ঢাকা ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার ইসরায়েলি দুই উগ্রপন্থি মন্ত্রীর ওপর ৪ দেশের নিষেধাজ্ঞা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • ১০ বার

ব্রিটেন ও তার মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলের দুই উগ্রপন্থি মন্ত্রী, ইতামার বেন-গাভির এবং বেজালেল স্মোটরিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, এই দুই মন্ত্রী ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বারবার সহিংসতা উসকানির জন্য দায়ী। খবর রয়টার্স।

কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে মিল রেখে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন-গাভির, যিনি ওয়েস্ট ব্যাংকের বসতি স্থাপনকারী এবং অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচের সম্পদ ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইতামার বেন-গাভির ও বেজালেল স্মোটরিচ চরমপন্থি সহিংসতা কার্যক্রমে উসকানি এবং প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনায় জড়িত। এই ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি এবং দায়িত্বশীলদের দায়বদ্ধ করেছি।

অপরদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল সরকার আগামী সপ্তাহের শুরুতে একটি বিশেষ সভা করে এই ‘গ্রহণযোগ্য নয় এমন সিদ্ধান্তের’ বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবে।

এদিকে অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচ হেব্রন হিলসে একটি নতুন বসতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের এই পদক্ষেপকে অবজ্ঞাসূচক ভাষায় উল্লেখ করে বলেছেন, ব্রিটেন আমাদের ভূমির জন্মভূমিতে বসতি গড়া থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেছে, আমরা সেটা মেনে নেব না। আমরা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাব।

ব্রিটেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর গাজায় মানবিক সাহায্যের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা গাজার জন্য এই অবরোধের কারণে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের সতর্কতা দিয়েছেন।

এই নিষেধাজ্ঞা ইসরায়েলের উগ্রপন্থি নীতিমালা ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের কড়া প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বেন-গাভির বর্তমানে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়কমন্ত্রী এবং স্মোটরিচ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। উভয়েই চরমপন্থি ও মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের জন্য আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচিত।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাজ্যে তাদের যে কোনো সম্পদ জব্দ করা হবে এবং ব্রিটেনে প্রবেশাধিকার বাতিল করা হবে।

এর আগে গত মে মাসে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি, পশ্চিমতীরের উগ্র সেটেলারদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর সামরিক অভিযান চালানোর প্রতিবাদে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু গাজার জনগণকে এক কোণায় ঠেলে দিচ্ছেন এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছেন না।

অপরদিকে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সম্পর্কে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্মোটরিচ গাজাকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন, এমনকি ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের কথাও বলেছেন। তিনি ইসরায়েলি সেনাদের মাধ্যমে গাজা ‘পরিষ্কার’ করার কথা বলেছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি- এটি চরম উগ্রপন্থা, এটি বিপজ্জনক, এটি ভয়ংকর। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জবাবদিহির চাপ তৈরি করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ইসরায়েলি দুই উগ্রপন্থি মন্ত্রীর ওপর ৪ দেশের নিষেধাজ্ঞা

আপডেট টাইম : ১২:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

ব্রিটেন ও তার মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলের দুই উগ্রপন্থি মন্ত্রী, ইতামার বেন-গাভির এবং বেজালেল স্মোটরিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, এই দুই মন্ত্রী ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বারবার সহিংসতা উসকানির জন্য দায়ী। খবর রয়টার্স।

কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে মিল রেখে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন-গাভির, যিনি ওয়েস্ট ব্যাংকের বসতি স্থাপনকারী এবং অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচের সম্পদ ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইতামার বেন-গাভির ও বেজালেল স্মোটরিচ চরমপন্থি সহিংসতা কার্যক্রমে উসকানি এবং প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনায় জড়িত। এই ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি এবং দায়িত্বশীলদের দায়বদ্ধ করেছি।

অপরদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল সরকার আগামী সপ্তাহের শুরুতে একটি বিশেষ সভা করে এই ‘গ্রহণযোগ্য নয় এমন সিদ্ধান্তের’ বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবে।

এদিকে অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচ হেব্রন হিলসে একটি নতুন বসতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের এই পদক্ষেপকে অবজ্ঞাসূচক ভাষায় উল্লেখ করে বলেছেন, ব্রিটেন আমাদের ভূমির জন্মভূমিতে বসতি গড়া থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেছে, আমরা সেটা মেনে নেব না। আমরা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাব।

ব্রিটেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর গাজায় মানবিক সাহায্যের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা গাজার জন্য এই অবরোধের কারণে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের সতর্কতা দিয়েছেন।

এই নিষেধাজ্ঞা ইসরায়েলের উগ্রপন্থি নীতিমালা ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের কড়া প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বেন-গাভির বর্তমানে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়কমন্ত্রী এবং স্মোটরিচ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। উভয়েই চরমপন্থি ও মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের জন্য আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচিত।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাজ্যে তাদের যে কোনো সম্পদ জব্দ করা হবে এবং ব্রিটেনে প্রবেশাধিকার বাতিল করা হবে।

এর আগে গত মে মাসে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি, পশ্চিমতীরের উগ্র সেটেলারদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর সামরিক অভিযান চালানোর প্রতিবাদে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু গাজার জনগণকে এক কোণায় ঠেলে দিচ্ছেন এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছেন না।

অপরদিকে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সম্পর্কে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্মোটরিচ গাজাকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন, এমনকি ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের কথাও বলেছেন। তিনি ইসরায়েলি সেনাদের মাধ্যমে গাজা ‘পরিষ্কার’ করার কথা বলেছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি- এটি চরম উগ্রপন্থা, এটি বিপজ্জনক, এটি ভয়ংকর। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জবাবদিহির চাপ তৈরি করবে।