আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে উদযাপিত হলো অমর কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৮৩) এবং স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭) প্রাপ্ত শওকত ওসমান শুধু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতেই সীমাবদ্ধ নন; বরং পাঠকের চেতনায় তিনি চিরস্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ডঃ সুকোমল বড়ুয়া। সভার প্রধান আলোচক ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ এবং সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘অমর কথাশিল্পী ওসমান স্মৃতি পরিষদের’ সাধারণ সম্পাদক এবং রয়েল ইউনিভার্সিটির ডিন অধ্যাপক ড. দিপু সিদ্দিকী।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বলেন, “শওকত ওসমান কেবল কথাশিল্পী নন, বরং জাতির সংস্কারক, আধুনিক বোধসম্পন্ন এক অন্তর্দর্শী মানুষ। তাঁকে দেখতে হবে আমাদের অন্তর্দৃষ্টির আলোয়, তাঁকে নিয়ে গভীর গবেষণা করতে হবে।” তিনি শওকত ওসমান ইনস্টিটিউট নির্মাণ, ঢাকায় একটি সড়ক তাঁর নামে নামকরণ এবং তাঁর রচনাবলী পুনঃপ্রকাশের জন্য বাংলা একাডেমির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “ওসমানের অনেক লেখা আমরা হারিয়ে ফেলেছি; সেগুলো গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করা জরুরি।”
প্রধান আলোচক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, “শওকত ওসমানের লেখার মূল উপজীব্য ছিল সুচিন্তিত মানুষের মুক্তি। তিনি মানুষের মানবিক সত্তাকে যেভাবে চিহ্নিত করেছেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক।”
জানেসার ওসমান অনুষ্ঠানে তাঁর পিতার স্মৃতিচারণ করে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করেন।
অধ্যাপক ড. দিপু সিদ্দিকী বলেন, “শওকত ওসমানের লেখার কেন্দ্রে ছিল মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক, শোষণের রূপ, নৈতিক সংকট এবং মানবিক প্রতিরোধ। তাঁর লেখনীতে উঠে এসেছে রাজনৈতিক বন্দির মানসিক অবস্থা ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের করুণ চিত্র।” তিনি আরও বলেন, “যখন চিন্তার স্বাধীনতা সংকুচিত, যখন সাহিত্য ব্যবহৃত হচ্ছে কেবল মুখোশ পরানোর অস্ত্রে, তখন শওকত ওসমান আমাদের বিবেক, সাহস ও নৈতিকতার শিক্ষক হয়ে ওঠেন। তাঁর কলম ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেছে প্রশ্ন ও দিকনির্দেশনা।” তিনি উল্লেখ করেন, “তাঁকে স্মরণ মানে শুধু একজন লেখককে নয়; বরং সত্য, মানবতা এবং মুক্তচিন্তার পক্ষকে স্মরণ করা।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে শওকত ওসমানের জীবনীভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর কবিতা আবৃত্তি করেন কবি রিমা চিশতী, আনিসুর রহমান, রফিক চৌধুরী ও অধ্যাপক দিপু সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানের শেষাংশে শওকত ওসমানের কালজয়ী উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন বাচিক শিল্পী আনিসুর রহমান, রিমা চিশতী, কবিরাতুলসহ অন্যান্য শিল্পীবৃন্দ।
এই আয়োজন ছিল কেবল একটি স্মরণসভা নয়; বরং এক গভীর সাহিত্য-সম্মাননা, যেখানে বক্তারা শওকত ওসমানকে শুধুমাত্র সাহিত্যিক হিসেবে নয়, বরং এক বিবেকবান জাতিসংঘঠক হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।