ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হজে তালবিয়া পাঠের বিধান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • ২৯ বার
পবিত্র হজে লাখো হাজির কণ্ঠে মুখরিত ধ্বনি ‘তালবিয়া’ নামে পরিচিত। তালবিয়া হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা, অর্থাৎ আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি উপস্থিত। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই, আর রাজত্বও আপনার; আপনার কোনো শরিক নেই।’ হজের সময় এই তালবিয়া পাঠ করা জরুরি। তালবিয়া মুখে উচ্চারণ করে পড়া শর্ত। মুখে না বলে যদি কেউ অন্তরে (মনে মনে) বলে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বোবা হলে যদি সম্ভব হয় তবে তালবিয়া পড়ার অনুকরণে ঠোঁট ও জিহ্বা নাড়াবে। তালবিয়া একবার পড়া শর্ত, তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব।
তালবিয়া পড়ার মাঝে কথা বলবে না, তবে সালামের উত্তর দিতে পারবে। অবশ্য তালবিয়া পাঠকারীকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। এ ছাড়া তালবিয়ার উক্ত শব্দগুলোই পড়া সুন্নত, কিন্তু কেউ যদি ইহরামের নিয়তের পর তালবিয়া না পড়ে আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অথবা অন্য কোনো জিকির পড়ে, তবে তা তালবিয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে এবং এর দ্বারাও তার ইহরাম পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ইহরামের নিয়তের পর তালবিয়া অথবা অন্য কোনো জিকির না পড়ে মিকাত অতিক্রম করে, তবে তার ওপর দম ওয়াজিব হবে।
পুরুষের জন্য তালবিয়া উচ্চস্বরে পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু আওয়াজ বেশি উচ্চ করবে না এবং চিৎকার করেও বলবে না। এত উচ্চ আওয়াজে পড়া নিষেধ, যার দ্বারা নিজের বা অন্যের কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তির কষ্ট হয় অথবা নামাজি ও তাওয়াফকারীর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া কয়েকজন মিলে সুর ধরে একসঙ্গে তালবিয়া না পড়ে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে তালবিয়া পড়বে। মহিলাদের জন্য উচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পড়া নিষেধ। কাজেই মহিলারা অনুচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পড়বে, যেন পরপুরুষের কানে আওয়াজ না পৌঁছে।
তালবিয়া তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব। তালবিয়া অধিক পরিমাণে পড়া এবং যখনই পড়বে তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব। সফরের সময় অধিক পরিমাণে তালবিয়া পড়বেন। বিশেষত ফরজ নামাজের পর, সকালে, সন্ধ্যায়, ঘুমানোর সময়, ঘুম থেকে জেগে, বাইরে যাওয়ার সময়, ভেতরে প্রবেশের সময়, কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে, গাড়িতে ওঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময়, ওপরে উঠার সময় ও ওপর থেকে নামার সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব।
হাদিস শরিফে বর্ণিত তালবিয়ার শব্দগুলো থেকে কোনো শব্দ কম করা মাকরুহ, অবশ্য উক্ত শব্দগুলোর শেষে কিছু শব্দ বাড়িয়ে বলা যেতে পারে, তবে হাদিসে বর্ণিত উক্ত শব্দগুলোর মাঝে কোনো শব্দ বাড়ানো ঠিক না। ওমরাহর মধ্যে তাওয়াফের জন্য ‘ইসতিলাম’ অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া বা ইশারা করার আগপর্যন্ত তালবিয়া পড়া যায়। ইসতিলাম শুরুর আগেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করতে হবে। আর হজের মধ্যে ১০ জিলহজ রামি বা কঙ্কর নিক্ষেপের আগেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। অবশ্য যদি কেউ সূর্যাস্ত পর্যন্ত রামি না করে, তবে সূর্যাস্তের পর আর তালবিয়া পড়বে না। আর যদি কেউ ইহরামের পর বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওমরাহ বা হজের উদ্দেশ্যে যেতে না পারে, তবে সে তার পক্ষ থেকে হারামের সীমানার ভেতরে ‘হাদি’ বা পশু জবাই করা পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে পারবে, পশু জবাই হলেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হজে তালবিয়া পাঠের বিধান

আপডেট টাইম : ১০:২৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
পবিত্র হজে লাখো হাজির কণ্ঠে মুখরিত ধ্বনি ‘তালবিয়া’ নামে পরিচিত। তালবিয়া হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা, অর্থাৎ আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি উপস্থিত। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই, আর রাজত্বও আপনার; আপনার কোনো শরিক নেই।’ হজের সময় এই তালবিয়া পাঠ করা জরুরি। তালবিয়া মুখে উচ্চারণ করে পড়া শর্ত। মুখে না বলে যদি কেউ অন্তরে (মনে মনে) বলে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বোবা হলে যদি সম্ভব হয় তবে তালবিয়া পড়ার অনুকরণে ঠোঁট ও জিহ্বা নাড়াবে। তালবিয়া একবার পড়া শর্ত, তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব।
তালবিয়া পড়ার মাঝে কথা বলবে না, তবে সালামের উত্তর দিতে পারবে। অবশ্য তালবিয়া পাঠকারীকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। এ ছাড়া তালবিয়ার উক্ত শব্দগুলোই পড়া সুন্নত, কিন্তু কেউ যদি ইহরামের নিয়তের পর তালবিয়া না পড়ে আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অথবা অন্য কোনো জিকির পড়ে, তবে তা তালবিয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে এবং এর দ্বারাও তার ইহরাম পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ইহরামের নিয়তের পর তালবিয়া অথবা অন্য কোনো জিকির না পড়ে মিকাত অতিক্রম করে, তবে তার ওপর দম ওয়াজিব হবে।
পুরুষের জন্য তালবিয়া উচ্চস্বরে পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু আওয়াজ বেশি উচ্চ করবে না এবং চিৎকার করেও বলবে না। এত উচ্চ আওয়াজে পড়া নিষেধ, যার দ্বারা নিজের বা অন্যের কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তির কষ্ট হয় অথবা নামাজি ও তাওয়াফকারীর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া কয়েকজন মিলে সুর ধরে একসঙ্গে তালবিয়া না পড়ে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে তালবিয়া পড়বে। মহিলাদের জন্য উচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পড়া নিষেধ। কাজেই মহিলারা অনুচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পড়বে, যেন পরপুরুষের কানে আওয়াজ না পৌঁছে।
তালবিয়া তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব। তালবিয়া অধিক পরিমাণে পড়া এবং যখনই পড়বে তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব। সফরের সময় অধিক পরিমাণে তালবিয়া পড়বেন। বিশেষত ফরজ নামাজের পর, সকালে, সন্ধ্যায়, ঘুমানোর সময়, ঘুম থেকে জেগে, বাইরে যাওয়ার সময়, ভেতরে প্রবেশের সময়, কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে, গাড়িতে ওঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময়, ওপরে উঠার সময় ও ওপর থেকে নামার সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব।
হাদিস শরিফে বর্ণিত তালবিয়ার শব্দগুলো থেকে কোনো শব্দ কম করা মাকরুহ, অবশ্য উক্ত শব্দগুলোর শেষে কিছু শব্দ বাড়িয়ে বলা যেতে পারে, তবে হাদিসে বর্ণিত উক্ত শব্দগুলোর মাঝে কোনো শব্দ বাড়ানো ঠিক না। ওমরাহর মধ্যে তাওয়াফের জন্য ‘ইসতিলাম’ অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া বা ইশারা করার আগপর্যন্ত তালবিয়া পড়া যায়। ইসতিলাম শুরুর আগেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করতে হবে। আর হজের মধ্যে ১০ জিলহজ রামি বা কঙ্কর নিক্ষেপের আগেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। অবশ্য যদি কেউ সূর্যাস্ত পর্যন্ত রামি না করে, তবে সূর্যাস্তের পর আর তালবিয়া পড়বে না। আর যদি কেউ ইহরামের পর বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওমরাহ বা হজের উদ্দেশ্যে যেতে না পারে, তবে সে তার পক্ষ থেকে হারামের সীমানার ভেতরে ‘হাদি’ বা পশু জবাই করা পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে পারবে, পশু জবাই হলেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে।