ঢাকা ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বলছেন বিশ্ব নেতারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ২২ বার

ইসরাইল ও হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এ চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্রাম্প জানান, চুক্তির অধীনে সব জিম্মিদের শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে।

প্রথম ধাপে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গাজায় জিম্মি ২০ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দি এবং ২৮ জনের মরদেহ ফেরত দেবে।

এর বিনিময়ে ইসরাইল এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেবে—যাদের মধ্যে অনেকেই ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে আটক।

চুক্তিটি মিশরের শারম-আল-শেখে তিন দিনের পরোক্ষ আলোচনার পর সম্পন্ন হয়। আলোচনায় কাতার, তুরস্ক, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি গর্বিত যে ইসরাইল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সই করেছে। এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।

তিনি আরও বলেন, গাজা পুনর্নির্মিত হবে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চলবে—একটি নতুন বিশ্ব শুরু হবে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আজ (বুধবার) ইসরাইলের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আগামীকাল আমি সরকারকে আহ্বান করবো চুক্তি অনুমোদনের জন্য এবং আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফেরাতে।

হামাস এক বিবৃতিতে কাতার, মিশর, তুরস্ক ও ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানায় এবং ইসরাইলকে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না—আমরা স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, এটি দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি কাতার, মিশর, তুরস্ক ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের সংযোগ পুনঃস্থাপনের ওপর জোর দেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়ে সব দফা ও বাস্তবায়ন কাঠামোতে চুক্তি হয়েছে।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়েছেন। আমরা চুক্তি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো এবং ১৯৬৭ সালের সীমারেখায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।

সৌদি আরব আশা প্রকাশ করেছে যে চুক্তিটি গাজাবাসীর মানবিক কষ্ট লাঘবে এবং ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারে সহায়ক হবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘মাসের পর মাস দুর্ভোগের পর এই চুক্তি একটুখানি আশার আলো।’ তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে আহ্বান জানান।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, মস্কো চুক্তির প্রথম ধাপকে সমর্থন করছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীদের প্রশংসা জানাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, এটি আশার এক আলো—আট দশকের সহিংসতা ও সন্ত্রাসের পর এখনই সময় এই চক্র ভাঙার।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমি যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি স্বাগত জানাই। এখন জরুরি হলো মানবিক সহায়তা ও নিরবচ্ছিন্নভাবে গাজায় প্রবেশ নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, এই চুক্তি যেন দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে স্থায়ী শান্তির সূচনা হয়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, এই চুক্তি যুদ্ধের সমাপ্তি এবং রাজনৈতিক সমাধানের সূচনা ঘটাবে। ফ্রান্স এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন বিলম্ব ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে হতে হবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তার ওপর সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ গৃহীত হওয়ায় আমরা স্বাগত জানাই। এটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বলছেন বিশ্ব নেতারা

আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

ইসরাইল ও হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এ চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্রাম্প জানান, চুক্তির অধীনে সব জিম্মিদের শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে।

প্রথম ধাপে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গাজায় জিম্মি ২০ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দি এবং ২৮ জনের মরদেহ ফেরত দেবে।

এর বিনিময়ে ইসরাইল এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেবে—যাদের মধ্যে অনেকেই ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে আটক।

চুক্তিটি মিশরের শারম-আল-শেখে তিন দিনের পরোক্ষ আলোচনার পর সম্পন্ন হয়। আলোচনায় কাতার, তুরস্ক, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি গর্বিত যে ইসরাইল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সই করেছে। এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।

তিনি আরও বলেন, গাজা পুনর্নির্মিত হবে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চলবে—একটি নতুন বিশ্ব শুরু হবে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আজ (বুধবার) ইসরাইলের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আগামীকাল আমি সরকারকে আহ্বান করবো চুক্তি অনুমোদনের জন্য এবং আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফেরাতে।

হামাস এক বিবৃতিতে কাতার, মিশর, তুরস্ক ও ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানায় এবং ইসরাইলকে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না—আমরা স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, এটি দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি কাতার, মিশর, তুরস্ক ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের সংযোগ পুনঃস্থাপনের ওপর জোর দেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়ে সব দফা ও বাস্তবায়ন কাঠামোতে চুক্তি হয়েছে।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়েছেন। আমরা চুক্তি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো এবং ১৯৬৭ সালের সীমারেখায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।

সৌদি আরব আশা প্রকাশ করেছে যে চুক্তিটি গাজাবাসীর মানবিক কষ্ট লাঘবে এবং ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারে সহায়ক হবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘মাসের পর মাস দুর্ভোগের পর এই চুক্তি একটুখানি আশার আলো।’ তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে আহ্বান জানান।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, মস্কো চুক্তির প্রথম ধাপকে সমর্থন করছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীদের প্রশংসা জানাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, এটি আশার এক আলো—আট দশকের সহিংসতা ও সন্ত্রাসের পর এখনই সময় এই চক্র ভাঙার।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমি যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি স্বাগত জানাই। এখন জরুরি হলো মানবিক সহায়তা ও নিরবচ্ছিন্নভাবে গাজায় প্রবেশ নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, এই চুক্তি যেন দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে স্থায়ী শান্তির সূচনা হয়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, এই চুক্তি যুদ্ধের সমাপ্তি এবং রাজনৈতিক সমাধানের সূচনা ঘটাবে। ফ্রান্স এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন বিলম্ব ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে হতে হবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তার ওপর সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ গৃহীত হওয়ায় আমরা স্বাগত জানাই। এটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।