ঢাকা ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাকালুকি হাওর নিয়ে কিছু কথা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
  • ২৭৪ বার

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্হিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এর বিস্তৃতি। হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। উল্লেখ্য হাওর শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘সাগর’এর বিকৃত রূপ বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ হাওরের উৎপত্তি হয়েছে এভাবে – সাগর>সাওর>হাওর।

হাওরের নামকরণ নিয়ে বেশক’টি জনশ্রুতি আছে। কথিত আছে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কালক্রমে এই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি’। এছাড়া বলা হয় প্রায় দু’হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। শোনা যায় বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে একটি উপজাতি বাস করত। ঐ এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’ – যা পরে ‘হাকালুকি’ নাম ধারণ করে। অপর একটি জনশ্রুতি মতে, একসময় হাওরের কাছাকাছি বসবাসকারী কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’- যার অর্থ লুকানো সম্পদ।

হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল রয়েছে। বিলগুলিতে প্রায় সারাবছর পানি থাকে। হাওরের জলরাশির মূল প্রবাহ হলো জুরী ও পানাই নদী। এই বিলগুলি মৎস্য সম্পদের আধার। বছরে প্রায় ২৫০০টন মাছ উৎপাদন হয়। তবে যথেচ্ছভাবে মাছ ধরার কারণে দেশী জাতের রানী, তুরাল, রাঁচি, বাতাসি, গলদাচিংড়ি, বাঘমাছ, চিতল ইত্যাদি মাছ আর এখন হাওরে পাওয়া যায় না।

হাওরে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি জলচর পাখির। গত শীত মৌসুমে ৪৮ প্রজাতির প্রায় ১ লাখ পাখি এসেছিল। এসব অতিথি পাখির মধ্যে ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, বালি হাঁস, গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল, রাজ সরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পানকৌড়ি. বেগুনী কালিম, মেটেমাথা টিটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে বিদেশী আর্থিক সহায়তায় সরকারের ঈডইগচ প্রজেক্ট হাওর এলাকায় চলমান রয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করে জীবকূলকে রক্ষার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।

আসছে শীতে আপনিও বেড়িয়ে যেতে পারেন হাকালুকি হাওর। প্রকৃতির সান্নিধ্য নিজেকে করে নিতে পারেন সজীব সতেজ। কুলাউড়ায় অবস্হিত ঈডইগচ এর অফিসে যোগাযোগ করে হাওরে যেতে পারেন। এছাড়া বড়লেখা থেকে কানুনগো বাজার হয়েও ঘুরে আসতে পারেন এই হাওর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাকালুকি হাওর নিয়ে কিছু কথা

আপডেট টাইম : ০৩:২৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্হিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এর বিস্তৃতি। হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। উল্লেখ্য হাওর শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘সাগর’এর বিকৃত রূপ বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ হাওরের উৎপত্তি হয়েছে এভাবে – সাগর>সাওর>হাওর।

হাওরের নামকরণ নিয়ে বেশক’টি জনশ্রুতি আছে। কথিত আছে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কালক্রমে এই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি’। এছাড়া বলা হয় প্রায় দু’হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। শোনা যায় বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে একটি উপজাতি বাস করত। ঐ এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’ – যা পরে ‘হাকালুকি’ নাম ধারণ করে। অপর একটি জনশ্রুতি মতে, একসময় হাওরের কাছাকাছি বসবাসকারী কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’- যার অর্থ লুকানো সম্পদ।

হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল রয়েছে। বিলগুলিতে প্রায় সারাবছর পানি থাকে। হাওরের জলরাশির মূল প্রবাহ হলো জুরী ও পানাই নদী। এই বিলগুলি মৎস্য সম্পদের আধার। বছরে প্রায় ২৫০০টন মাছ উৎপাদন হয়। তবে যথেচ্ছভাবে মাছ ধরার কারণে দেশী জাতের রানী, তুরাল, রাঁচি, বাতাসি, গলদাচিংড়ি, বাঘমাছ, চিতল ইত্যাদি মাছ আর এখন হাওরে পাওয়া যায় না।

হাওরে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি জলচর পাখির। গত শীত মৌসুমে ৪৮ প্রজাতির প্রায় ১ লাখ পাখি এসেছিল। এসব অতিথি পাখির মধ্যে ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, বালি হাঁস, গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল, রাজ সরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পানকৌড়ি. বেগুনী কালিম, মেটেমাথা টিটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে বিদেশী আর্থিক সহায়তায় সরকারের ঈডইগচ প্রজেক্ট হাওর এলাকায় চলমান রয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করে জীবকূলকে রক্ষার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।

আসছে শীতে আপনিও বেড়িয়ে যেতে পারেন হাকালুকি হাওর। প্রকৃতির সান্নিধ্য নিজেকে করে নিতে পারেন সজীব সতেজ। কুলাউড়ায় অবস্হিত ঈডইগচ এর অফিসে যোগাযোগ করে হাওরে যেতে পারেন। এছাড়া বড়লেখা থেকে কানুনগো বাজার হয়েও ঘুরে আসতে পারেন এই হাওর।