ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট জেট ফুয়েলের মূল্য হ্রাসে কমবে উড়োজাহাজ ভাড়া আমার সোনার বাংলা’ যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে যা ঘটলো, তাতে হতাশ হয়েছি: আসিফ মাহমুদ আমি কখনই ক্রিকেট খেলা শিখিনি, এখন চেষ্টা করছি: তিশা মাদক-অপকর্মের আখড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগেভাগেই ঢাকায় আসবেন হামজা উপদেষ্টা মাহফুজকে লাঞ্ছিত করায় হাসনাতের ক্ষোভ জনদাবির মুখে ছাত্র উপদেষ্টাদের ঠেলে দেওয়ার আচরণ সন্দেহজনক বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শওকত ওসমানের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা বৃষ্টিতে ভিজে শাহবাগে আন্দোলন করছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা ইউক্রেন যুদ্ধ তুরস্কে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান ট্রাম্প

কুড়িগ্রামে তৈরি হচ্ছে মাছের পুরি, শিঙাড়া ও চপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩১:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • ১০ বার
কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুরি, শিঙাড়া, চপ, পাকোরাসহ কয়েক প্রকার মুখরোচক খাবার। ব্যতিক্রমী এই খাবার পেয়ে খুশি ক্রেতারা, আর বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হচ্ছে।

মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হলেও ফাস্টফুডের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এই তকমা। শহরের কর্মময় ব্যস্ততায় মাছ কাটা, ধোয়া আর রান্নার অলসতায় অনেকেই ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছেন।

এতে করে মানুষের শরীরে ঘাটতি হচ্ছে আমিষের। মাছ আমিষ জাতীয় খাবার। শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার। আর মাছকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে মাছের তৈরি মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার।
আর এসব খাবার পাওয়া যাচ্ছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের দাশেরহাট বাজারে সিরাজুলের চায়ের দোকানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজুলের চায়ের দোকানে মাছের আঁশ ও কাঁটা ছাড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফিশ ফিল, ফিশ পাকোরা, ফিশ ফিঙ্গার, শিঙাড়া, পুরি, ফিশ সমুচা, ফ্রাই, ফিশ বলসহ হরেক রকমের মুখরোচক খাবার। তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, রুইসহ স্বল্প মূল্যের মাছ এবং ফিশ পাউডার আর মসলা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছের তৈরি ফাস্টফুড খাবার। এই দোকানে ছোট-বড় অনেকে এসেছেন মাছের তৈরি ফাস্টফুড খেতে।

শিশুসহ নানা বয়সীদের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে স্বল্প মূল্যে এসব মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার পেয়ে খুশি ক্রেতারা। ব্যতিক্রমী এই ফাস্টফুড খাবার ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকায় বেশ সারা ফেলেছে।শিক্ষার্থী নুসরাত বলেন, ‘চায়ের দোকান বা হোটেল থেকে আমরা সাধারণত রুটি বা আলুর তৈরি শিঙাড়া, সমুচা, চিপস এগুলো নিয়ে টিফিনে খাই। কিন্তু আমাদের দাশেরহাট বাজারে মাছের তৈরি ফিশ ফিঙ্গার, চপ পাওয়ায় সেগুলো টিফিন হিসেবে নিয়ে খাই।’

শিক্ষার্থী রেশমা খাতুন বলেন, ‘আমি বাসায় তরকারি হিসেবে খাই না কাঁটার ভয়ে।

কিন্তু মাছের এই ফাস্টফুডে কোনো আঁশ বা কাঁটা নেই। খেতেও বেশ সুস্বাদু।’অভিভাবক বুলবুলি আকতার বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন খাবারগুলোর প্রতি আগ্রহী শিশুরা। তাদের জন্য এই মাছের ফাস্টফুড খাবারটি প্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাড়িতে পরিবারের জন্য আবার অনেকেই টিফিন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে এই ফাস্টফুড। স্থানীয়ভাবে মাছের এই ফাস্টফুডগুলো আরও বেশি করে অন্যান্য দোকানেও যেন পাওয়া যায় সেই উদ্যোগ নেয়া দরকার।

ক্রেতা মজিবর রহমান বলেন, আগে তো ১০ টাকা দিয়ে নাস্তা খেতাম আলুর সিঙ্গারা বা সমুচা। আর এখন ১৫ টাকা দিয়ে সিঙ্গারা ও সমুচা খাই। দাম বেশি হলেও এটা খেতে বেশ স্বাদ পাওয়া যায়।

উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আরডিআরএস বাংলাদেশের তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথম মাছের তৈরি ফাস্টফুড বানাচ্ছি। এতে বেশ সারা ফেলেছে এলাকায়। প্রতিদিন মানুষজন মাছের ফাস্টফুড খেতে আসছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রয়েছে ১৫-৩০টাকা। এতে করে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে এবং লাভও ভালো হচ্ছে।

উদ্যোক্তা জোবায়দুল হক বলেন, আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছের তৈরি ফাস্টফুড মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রি করি। দোকানের অন্যান্য ফাস্টফুডের খাবারের তুলনায় মাছের তৈরি ফাস্টফুডের বেশ ভালো চলছে।

আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, সারাবিশ্বে মাছ একটি জনপ্রিয় খাবার। মৎস্য ভ্যালু এডেড পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থয়ানে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহযোগিতায় জেলায় তিনজন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাছের ফাস্টফুড খাবারটি জেলায় বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় আগামীতে আরও উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান বলেন, ছোট মেধা বিকাশের জন্য মাছ অপরিহার্য খাবার। বাজারের সাধারণ মুখরোচক খাবারের পরিবর্তে মাছের তৈরি এসব খাবার খেলে সব বয়সের মানুষের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে বেশ ভূমিকা রাখবে। জেলায় মাছের ফাস্টফুড খাবার ছড়িয়ে দিতে জেলা মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। এতে করে জেলায় আরও মাছের উৎপাদন বাড়বে, চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট জেট ফুয়েলের মূল্য হ্রাসে কমবে উড়োজাহাজ ভাড়া

কুড়িগ্রামে তৈরি হচ্ছে মাছের পুরি, শিঙাড়া ও চপ

আপডেট টাইম : ০৭:৩১:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুরি, শিঙাড়া, চপ, পাকোরাসহ কয়েক প্রকার মুখরোচক খাবার। ব্যতিক্রমী এই খাবার পেয়ে খুশি ক্রেতারা, আর বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হচ্ছে।

মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হলেও ফাস্টফুডের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এই তকমা। শহরের কর্মময় ব্যস্ততায় মাছ কাটা, ধোয়া আর রান্নার অলসতায় অনেকেই ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছেন।

এতে করে মানুষের শরীরে ঘাটতি হচ্ছে আমিষের। মাছ আমিষ জাতীয় খাবার। শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার। আর মাছকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে মাছের তৈরি মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার।
আর এসব খাবার পাওয়া যাচ্ছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের দাশেরহাট বাজারে সিরাজুলের চায়ের দোকানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজুলের চায়ের দোকানে মাছের আঁশ ও কাঁটা ছাড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফিশ ফিল, ফিশ পাকোরা, ফিশ ফিঙ্গার, শিঙাড়া, পুরি, ফিশ সমুচা, ফ্রাই, ফিশ বলসহ হরেক রকমের মুখরোচক খাবার। তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, রুইসহ স্বল্প মূল্যের মাছ এবং ফিশ পাউডার আর মসলা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছের তৈরি ফাস্টফুড খাবার। এই দোকানে ছোট-বড় অনেকে এসেছেন মাছের তৈরি ফাস্টফুড খেতে।

শিশুসহ নানা বয়সীদের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে স্বল্প মূল্যে এসব মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার পেয়ে খুশি ক্রেতারা। ব্যতিক্রমী এই ফাস্টফুড খাবার ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকায় বেশ সারা ফেলেছে।শিক্ষার্থী নুসরাত বলেন, ‘চায়ের দোকান বা হোটেল থেকে আমরা সাধারণত রুটি বা আলুর তৈরি শিঙাড়া, সমুচা, চিপস এগুলো নিয়ে টিফিনে খাই। কিন্তু আমাদের দাশেরহাট বাজারে মাছের তৈরি ফিশ ফিঙ্গার, চপ পাওয়ায় সেগুলো টিফিন হিসেবে নিয়ে খাই।’

শিক্ষার্থী রেশমা খাতুন বলেন, ‘আমি বাসায় তরকারি হিসেবে খাই না কাঁটার ভয়ে।

কিন্তু মাছের এই ফাস্টফুডে কোনো আঁশ বা কাঁটা নেই। খেতেও বেশ সুস্বাদু।’অভিভাবক বুলবুলি আকতার বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন খাবারগুলোর প্রতি আগ্রহী শিশুরা। তাদের জন্য এই মাছের ফাস্টফুড খাবারটি প্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাড়িতে পরিবারের জন্য আবার অনেকেই টিফিন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে এই ফাস্টফুড। স্থানীয়ভাবে মাছের এই ফাস্টফুডগুলো আরও বেশি করে অন্যান্য দোকানেও যেন পাওয়া যায় সেই উদ্যোগ নেয়া দরকার।

ক্রেতা মজিবর রহমান বলেন, আগে তো ১০ টাকা দিয়ে নাস্তা খেতাম আলুর সিঙ্গারা বা সমুচা। আর এখন ১৫ টাকা দিয়ে সিঙ্গারা ও সমুচা খাই। দাম বেশি হলেও এটা খেতে বেশ স্বাদ পাওয়া যায়।

উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আরডিআরএস বাংলাদেশের তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথম মাছের তৈরি ফাস্টফুড বানাচ্ছি। এতে বেশ সারা ফেলেছে এলাকায়। প্রতিদিন মানুষজন মাছের ফাস্টফুড খেতে আসছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রয়েছে ১৫-৩০টাকা। এতে করে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে এবং লাভও ভালো হচ্ছে।

উদ্যোক্তা জোবায়দুল হক বলেন, আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছের তৈরি ফাস্টফুড মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রি করি। দোকানের অন্যান্য ফাস্টফুডের খাবারের তুলনায় মাছের তৈরি ফাস্টফুডের বেশ ভালো চলছে।

আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, সারাবিশ্বে মাছ একটি জনপ্রিয় খাবার। মৎস্য ভ্যালু এডেড পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থয়ানে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহযোগিতায় জেলায় তিনজন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাছের ফাস্টফুড খাবারটি জেলায় বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় আগামীতে আরও উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান বলেন, ছোট মেধা বিকাশের জন্য মাছ অপরিহার্য খাবার। বাজারের সাধারণ মুখরোচক খাবারের পরিবর্তে মাছের তৈরি এসব খাবার খেলে সব বয়সের মানুষের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে বেশ ভূমিকা রাখবে। জেলায় মাছের ফাস্টফুড খাবার ছড়িয়ে দিতে জেলা মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। এতে করে জেলায় আরও মাছের উৎপাদন বাড়বে, চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।