আমি চাই পুলিশ শব্দটাই মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠবে, বিপ্লব কুমার সরকার ডিসি তেজগাঁও জোন

মোঃ জাকির হোসাইন : ছোটবেলায় ভয় পেতেন পুলিশকে। বড় হয়ে নিজেই বনে গেলেন পুলিশের বড় কর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন করতেন ছাত্র রাজনীতি। তখনই নিজের মধ্যে উপলব্ধি জাগে- প্রতিমুহূর্তে পুলিশই কেবল সরাসরি মানুষের সেবা করতে পারে। সেবার ব্রত নিয়ে ২১তম বিসিএসে পুলিশে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বিপ্লব কুমার সরকার। কিশোরগঞ্জের এই সন্তান এখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ কমিশনারের (ডিসি) দায়িত্ব পালন করছেন। কাজের প্রতি একাগ্রতা, শৃঙ্খলা ও কর্মনিষ্ঠার জন্য তিনি পেয়েছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পিপিএম ও বিপিএম। সম্প্রতি পরপর পাঁচ মাস তিনি ডিএমপির সেরা ডিসি হিসেবেও মনোনীত হয়েছেন। পুলিশ ও নিজের বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিপ্লব কথা বলেছেন।
এত পেশা থাকতে পুলিশে কেন এলেন?
বিপ্লব কুমার সরকার: খুব ছোটবেলায় পেশা কী, সেটাই ঠিকমতো বুঝতাম না। একটু বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় মূলত পুলিশে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা তৈরি হলো। এর কারণ হচ্ছে– আমি তখন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ফলে পুলিশের সঙ্গে নানা কারণেই একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। তখন আমি দেখলাম, যদি মানুষের জন্য প্রতিমুহূর্তে সরাসরি কোনো কাজ করতে চাই, সেবা করতে চাই তাহলে পুলিশ পেশাতেই তা সম্ভব। তখন থেকেই পুলিশ হওয়ার বাসনা মনের মধ্যে জেগে উঠল। পরে বিসিএস দিলাম। পুলিশে যোগ দেওয়ার সুযোগটাও চলে এল।
পুলিশকে নিয়ে মানুষ অনেক নেতিবাচক কথা বলে। এগুলো আপনাকেও শুনতে হয়। এসব কথা আপনার কাজে বিরূপ প্রভাব ফেলে না?
বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক কথা আমিও শুনি। বাইরে থেকে যতটা বলা হয়, আসলে পুলিশ অতটা খারাপ না। অত খারাপ সমালোচনা পুলিশ ডিজার্ভ করে না। এখনও মানুষের আস্থা পুলিশের ওপরই আছে। যেকোনো বিপদে মানুষ এখনও পুলিশের শরণাপন্ন হয়। আমি জানি, মানুষের জন্য আমি কী করতে পারি। মানুষ আমাকে নিয়ে খারাপ কিছু বললেও তাতে আমার কিছু যায় আসে না, যদি আমি নিজে ঠিক থাকি। এসব কথা আমার কাজে বিরূপ বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
পুলিশ নিয়ে তাহলে মানুষের এত ভুল ধারণা কেন?
বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশের জন্ম কিন্তু জনবান্ধব পুলিশিংয়ের জন্য হয়নি। ‘জনবান্ধব পুলিশিং’ একটা আধুনিক ধারণা। ২০০ বছর আগে পুলিশ গঠন করা হয় বৃটিশ জমিদারদের সম্পদ রক্ষা, খাজনা আদায় ও জোরপূর্বক মানুষের ওপর নির্যাতন করা একটা পেটোয়া বাহিনী হিসেবে। মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে আজও সেই ধারণা রয়ে গেছে।
দেখুন, এখন মায়েরা বাচ্চাকে বলে- ঘুমাও, পুলিশ আসছে। পুলিশ মানেই ভয়, এমন ধারণা মানুষের মন থেকে আজও যায়নি। এটাকে পারসেপশান বলে। পুলিশকে এককথায় সবাই খারাপ বলে। কিন্তু কয়জন মানুষ পুলিশের সাথে মিশেছে? না মিশেই মন্তব্য ছুঁড়ে দেয় অনেকে। এটা ধীরে ধীরে সংক্রমিত হয়েছে সমাজের সবার মধ্যে। বৃটিশ আমলের পুলিশ ও বর্তমান পুলিশ এক না। আমাদের দেশের পুলিশ এখন অনেক আধুনিক। পুলিশের এমন অসংখ্য ভালো দিক আছে যেগুলো মিডিয়াতে প্রচার হয় না। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বড় করে প্রচার করা হচ্ছে। এতে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের খারাপ ধারণা বাড়ছে, কমছে না।
ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেজন্য কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
বিপ্লব কুমার সরকার: ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর সঙ্গে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। বেশ ঘটা করে মিডিয়াতে এসেছে বিষয়টি। গত একমাস পর্যালোচনা করলে ঢাকায় এমন আলোচিত ৫-৬টি ঘটনা পাওয়া যাবে। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর সব ঘটনাতেই পুলিশের অপরাধ প্রমাণিতও হয়নি। অথচ পুলিশের বিরুদ্ধাচরণ চলছেই।
গত একমাসে কতজন পুলিশকে শাস্তি দেয়া হয়েছে জানেন? কেবল এই ৫-৬টি না, বিভিন্ন কারণে অনেকগুলো শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের শাস্তিতে অনেকের চাকরিও চলে গেছে। কিন্তু সেসব শাস্তির কথা মিডিয়াতে আসে না। তবে পুলিশের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আধুনিকায়নে সব ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একসময় পুলিশে এসব ঘটনা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শুধু শাস্তি দিয়ে কি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব?
বিপ্লব কুমার সরকার: না, সম্ভব না। সেজন্য আমরা অনেক মোটিভেশনাল কার্যক্রমও গ্রহণ করেছি। এখন থানায় থানায় প্রায়ই সিনিয়র অফিসাররা যাচ্ছেন। ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। আধুনিক ও যুগোপযোগি অনেক সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে, যেগুলোর দ্বারা পুলিশের মোটিভেশন হবে। এভাবেই একসময় পুলিশ জনবান্ধব হিসেবে গড়ে ওঠবে।
কোন কাজটিকে আপনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?
বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশে সার্ভিস করছি, মানুষকে সন্তুষ্ট করাই এখানে বড় চ্যালেঞ্জ। এমন একটা পেশায় আছি, সবাইকে একসঙ্গে সন্তুষ্ট করা যায় না। আমাদের কাজ করতে হয় আইনের মধ্যে থেকে। আইন আমাদের গাইডলাইন। সব মানুষ আইন জানেন না, বুঝতেও চান না। কোনো কাজ নিয়ে এলে সেটা যদি আইনের আওতায় না পড়ে, তাহলে তো আমরা তা করতে পারি না। তখন তারা মনে করেন আমরা হয়তো স্বেচ্ছায় কাজটি এড়িয়ে যাচ্ছি কিংবা প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। মনে রাখতে হবে, পুলিশ কারও পক্ষে কাজ করে না। বাদী-বিবাদী সবার জন্যই পুলিশ আইনের আওতায় থেকে কাজ করে। পুলিশকে কারও না কারও বিরাগভাজন হতেই হয়। সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা তাই বড় চ্যালেঞ্জ।
আপনার দৃষ্টিতে পুলিশের সীমাবদ্ধতা কী কী?
বিপ্লব কুমার সরকার: আসলে পুলিশের তো অনেক কাজ। সে অনুযায়ী সীমাবদ্ধতাও অনেক। পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন নেই, তেমনি অভাব আছে ট্রেনিংয়েরও। আবার দেখেন, দেশের জনগণের তুলনায় পুলিশের জনবল খুবই কম। তার উপর আছে আইনের সীমাবদ্ধতা। আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনা। আইনি সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই সব করতে হয়। কথিত আছে, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সবই পুলিশের কাজ। আইনশৃঙ্খলার আওতাধীন সবকিছুকে পুলিশের কাজের মধ্যে পড়ে। ‘না’ বলে কোনো কিছুকে এড়ানো যায় না। তবে আমরা সেবা দিচ্ছি, দিয়ে যেতে চাই। হাজার সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তা দিয়ে যাবো।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান কোথায়?
বিপ্লব কুমার সরকার: আন্তর্জাতিক মান বলে কী বোঝাতে চাইছেন? কাকে আমরা এ মানদণ্ড হিসেবে ধরবো? আমার সামনে একটা উদাহরণ ঠিক করেন। আমাকে কার মতো হতে হবে? পুলিশের দুটি কাজ।
১. ক্রাইম (অপরাধ) দমন
২. ল অ্যান্ড অর্ডার (আইন-শৃঙ্খলা) রক্ষা।
আমি বলবো- বাংলাদেশের পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশ্বে অদ্বিতীয়। কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি- লন্ডনে একটা দাঙ্গা হয়েছিল। লন্ডন পুলিশ সেটা সহজে সামলাতে পারেনি। সামলাতে যতদিন লেগেছিল ততদিনে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তারা ফেল করেছে। একপ্রকার বলা যায় দায়িত্ব পালনে লন্ডন পুলিশ তখন ব্যর্থ হয়েছিল।
তুরস্কে পার্ক দখল করে ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল। সে দেশের পুলিশ সেটা সামাল দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দেশটির সরকারকে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভবন নির্মান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কয়েকবছর আগে ব্রাজিলেও একটি দাঙ্গা হয়েছিল। সেখানেও পুলিশ কন্ট্রোল করতে পারেনি। নিউইয়র্কে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন হয়েছিল। পুলিশ সেখানে পিপার স্প্রে মেরেছিল, আন্দোলকারীদের টেনে-হিঁচড়ে সরাতে হয়েছিল। ওই সব দেশের পুলিশ উল্লেখিত ঘটনাগুলোয় ব্যর্থ হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশে গত তিন বছরে কোনো আন্দোলন দমনে পুলিশ ব্যর্থ হয়নি। হেফাজতের আন্দোলন একদিনে পুলিশ থামিয়ে দিয়েছিল। লাখ লাখ হেফাজত কর্মীদের পুলিশ সরিয়ে দিতে পেরেছিল। ‍সুতরাং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান নতুন করে বলার কিছু নেই।

তাহলে অপরাধ দমন ক্ষেত্রে কী অবস্থা?
বিপ্লব কুমার সরকার: ক্রাইম কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। পর্যাপ্ত ট্রেনিং ও আধুনিক উপকরণ প্রয়োজন। আবার উপকরণ আছে তো তা ব্যবহারে প্রশিক্ষণ নেই, কিংবা ব্যবহার করতে জানি কিন্তু উপকরণ নেই। তবে আমাদের একটা বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক সময় ও ফোর্স ব্যয় হচ্ছে। আমাদের জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম।
সেজন্য একই পুলিশ ফোর্সকে গুলিস্তানের হকার উচ্ছেদের কাজে যেমন লাগানো হচ্ছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সংঘর্ষ থামাতেও প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু দুই জায়গার চিত্র দুই রকম। হকারদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে সেটা ছাত্রদের সঙ্গে করলে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যাবে। সেজন্য পুলিশকে অনেক কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এতো সময় দিতে না হতো, তাহলে হয়তো অপরাধ দমনে আরও ভালো ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো।
পুলিশকে তো তাহলে বেশ কৌশলে কাজ করতে হয়?
বিপ্লব কুমার সরকার: ঠিক বলেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দেশে যে নাশকতা হয়েছে, সেটা পুলিশ খুব কৌশলে দমন করেছে। আমাদের অনেক হিসাব করে কাজ করতে হয়। আমরা মার দিলেও মানুষ সমালোচনা করে, আবার পুলিশ মার খেলেও দোষ হয়। এ ধরণের একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। আরও কষ্টের বিষয় হচ্ছে– আমাদের দেশে অনেক সেক্টর সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলছে এমন সেক্টর বাংলাদেশে নাই বললেই চলে। সবাই পুলিশের সমালোচনা করছে। অথচ গত তিন বছরের কোনো ঘটনায় পুলিশ ফেল করেনি। তাই আজ ঢাকাসহ সারাদেশ স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।
পুলিশের জনবল নিয়ে বলুন।
বিপ্লব কুমার সরকার: জাতিসংঘের মান ধরলে প্রতি ৪০০ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন করে পুলিশ থাকার কথা। বাংলাদেশে ডিএমপিতে জনবল অন্যান্য ইউনিট থেকে তূলনামূলক বেশি। তবে পুরো দেশের অবস্থা হচ্ছে– প্রতি একহাজার মানুষের জন্য একজন করে পুলিশ। সেজন্য পুলিশ বাহিনীতি ব্যাপকভাবে জনবল বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এ বাহিনীকে অফিসার নির্ভর করতে হবে। বর্তমানে পুলিশের এক লাখ ৭০ হাজার জনবলের মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজারই কনস্টেবল। কনস্টেবল নির্ভর এ ফোর্স থেকে পুলিশকে অফিসার নির্ভর করতে পারলে সেবার মান বাড়বে। একইসঙ্গে পুলিশের লজিস্টিকে বড় ঘাটতি আছে। নানাবিধ জটিলতার কারণে এ ঘাটতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। আজকের চাহিদা দশদিন পর পূরণ হলে ততদিনে আরও নতুন চাহিদা তৈরি হয়। আমরা জানি, আমাদের সব চাহিদা একদিনে রাষ্ট্রের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না। তবু, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে যতটুকু সম্ভব ততটুকু লজেস্টিক সাপোর্ট অন্তত বাড়ানো যেতে পারে। তাতে পুলিশের সেবার মান আরও উন্নত হবে।

পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহারের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা কী?
বিপ্লব কুমার সরকার: আমরা রাজনীতি করি না, আমরা কোনো দলীয় বাহিনীও না। আমরা রাষ্ট্রের কাজ করি। যদি দলীয় সরকারের হয়ে কাজ করতাম, তাহলে সরকার পরিবর্তন হলে আমরাও থাকতাম না। আমাদের জন্য সরকারের কিছু নীতিমালা আছে। আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ আমাকে মান্য করতেই হয়। এর বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারি না।

জঙ্গি দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বলুন।
বিপ্লব কুমার সরকার: সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ এ ধরণের তৎপরতাকে মোটেও সমর্থন করে না। তাই এখানে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত কষ্টকর। বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিয়েছে। এ দেশে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর জন্য দেশি-বিদেশি নানা ধরণের উষ্কানিও রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ এ ধরণের তৎপরতা নির্মূল করতে না পারলেও দমন করতে অন্তত পেরেছে। জঙ্গিরা যখনই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা দমন করছি। এটা একটা বড় সাফল্য। তাদের কার্যক্রম একটা সীমাবদ্ধ গণ্ডির বাইরে যেতে পারছে না।

বিশেষ করে যদি তেজগাঁও ডিভিশনের কথা জানতে চান, আমি বলবো এখানেও জঙ্গি থাকতে পারে। জঙ্গিবাদ কোথায় রয়েছে এটা বলা মুশকিল। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে দু’একটি ঘটনা ঘটে। এটা যেনো মহামারি আকার না ধারণ করে, জঙ্গিদের রাজত্ব যেনো কায়েম হতে না পারে সেজন্য ডিএমপি ও বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় তৎপর আছে।

তাহলে জঙ্গি পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে কীভাবে?
বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশ যেভাবে কাজ করছে তার ধারাবাহিকতা যদি বজায় রাখা যায় তাহলে এদেশে জঙ্গি থাকবে না। আমাদের যেসব প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো যদি দূর করা হয়, তাহলে জঙ্গি তৎপরতা সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব।

পুলিশে আপনার স্মরণীয় ঘটনা বলুন।
বিপ্লব কুমার সরকার: আমার কাছে এ যাবত সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে হেফাজতের ঘটনা। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের মুভমেন্টে সারাদিন রাজধানী জুড়ে চলেছে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সেইদিন প্রচণ্ড শঙ্কায় ছিলো, ভুগছিল নিরাপত্তাহীনতায়। ওই রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজত কর্মীদের তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সে অপারেশনে অংশ নেয়ার। সে রাতে তাদেরকে সরাতে না পারলে হয়তো এদেশের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হতো। ওই দিন আমরা ব্যর্থ হলে পুরো রাষ্ট্রকে সাফার করতে হতো, নতুন করে ইতিহাস লিখতে হতো। এদেশ হয়তো আফগানিস্তান হয়ে যেতো। আমি সে উচ্ছেদ অভিযানে যুক্ত ছিলাম। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অপারেশন।

বাংলাদেশ পুলিশকে কতো উচ্চতায় দেখতে চান?
বিপ্লব কুমার সরকার: আমি চাই পুলিশ শব্দটাই মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠবে। মানুষ তার যেকোনো প্রয়োজনে মন থেকে ভালোবেসে পুলিশের কাছে যাবে। পুলিশ আসছে এতে অন্যায়কারী, সন্ত্রাসীরা পালাবে। পুলিশ ও আস্থা শব্দ দুটি একে অপরের প্রতিশব্দ হয়ে উঠবে। আমি পুলিশকে সে জায়গাতেই দেখতে চাই।

আপনি ও বাংলাদেশ পুলিশের জন্য শুভকামনা। সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
বিপ্লব কুমার সরকার: বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও ভালো কাজের সঙ্গে থাকবেন বলে প্রত্যাশা করি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর