ঢাকা ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৯০ দিনের মধ্যে ভাঙতে হবে বিজিএমইএ ভবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৬
  • ২৯০ বার

রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন-বিজিএমইএ এর বহুতল ভবন ভাঙার রায় প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার ৩৫ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ে বিজিএমইএ’কে তাৎক্ষণিকভাবে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে। অন্যথায় রায়ের প্রত্যায়িত কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ভবনটিকে ভাঙতে বলা হয়েছে। তবে রায় প্রকাশের পর এখন রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকছে বিজিএমইএ-র সামনে। অন্যথায় ভবন ভাঙতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকবে না।

পরিবেশের ক্ষতি করে বেআইনিভাবে প্রায় এক দশক আগে ১৬ তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছিল। এই ভবনটি অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ’র আপিলের গত ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ২ অক্টোবর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয়। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছিল, ‘বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।’

হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

হাইকোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে জলাধার রক্ষা আইন লঙ্ঘন করে হাতিরঝিলে গড়ে তোলা বহুতল ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয়। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়।

২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাই কোর্টের দেয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। যা শেষ হলে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৯০ দিনের মধ্যে ভাঙতে হবে বিজিএমইএ ভবন

আপডেট টাইম : ১২:০০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৬

রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন-বিজিএমইএ এর বহুতল ভবন ভাঙার রায় প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার ৩৫ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ে বিজিএমইএ’কে তাৎক্ষণিকভাবে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে। অন্যথায় রায়ের প্রত্যায়িত কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ভবনটিকে ভাঙতে বলা হয়েছে। তবে রায় প্রকাশের পর এখন রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকছে বিজিএমইএ-র সামনে। অন্যথায় ভবন ভাঙতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকবে না।

পরিবেশের ক্ষতি করে বেআইনিভাবে প্রায় এক দশক আগে ১৬ তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছিল। এই ভবনটি অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ’র আপিলের গত ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ২ অক্টোবর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয়। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছিল, ‘বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।’

হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

হাইকোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে জলাধার রক্ষা আইন লঙ্ঘন করে হাতিরঝিলে গড়ে তোলা বহুতল ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয়। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়।

২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাই কোর্টের দেয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। যা শেষ হলে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।