে সারা দিন বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। সকালে কমিশন সদস্যদের মধ্যে বৈঠক হয়। বিকালে কমিশনের বৈঠক হয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সভায় আগের দিনের অসমাপ্ত আলোচনার ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে কমিশনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, সুপারিশ চূড়ান্ত করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ শিগগিরই সরকারের কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হবে।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীও এতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান গ্রহণের পরামর্শ থাকবে কমিশনের। কমিশন ভাবছে, তারা বাস্তবায়নের যে সুপারিশই দিক না কেন, সব দল সেটা মানবে না। দলগুলোর প্রতিবাদ আসবেই। সব দলকে খুশি করার মতো সুপারিশ তৈরি করা কারও পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারকে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

জানা গেছে, আজ কিংবা আগামীকালের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে কমিশন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবে কমিশন। সুপারিশ তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচ দিন বৈঠক করেছে কমিশন। বৈঠকে শেষ পর্যন্ত দলগুলো একমত হতে পারেনি। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন একটি সুপারিশ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। এতে জুলাই সনদ নিয়ে বিশেষ আদেশ জারি এবং এর বৈধতা নিতে গণভোট আয়োজনের কথা থাকবে। এ ছাড়া থাকতে পারে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দিয়ে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে খসড়া আদেশটির নাম হতে পারে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সাংবিধানিক) আদেশ’।

সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মধ্যেই গণভোট কোন প্রশ্নে হবে, তা উল্লেখ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ব্যালটে গণভোটের প্রশ্ন হতে পারে। সেখানে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না- এ রকম প্রশ্ন রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না- এমন প্রশ্নে গণভোট। এর বাইরে আরেকটি হতে পারে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি জনগণ মানে কি না। তবে গণভোটের সময় নির্ধারণসহ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের ওপরই ছেড়ে দেবে কমিশন।

প্রসঙ্গত, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ দিনের আলোচনায়ও দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিএনপি ও সমমনা কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড়। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এসব প্রশ্নেরও সমাধান আসেনি বৈঠকে। এ অবস্থায় ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত এ সনদে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি দল স্বাক্ষর করেছে। বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করতে পারে। তবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) চারটি বাম ঘরানার দলের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথনকশা প্রস্তুত

আপডেট টাইম : ১০:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব রেখে সুপারিশ চূড়ান্ত করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ শুক্রবার কিংবা আগামীকাল শনিবারের মধ্যে সরকারের কাছে এটি হস্তান্তর করা হতে পারে। চলতি মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত জানাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবে কমিশন।

এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করব। আমাদের বিবেচনার দিক হচ্ছে, এটি বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ে সারা দিন বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। সকালে কমিশন সদস্যদের মধ্যে বৈঠক হয়। বিকালে কমিশনের বৈঠক হয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সভায় আগের দিনের অসমাপ্ত আলোচনার ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে কমিশনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, সুপারিশ চূড়ান্ত করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ শিগগিরই সরকারের কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হবে।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীও এতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান গ্রহণের পরামর্শ থাকবে কমিশনের। কমিশন ভাবছে, তারা বাস্তবায়নের যে সুপারিশই দিক না কেন, সব দল সেটা মানবে না। দলগুলোর প্রতিবাদ আসবেই। সব দলকে খুশি করার মতো সুপারিশ তৈরি করা কারও পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারকে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

জানা গেছে, আজ কিংবা আগামীকালের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে কমিশন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবে কমিশন। সুপারিশ তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচ দিন বৈঠক করেছে কমিশন। বৈঠকে শেষ পর্যন্ত দলগুলো একমত হতে পারেনি। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন একটি সুপারিশ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। এতে জুলাই সনদ নিয়ে বিশেষ আদেশ জারি এবং এর বৈধতা নিতে গণভোট আয়োজনের কথা থাকবে। এ ছাড়া থাকতে পারে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দিয়ে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে খসড়া আদেশটির নাম হতে পারে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সাংবিধানিক) আদেশ’।

সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মধ্যেই গণভোট কোন প্রশ্নে হবে, তা উল্লেখ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ব্যালটে গণভোটের প্রশ্ন হতে পারে। সেখানে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না- এ রকম প্রশ্ন রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না- এমন প্রশ্নে গণভোট। এর বাইরে আরেকটি হতে পারে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি জনগণ মানে কি না। তবে গণভোটের সময় নির্ধারণসহ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের ওপরই ছেড়ে দেবে কমিশন।

প্রসঙ্গত, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ দিনের আলোচনায়ও দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিএনপি ও সমমনা কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড়। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এসব প্রশ্নেরও সমাধান আসেনি বৈঠকে। এ অবস্থায় ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত এ সনদে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি দল স্বাক্ষর করেছে। বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করতে পারে। তবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) চারটি বাম ঘরানার দলের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।