ঢাকা ০৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাভারে গ্যাস নিয়ে ‘ইদুর-বিড়াল’ খেলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৬
  • ২৬২ বার

সাভারে চলছে গ্যাস সংযোগ আর বিচ্ছিন্নের খেলা। একটি অসাধু চক্র স্থানীয়দের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে গ্যাস সংযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ আবার ঘটা করে তা বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। দফায় দফায় এই কাজই চলছে দীর্ঘ দিন ধরে।

প্রকাশ্যে দিনে দুুপুরে অবৈধপন্থায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা যেন তা দেখেও না দেখার ভান করছে। স্থানীয় ঠিকাদার, গ্যাস অফিসের লোকজন এবং প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘ দিন ধরে সাভারের বিভিন্ন স্থানে এই কর্ম করছে। দুর্বল অবকাঠামোতে গ্যাস সংযোগ দেয়ায় আগুন লাগার ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।

এসব করে ঐ চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অর্থ নিয়ে গ্যাস সংযোগ দেয়ার পর তাদের আর নাগাল পাওয়া যায়না। হঠাৎ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই চক্রটি বরাবরই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দশ মাসে সাভার এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে প্রায় বিশ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ চক্রটিকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্যাসের লাইন দেয়ার পর এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা পড়েছে বিপাকে।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (বিপণন) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ধামসোনা ইউনিয়নের মধুপুর ও বড়টেক এলাকায় দ্বিতীয় বারের মত অভিযান চালায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এসময় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধ নি¤œমানের গ্যাস পাইপ লাইন জব্দ করা হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয় প্রায় ৮-১০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ।

একই জায়াগায় কেন বার বার এই অভিযান-এমন প্রশ্নের জবাবে তিতাসের এই কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে তারা অবশ্য নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।

তবে তিতাসের এই কর্মকর্তার এমন বক্তব্য মানতে নারাজ ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিতাস নাম মাত্র অভিযান পরিচালনা করে। তিতাস চলে যাওয়ার পর পরই ঐ চক্রটি রাতের আঁধারে ফের গ্যাসের সংযোগ দেয়। তিনি বলেন, তিতাস যদি চায়, তাহলে আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর কথা হয় এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, জনপ্রতি আমরা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ওদের হাতে তুলে দেই। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর আর তাদের পাওয়া যায় না। সমস্যায় পরতে হয় আমাদেরকে। অর্থও গেল, গেল গ্যাসও।

সবশেষে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সাভারের কলমা, নামা গেন্ডা, তেতুঁলঝোড়া, দোসাইদ, বাসাইদ, পলাশবাড়ী, গাজীরচট, কবিরপুর, শ্রীপুর, ক-ার হাজারো অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এদিকে অপরিকল্পিত অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা রান্নার কাজে ঠিকভাবে গ্যাস না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী সামেলা খাতুন ও গাজীরচট এলাকার মোহাম্মদ রাসেল জানান, ভোর ৫টার পর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য গ্যাস থাকে। এরপর বিকাল ৫টার আগে আর গ্যাস পাওয়া যায়না। বিকাল পাঁচটার পর গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ থাকে না সেভাবে।

ডেন্ডাবর এলাকার হাজী ইছামুদ্দিন মাতবরের বাড়ির ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করেন, ভোর বেলা অফিসে যাওয়ার সময় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তারা রান্নার কাজ শেষ করতে পারেন না। একারণে অনেক সময় অফিস যেতেই বিলম্ব হয়। এমনকি অফিস শেষে রাতে বাসায় ফেরার পর গ্যাসের কারণে খাওয়া-দাওয়াও সময়মত হয়না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারে আবাসিক খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীর সংখ্যা দিগুণ হওয়ায় চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক নাছিম আকতার। তিনি জানান, মূল্যবান এই সম্পদ অপচয় ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই এর দায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই এড়াতে পারেনা। একই সাথে শুধুমাত্র মূল্য বৃদ্ধি না করে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্য মূল্যবান এই সম্পদের অপচয় রোধ করা সম্ভব।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, সাভারের ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে আবাসিক গ্যাসের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫০-৬০ হাজার। গত দুই বছরে সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাতেœ্য অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় এক লাখের বেশি। বিগত দশ মাসে ধামসোনা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, আমিনবাজার ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার নামা গেন্ডাসহ বিভিন্ন স্থান হতে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও আনুমানিক ৫০ কিলোমিটার নি¤œ মানের পাইপ লাইন জব্দ করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাভারে গ্যাস নিয়ে ‘ইদুর-বিড়াল’ খেলা

আপডেট টাইম : ১১:১৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

সাভারে চলছে গ্যাস সংযোগ আর বিচ্ছিন্নের খেলা। একটি অসাধু চক্র স্থানীয়দের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে গ্যাস সংযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ আবার ঘটা করে তা বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। দফায় দফায় এই কাজই চলছে দীর্ঘ দিন ধরে।

প্রকাশ্যে দিনে দুুপুরে অবৈধপন্থায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা যেন তা দেখেও না দেখার ভান করছে। স্থানীয় ঠিকাদার, গ্যাস অফিসের লোকজন এবং প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘ দিন ধরে সাভারের বিভিন্ন স্থানে এই কর্ম করছে। দুর্বল অবকাঠামোতে গ্যাস সংযোগ দেয়ায় আগুন লাগার ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।

এসব করে ঐ চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অর্থ নিয়ে গ্যাস সংযোগ দেয়ার পর তাদের আর নাগাল পাওয়া যায়না। হঠাৎ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই চক্রটি বরাবরই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দশ মাসে সাভার এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে প্রায় বিশ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ চক্রটিকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্যাসের লাইন দেয়ার পর এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা পড়েছে বিপাকে।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (বিপণন) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ধামসোনা ইউনিয়নের মধুপুর ও বড়টেক এলাকায় দ্বিতীয় বারের মত অভিযান চালায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এসময় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধ নি¤œমানের গ্যাস পাইপ লাইন জব্দ করা হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয় প্রায় ৮-১০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ।

একই জায়াগায় কেন বার বার এই অভিযান-এমন প্রশ্নের জবাবে তিতাসের এই কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে তারা অবশ্য নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।

তবে তিতাসের এই কর্মকর্তার এমন বক্তব্য মানতে নারাজ ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিতাস নাম মাত্র অভিযান পরিচালনা করে। তিতাস চলে যাওয়ার পর পরই ঐ চক্রটি রাতের আঁধারে ফের গ্যাসের সংযোগ দেয়। তিনি বলেন, তিতাস যদি চায়, তাহলে আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর কথা হয় এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, জনপ্রতি আমরা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ওদের হাতে তুলে দেই। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর আর তাদের পাওয়া যায় না। সমস্যায় পরতে হয় আমাদেরকে। অর্থও গেল, গেল গ্যাসও।

সবশেষে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সাভারের কলমা, নামা গেন্ডা, তেতুঁলঝোড়া, দোসাইদ, বাসাইদ, পলাশবাড়ী, গাজীরচট, কবিরপুর, শ্রীপুর, ক-ার হাজারো অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এদিকে অপরিকল্পিত অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা রান্নার কাজে ঠিকভাবে গ্যাস না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী সামেলা খাতুন ও গাজীরচট এলাকার মোহাম্মদ রাসেল জানান, ভোর ৫টার পর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য গ্যাস থাকে। এরপর বিকাল ৫টার আগে আর গ্যাস পাওয়া যায়না। বিকাল পাঁচটার পর গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ থাকে না সেভাবে।

ডেন্ডাবর এলাকার হাজী ইছামুদ্দিন মাতবরের বাড়ির ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করেন, ভোর বেলা অফিসে যাওয়ার সময় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তারা রান্নার কাজ শেষ করতে পারেন না। একারণে অনেক সময় অফিস যেতেই বিলম্ব হয়। এমনকি অফিস শেষে রাতে বাসায় ফেরার পর গ্যাসের কারণে খাওয়া-দাওয়াও সময়মত হয়না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারে আবাসিক খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীর সংখ্যা দিগুণ হওয়ায় চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক নাছিম আকতার। তিনি জানান, মূল্যবান এই সম্পদ অপচয় ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই এর দায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই এড়াতে পারেনা। একই সাথে শুধুমাত্র মূল্য বৃদ্ধি না করে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্য মূল্যবান এই সম্পদের অপচয় রোধ করা সম্ভব।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, সাভারের ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে আবাসিক গ্যাসের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫০-৬০ হাজার। গত দুই বছরে সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাতেœ্য অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় এক লাখের বেশি। বিগত দশ মাসে ধামসোনা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, আমিনবাজার ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার নামা গেন্ডাসহ বিভিন্ন স্থান হতে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও আনুমানিক ৫০ কিলোমিটার নি¤œ মানের পাইপ লাইন জব্দ করা হয়।