খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে হত-দরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণ নিয়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও দিনাজপুর সদর কাহারোল,খানসামা,বীরগঞ্চ,বিরামপুর,নবাবগঞ্জ সহ জেলার ১৩টি উপজেলায় ১০টাকা কেজী চাল হত দরিদ্রদের মাঝে বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরজমিনে এলাকায় গেলে আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রোস্তম আলীর স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, অন্যের ভিটায় ছোট একটা কুড়ে ঘরে কোন রকমে দুসন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করছি। তবু আমার ভাগ্যে ১০ টাকার চাউল জোটেনি। একই এলাকার বাবলু, নুরআলম, পাতিল বিক্রিতা হামিদ, মসলেম, মজিদুল, রশিদুল, আবুল হোসেন, শফিকুল, নুর আলম, মসলেম, আশরাফ, নাজিমদ্দিন, মো. শফি, বিধবা গোলেজা, বেকিপুলের কালিপদ, বানিয়া পাড়ার লক্ষী কান্ত গছাহার গ্রামের ভ্যান চালক ছাবিদুল, হামিদুল, রমজান, বুলবুল, আলীম, হামিদুল, ইউনুস, মকবুল, কানা ফারুক, আলীম, মান্নান অভিযোগ করে বলেন, তারা অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি করলে তাদের ভাগ্যেও হত-দরিদ্রর কার্ড জোটেনি।
অপরদিকে কার্ডধারীদের অনেকেই বিত্তবান, সরকারি চাকরিজীবী ও স্বচ্ছল পরিবারের লোক। এ ছাড়াও একই পরিবারে লোকদের নাম তালিকাভুক্ত করে হত দরিদ্র সেজেছেন বলেও অভিযোগে পাওয়া গেছে। স্বচ্ছল পরিবারের কার্ডধারীদের মধ্যে নাসিমা ডেকোরেটরের মালিক নাছির উদ্দিন (৩১৩), তার ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩২২), বর্তমান ইউপি সদস্য (মহিলা) রনিতা রাণী দেবনাথ (৬৩২), মুদির দোকানদার কমল কান্তী রায় (৬১৯), জাকির হোসেন (৫০৩), ডিলারের সহযোগী ধনাঢ্য ব্যক্তি ফারুক হোসেনের স্ত্রী- মুনমুন (১৮৪) নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, ডাবল নামে তালিকা করে ডিলার এবং স্থানীয় নেতারা এসব চাল আত্মসাৎ করেছে।
ওই ইউনিয়নের ডিলাররা প্রথম দফায় চাল বিতরণে উন্নত মানের চাল নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে চালের সংকট দেখিয়ে কার্ডধারীদেরকে চালের পরিবর্তে টাকা দেয়ার বিষয়টিও জানা গেছে। পরে দ্বিতীয় দফায় চাল খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলনের পর নিম্ন মানের চালের কথা বলে চালের পরিবর্তে টাকা দেয়ার চেষ্টা করেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় চুক্তিবদ্ধ মিলাররা খাদ্য গুদামে বরাদ্ধকৃত চাল সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে, রাণীরবন্দর খাদ্য গুদামের অসাধু কর্মকর্তা, মিলার ও ডিলাররে যোগসাজসে অভিনব পদ্ধতিতে চাল সংগ্রহের পায়তারা করছে বলেও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে আলোকডিহি ইউনিয়নের ডিলার মো. মামনুর রশিদ বলেন, আমার অনেক শত্রু আছে। কে আমার নামে অভিযোগ করছে? পরে চাল ডিলার শফি-উল্লার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ থাকতেই পারে আপনাদের কি করার আছে করেন।
এরপর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রয়ক আবু হেনা মোস্তাফা কামালের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তদারকির জন্য আমাদের ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি দেখভাল করবেন। তাছাড়া ডিলারদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পেলে আমাকে অবগত করবেন আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে, চাল বিতরণ সরকারের বিশেষ একাটি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
আলোকডিহি ইউনিয়নের চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজ মাহামুদকে বিষয়টি জানালে, তিনি জানান, ১০ টাকা চাল বিতরণ কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।