ঢাকা ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লন্ডনে ইউনূস–তারেকের বৈঠক বদলে দেবে রাজনীতির হিসাব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫২:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • ১৭ বার

লন্ডনে ১৩ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে হোটেল ডোরচেস্টারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানে একটি ‘নতুন ডাইমেনশন’ বা মাত্রা উন্মোচিত হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরও তেমনটাই মনে করছে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনসহ সব ইস্যুতে আলোচনার  সুযোগ আছে।

গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সাম্প্রতিক ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান। রমজানে নির্বাচনী প্রচারণা, এপ্রিলের গরম ও ঝড়-বৃষ্টির আবহাওয়াকে নির্বাচনের জন্য অনুপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘ডিসেম্বরে কিংবা তারও আগে নির্বাচন হওয়া খুবই সম্ভব। আমরা কালকেই নির্বাচন করতে পারি, বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়, নির্বাচন করাই বিএনপির গত ১৭ বছরের মূল লক্ষ্য।’

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান নির্বাচনের তারিখ। তার আগপর্যন্ত সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে। ‘চাপ অব্যাহত’ রাখতে সরকারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়াবে না বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এমন পরামর্শ দিয়েছেন। ঈদুল আজহার দিন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি নেতাদের উদ্দেশে সংঘাতে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আরও কৌশলী অবস্থানে থাকার কথা বলেন।

তাই প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের আমন্ত্রণে তারেক রহমানের এ বৈঠক শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন বা ছোট একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ কাঠামো, সংবিধান সংস্কার, মানবিক করিডর, বন্দরব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে। বিএনপি মনে করে, মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে এ বৈঠকের ফলাফলের ওপর। মির্জা ফখরুলের মতে, ‘এ বৈঠক থেকে বড় কিছু শুরু হতে পারে। এটা হতে পারে একটা টার্নিং পয়েন্ট।’

সব মিলিয়ে নির্বাচনের সময়সীমা ঘিরে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি, এমন পটভূমিতে বৈঠক হলে সেই দূরত্ব অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী বলেন, “এ বৈঠক রাজনৈতিক মেরূকরণ ভাঙার একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে। নতুন কৌশল, সম্ভাব্য সমঝোতা ও নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি ‘বড় পরিবর্তন’ ঘটতে পারে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনার সঙ্গে বিএনপির মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপির অবস্থান হলো, বড়মাপের সংস্কার নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে চলছে যে বৃহদায়তন লটবহর সংবলিত সরকার, তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই তাদের বিশ্বাস।

বহু বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি নিশ্চয়ই শিগগির ফিরবেন।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ।’

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলে আসছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে। কোরবানি ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তার নতুন ঘোষণা হলো, এপ্রিল মাসের প্রথমার্থে যেকোনো দিন ভোট হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে সরকারপ্রধানের ভাষণে ওই ঘোষণার পর বিভিন্ন দল মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে দলীয় ফোরামে এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’

এদিকে ঈদের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সঠিক সময় নয়। এপ্রিল মাস প্রচণ্ড গরম, ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ওই সময় রোজার পরপরই পাবলিক পরীক্ষা আছে। সময়টা খুব চিন্তা করে দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয় না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা করতে হবে রোজার মাসে, যেটা ডিফিকাল্ট হবে।’ এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েও নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থানের কথা জানান। বিএনপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সংগতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে। দীর্ঘ ভাষণে তিনি বন্দর, করিডর ইত্যাদি এমন সব বিষয় অবতারণা করেছেন, যা তারই ভাষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি ‘ম্যান্ডেটের’ মধ্যে পড়ে না।” ভাষণে তিনি শব্দচয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

আলোচনায় জাতীয় নির্বাচনসহ সব ইস্যুর সুযোগ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার আসন্ন বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনসহ বাংলাদেশের সমসাময়িক যেকোনো ইস্যু উঠে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এ বহুল আলোচিত বৈঠকটি হবে।

প্রেস সচিব বলেন, “এ বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি নেই। তারেক রহমান বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তাদের আলোচনায় জাতীয় নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক সংকট, ‘জুলাই সনদ’সহ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেতে পারে।”

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বহুমুখী সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সফরসূচির অংশ হিসেবে এ বৈঠকটি হবে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিশেষভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ও কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রাথমিক স্তরের মতবিনিময় হতে পারে।

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার সকালে লন্ডনে পৌঁছেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

লন্ডনে ইউনূস–তারেকের বৈঠক বদলে দেবে রাজনীতির হিসাব

আপডেট টাইম : ১১:৫২:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

লন্ডনে ১৩ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে হোটেল ডোরচেস্টারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানে একটি ‘নতুন ডাইমেনশন’ বা মাত্রা উন্মোচিত হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরও তেমনটাই মনে করছে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনসহ সব ইস্যুতে আলোচনার  সুযোগ আছে।

গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সাম্প্রতিক ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান। রমজানে নির্বাচনী প্রচারণা, এপ্রিলের গরম ও ঝড়-বৃষ্টির আবহাওয়াকে নির্বাচনের জন্য অনুপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘ডিসেম্বরে কিংবা তারও আগে নির্বাচন হওয়া খুবই সম্ভব। আমরা কালকেই নির্বাচন করতে পারি, বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়, নির্বাচন করাই বিএনপির গত ১৭ বছরের মূল লক্ষ্য।’

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান নির্বাচনের তারিখ। তার আগপর্যন্ত সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে। ‘চাপ অব্যাহত’ রাখতে সরকারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়াবে না বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এমন পরামর্শ দিয়েছেন। ঈদুল আজহার দিন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি নেতাদের উদ্দেশে সংঘাতে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আরও কৌশলী অবস্থানে থাকার কথা বলেন।

তাই প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের আমন্ত্রণে তারেক রহমানের এ বৈঠক শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন বা ছোট একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ কাঠামো, সংবিধান সংস্কার, মানবিক করিডর, বন্দরব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে। বিএনপি মনে করে, মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে এ বৈঠকের ফলাফলের ওপর। মির্জা ফখরুলের মতে, ‘এ বৈঠক থেকে বড় কিছু শুরু হতে পারে। এটা হতে পারে একটা টার্নিং পয়েন্ট।’

সব মিলিয়ে নির্বাচনের সময়সীমা ঘিরে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি, এমন পটভূমিতে বৈঠক হলে সেই দূরত্ব অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী বলেন, “এ বৈঠক রাজনৈতিক মেরূকরণ ভাঙার একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে। নতুন কৌশল, সম্ভাব্য সমঝোতা ও নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি ‘বড় পরিবর্তন’ ঘটতে পারে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনার সঙ্গে বিএনপির মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপির অবস্থান হলো, বড়মাপের সংস্কার নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে চলছে যে বৃহদায়তন লটবহর সংবলিত সরকার, তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই তাদের বিশ্বাস।

বহু বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি নিশ্চয়ই শিগগির ফিরবেন।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ।’

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলে আসছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে। কোরবানি ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তার নতুন ঘোষণা হলো, এপ্রিল মাসের প্রথমার্থে যেকোনো দিন ভোট হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে সরকারপ্রধানের ভাষণে ওই ঘোষণার পর বিভিন্ন দল মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে দলীয় ফোরামে এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’

এদিকে ঈদের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সঠিক সময় নয়। এপ্রিল মাস প্রচণ্ড গরম, ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ওই সময় রোজার পরপরই পাবলিক পরীক্ষা আছে। সময়টা খুব চিন্তা করে দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয় না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা করতে হবে রোজার মাসে, যেটা ডিফিকাল্ট হবে।’ এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েও নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থানের কথা জানান। বিএনপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সংগতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে। দীর্ঘ ভাষণে তিনি বন্দর, করিডর ইত্যাদি এমন সব বিষয় অবতারণা করেছেন, যা তারই ভাষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি ‘ম্যান্ডেটের’ মধ্যে পড়ে না।” ভাষণে তিনি শব্দচয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

আলোচনায় জাতীয় নির্বাচনসহ সব ইস্যুর সুযোগ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার আসন্ন বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনসহ বাংলাদেশের সমসাময়িক যেকোনো ইস্যু উঠে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এ বহুল আলোচিত বৈঠকটি হবে।

প্রেস সচিব বলেন, “এ বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি নেই। তারেক রহমান বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তাদের আলোচনায় জাতীয় নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক সংকট, ‘জুলাই সনদ’সহ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেতে পারে।”

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বহুমুখী সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সফরসূচির অংশ হিসেবে এ বৈঠকটি হবে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিশেষভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ও কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রাথমিক স্তরের মতবিনিময় হতে পারে।

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার সকালে লন্ডনে পৌঁছেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।