ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এইচএসসির ফরম পূরণে বোর্ড ফির ৪ গুণ আদায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৭:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৭ বার

রাজধানীর উত্তরার রেসিডেনসিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কলেজের চেয়ারম্যানের যাচ্ছেতাই নিয়মে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। দুটি বিষয়ের মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম। নেই পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরুম পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত গোডাউনে। কিন্তু শিক্ষা ও পরিবেশে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষার্থীদের থেকে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা এখানে অহরহ। বিশেষ করে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে চার গুণ বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অতিরিক্ত ফি দাবির প্রতিবাদে গত ১০ মার্চ বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময় থানা-পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ১০, মানবিকের ৬ এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফরম পূরণে এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ২ হাজার ৭৮৫ ও মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ২ হাজার ২২৫ টাকা বোর্ড ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সারিয়া মোস্তফা তিথি বলেন, ‘বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে ১৪ হাজার ৮০০, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৮০০ টাকা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফরম পূরণে বোর্ডের নির্ধারিত ফি থেকে অনেক বেশি টাকা চাওয়ার কারণে আমরা আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মুখে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১১ হাজার, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাত্রত্ব ঠিক রাখার জন্য এটি মেনে নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।’

সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘কলেজটির চেয়ারম্যান শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা, নির্ধারিত ফি কোনোটিই মানেন না। ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ফি ২ হাজার ২২৫ টাকা বোর্ড নির্ধারণ করে দিলেও তিনি আদায় করছেন ৯ হাজার টাকা করে।’ তিনি বলেন, ‘এবার যারা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন, তারা সমন্বয়ক-পুলিশ নিয়ে এসে টিসি নিয়েছেন। কিন্তু তার আগেই শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন এখানে করে রাখছে। যেন শিক্ষার্থীরা যেতে না পারে।’

কলেজটির একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেরিন রায়সা বলেন, ‘প্রতারণার বিষয়টি জানার পর টিসি চেয়েছি। তারপর বহুদিন ঘুরাইছে। পরে মা-বাবাকে নিয়ে আসার পর চেয়ারম্যান স্যার আমাকে ৪৮ হাজার ১০০ টাকার একটি লিস্ট দিয়েছেন। সেখানে অনুপস্থিত ফি, লেট ফি দেখিয়েছে বেশির ভাগ টাকা।’

এদিকে, শিক্ষার্থী ভর্তির সময় আবাসিক ব্যবস্থা থাকার কথা বলে হলেও আদৌ তা নেই কলেজটিতে। ভর্তির পর শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় ভাড়া বাসায়। সে ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ভাড়ার চেয়ে বাড়তি টাকা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিমানবন্দর থানার মুখ্য সংগঠক নাজমুস সাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্যারদের বিতণ্ডতা, টিসি না দেওয়া, লেট ফির নামে টাকা আদায়, পরীক্ষা না নিয়েই ফি আদায়সহ অনেক ঝামেলার কারণে আমরা কয়েক দফা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের ফরম পূরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪ হাজার

৮০০ এবং ব্যবসা ও মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ হাজার ৮০০ টাকা দাবি করেছিল কলেজটি। বোর্ড ফির থেকে অনেক বেশি টাকা দাবির কারণে শিক্ষার্থীরা কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন।’

খোঁজখবর নিয়ে আরও জানা যায়, কলেজটিতে মো. সালেহ, আলমগীর হোসেন কবীর ও রোকেয়া নামের তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সালেহ ও আলমগীর হিসাববিজ্ঞান

এবং রোকেয়া ম্যানেজমেন্টের ক্লাস নেন। অন্যান্য বিষয়ের কোনো শিক্ষকই নেই।

এ বিষয়ে রেসিডেনসিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের বক্তব্য নিতে গেলে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেলে করে কেটে পড়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষা বোর্ডে যাচ্ছি। আপনি পরে আসেন।’

উত্তরা পূর্ব থানার এসআই আসাদ বলেন, ‘ওই কলেজে প্রতিদিনই ঝামেলা হয়। কলেজটি একটি ডিস্টার্ব।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এইচএসসির ফরম পূরণে বোর্ড ফির ৪ গুণ আদায়

আপডেট টাইম : ১১:১৭:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার রেসিডেনসিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কলেজের চেয়ারম্যানের যাচ্ছেতাই নিয়মে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। দুটি বিষয়ের মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম। নেই পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরুম পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত গোডাউনে। কিন্তু শিক্ষা ও পরিবেশে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষার্থীদের থেকে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা এখানে অহরহ। বিশেষ করে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে চার গুণ বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অতিরিক্ত ফি দাবির প্রতিবাদে গত ১০ মার্চ বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময় থানা-পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ১০, মানবিকের ৬ এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফরম পূরণে এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ২ হাজার ৭৮৫ ও মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ২ হাজার ২২৫ টাকা বোর্ড ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সারিয়া মোস্তফা তিথি বলেন, ‘বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে ১৪ হাজার ৮০০, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৮০০ টাকা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফরম পূরণে বোর্ডের নির্ধারিত ফি থেকে অনেক বেশি টাকা চাওয়ার কারণে আমরা আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মুখে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১১ হাজার, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাত্রত্ব ঠিক রাখার জন্য এটি মেনে নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।’

সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘কলেজটির চেয়ারম্যান শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা, নির্ধারিত ফি কোনোটিই মানেন না। ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ফি ২ হাজার ২২৫ টাকা বোর্ড নির্ধারণ করে দিলেও তিনি আদায় করছেন ৯ হাজার টাকা করে।’ তিনি বলেন, ‘এবার যারা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন, তারা সমন্বয়ক-পুলিশ নিয়ে এসে টিসি নিয়েছেন। কিন্তু তার আগেই শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন এখানে করে রাখছে। যেন শিক্ষার্থীরা যেতে না পারে।’

কলেজটির একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেরিন রায়সা বলেন, ‘প্রতারণার বিষয়টি জানার পর টিসি চেয়েছি। তারপর বহুদিন ঘুরাইছে। পরে মা-বাবাকে নিয়ে আসার পর চেয়ারম্যান স্যার আমাকে ৪৮ হাজার ১০০ টাকার একটি লিস্ট দিয়েছেন। সেখানে অনুপস্থিত ফি, লেট ফি দেখিয়েছে বেশির ভাগ টাকা।’

এদিকে, শিক্ষার্থী ভর্তির সময় আবাসিক ব্যবস্থা থাকার কথা বলে হলেও আদৌ তা নেই কলেজটিতে। ভর্তির পর শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় ভাড়া বাসায়। সে ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ভাড়ার চেয়ে বাড়তি টাকা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিমানবন্দর থানার মুখ্য সংগঠক নাজমুস সাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্যারদের বিতণ্ডতা, টিসি না দেওয়া, লেট ফির নামে টাকা আদায়, পরীক্ষা না নিয়েই ফি আদায়সহ অনেক ঝামেলার কারণে আমরা কয়েক দফা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের ফরম পূরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪ হাজার

৮০০ এবং ব্যবসা ও মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ হাজার ৮০০ টাকা দাবি করেছিল কলেজটি। বোর্ড ফির থেকে অনেক বেশি টাকা দাবির কারণে শিক্ষার্থীরা কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন।’

খোঁজখবর নিয়ে আরও জানা যায়, কলেজটিতে মো. সালেহ, আলমগীর হোসেন কবীর ও রোকেয়া নামের তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সালেহ ও আলমগীর হিসাববিজ্ঞান

এবং রোকেয়া ম্যানেজমেন্টের ক্লাস নেন। অন্যান্য বিষয়ের কোনো শিক্ষকই নেই।

এ বিষয়ে রেসিডেনসিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের বক্তব্য নিতে গেলে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেলে করে কেটে পড়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষা বোর্ডে যাচ্ছি। আপনি পরে আসেন।’

উত্তরা পূর্ব থানার এসআই আসাদ বলেন, ‘ওই কলেজে প্রতিদিনই ঝামেলা হয়। কলেজটি একটি ডিস্টার্ব।’