মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হলেও ফাস্টফুডের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এই তকমা। শহরের কর্মময় ব্যস্ততায় মাছ কাটা, ধোয়া আর রান্নার অলসতায় অনেকেই ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজুলের চায়ের দোকানে মাছের আঁশ ও কাঁটা ছাড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফিশ ফিল, ফিশ পাকোরা, ফিশ ফিঙ্গার, শিঙাড়া, পুরি, ফিশ সমুচা, ফ্রাই, ফিশ বলসহ হরেক রকমের মুখরোচক খাবার। তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, রুইসহ স্বল্প মূল্যের মাছ এবং ফিশ পাউডার আর মসলা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছের তৈরি ফাস্টফুড খাবার। এই দোকানে ছোট-বড় অনেকে এসেছেন মাছের তৈরি ফাস্টফুড খেতে।
শিক্ষার্থী রেশমা খাতুন বলেন, ‘আমি বাসায় তরকারি হিসেবে খাই না কাঁটার ভয়ে।
ক্রেতা মজিবর রহমান বলেন, আগে তো ১০ টাকা দিয়ে নাস্তা খেতাম আলুর সিঙ্গারা বা সমুচা। আর এখন ১৫ টাকা দিয়ে সিঙ্গারা ও সমুচা খাই। দাম বেশি হলেও এটা খেতে বেশ স্বাদ পাওয়া যায়।
উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আরডিআরএস বাংলাদেশের তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথম মাছের তৈরি ফাস্টফুড বানাচ্ছি। এতে বেশ সারা ফেলেছে এলাকায়। প্রতিদিন মানুষজন মাছের ফাস্টফুড খেতে আসছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রয়েছে ১৫-৩০টাকা। এতে করে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে এবং লাভও ভালো হচ্ছে।
উদ্যোক্তা জোবায়দুল হক বলেন, আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছের তৈরি ফাস্টফুড মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রি করি। দোকানের অন্যান্য ফাস্টফুডের খাবারের তুলনায় মাছের তৈরি ফাস্টফুডের বেশ ভালো চলছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, সারাবিশ্বে মাছ একটি জনপ্রিয় খাবার। মৎস্য ভ্যালু এডেড পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থয়ানে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহযোগিতায় জেলায় তিনজন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাছের ফাস্টফুড খাবারটি জেলায় বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় আগামীতে আরও উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান বলেন, ছোট মেধা বিকাশের জন্য মাছ অপরিহার্য খাবার। বাজারের সাধারণ মুখরোচক খাবারের পরিবর্তে মাছের তৈরি এসব খাবার খেলে সব বয়সের মানুষের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণে বেশ ভূমিকা রাখবে। জেলায় মাছের ফাস্টফুড খাবার ছড়িয়ে দিতে জেলা মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। এতে করে জেলায় আরও মাছের উৎপাদন বাড়বে, চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।