ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বাবার মৃত্যুশয্যায় পাশে না থাকায় স্ত্রীকে ‘বয়কট’ করলেন হিরো আলম ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৩ ফিলিস্তিনি, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫১ হাজার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ বুনো ফুলে বেগুনিগলা মৌটুসি দুপুরের মধ্যে যেসব অঞ্চলে ঝড়ের আশঙ্কা মিরপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মীদের ওপর হামলা, বিক্ষোভ গ্রীষ্মে কেমন হতে পারে লোডশেডিং, সামাল দিতে সরকারের পরিকল্পনা কী সন্তানদের ছত্রাকযুক্ত রুটি খাওয়াচ্ছেন গাজার মায়েরা আগুন আতঙ্ক চলন্ত ট্রেন থেকে দম্পতির লাফ, কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু আলোচনায় গুরুত্ব পাবে নির্বাচন, বাণিজ্য ও রোহিঙ্গা ইস্যু আজ ঢাকায় ২ মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তরমুজের বাজার চার হাজার কোটি টাকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ১০ বার
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায় আবাদহীন হয়ে পড়েছিল উপকূলের বিভিন্ন জেলার কৃষিজমি। খুলনা জেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তরমুজ চাষ। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। শুধু খুলনা জেলা থেকেই ৫০০ কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

একক জেলা হিসেবে তরমুজ আবাদ ও উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে খুলনা।খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই মৌসুমের তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হবে। তরমুজ আবাদে খরচের তিন গুণ আয় হয়। প্রতি একর জমিতে সব মিলিয়ে লাখ টাকার মতো খরচ হলেও বিক্রি হয় তিন লাখ টাকার ওপর, যা অন্য ফসলে খুব কমই হয়।

এ জন্যই কৃষকরা তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাটি-পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে ধান উৎপাদন কমতে থাকে। চিংড়িঘেরের প্রবণতা শুরু হলে ধানের উৎপাদন আরো কমে। লবণাক্ততায় শুকনো মৌসুমে কৃষিজমি পড়ে থাকত অনাবাদি।

ধান উৎপাদন কমায় কৃষকরা বিকল্প হিসেবে তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০১১ সালের পর থেকেই এ অঞ্চলে তরমুজের চাষ বাড়তে থাকে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হচ্ছে। উপকূলের লবণাক্ত জমিতে এখন লাল সোনায় পরিণত হয়েছে তরমুজ।খুলনার ২ নম্বর দাকোপ ইউনিয়নের কৃষক তরুণ মণ্ডল জানান, অন্যের জমি ইজারা নিয়ে তিনি তরমুজের চাষ করেন।

প্রতি হেক্টরে হাড়ি (জমির ভাড়া) দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। জন নিয়ে জমি প্রস্তুত করে তরমুজের চাষ করে বিক্রির উপযোগী করতে হেক্টরে খরচ পড়ে লাখ টাকার মতো। তবে তিনি তাঁর ক্ষেত থেকেই তরমুজ বিক্রি করে দিয়েছেন। যাঁরা ক্ষেত কেনেন তাঁরা তরমুজ সংগ্রহ করে পাইকারি বিক্রি করেন। পাইকাররা সেগুলো ট্রাকযোগে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এই এলাকার প্রতি হেক্টর ক্ষেত তিন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে।দেশে অফ সিজনে সোনালি বর্ণের বিদেশি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেরি ও বাংলালিংক তরমুজের চাষ বাড়ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি কৃষকরা তরমুজের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন বেরি তরমুজের চাষ করে কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন। মৌসুমি তরজুমের মতো বেশি ফলন না হলেও প্রতি হেক্টরে ৪০ টন তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথাগত তরমুজের চেয়ে ব্ল্যাকবেরি ও গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বীজ বপনের দুই মাসের মাথায় ফল পাওয়া যায়। এই তরমুজ প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার বেশি মুনাফা দিচ্ছে কৃষকদের।

এভাবেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তরমুজের আবাদ। মৌসুম ও অমৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। ফসলোত্তর ক্ষতি বাদ দিয়ে দেশে তরমুজের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। সরকারি ও বাজারের তথ্য মতে, তরমুজের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যেই ওঠানামা করে। প্রতি কেজির দাম ৫৫ টাকা করে হিসাব করলেও তরমুজের বাজার ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। আর গড় দাম ৬৫ টাকা হিসাবে নিলে বাজার চার হাজার ২২৫ কোটি টাকার। ফলে গড় হিসাবে দেশে তরমুজের বাজার এখন চার হাজার কোটি টাকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেলায় এবার ১২ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে। রবি জাতের এই তরমুজ চাষ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাজারে ভালো দামের কারণে এবার কৃষক বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’

এক মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি শেষ হবে। তবে এ অঞ্চলের দুটি উপজেলায় অফ সিজনে বেশ ভালো তরমুজের উৎপাদন হয়। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা অফ সিজনে তরমুজ আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। সিডর, আইলা, আম্ফানসহ নানা প্রাকৃতিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে বেড়ে ওঠা খুলনার উপকূলবাসীর জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাবার মৃত্যুশয্যায় পাশে না থাকায় স্ত্রীকে ‘বয়কট’ করলেন হিরো আলম

তরমুজের বাজার চার হাজার কোটি টাকার

আপডেট টাইম : ০৭:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায় আবাদহীন হয়ে পড়েছিল উপকূলের বিভিন্ন জেলার কৃষিজমি। খুলনা জেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তরমুজ চাষ। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। শুধু খুলনা জেলা থেকেই ৫০০ কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

একক জেলা হিসেবে তরমুজ আবাদ ও উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে খুলনা।খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই মৌসুমের তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হবে। তরমুজ আবাদে খরচের তিন গুণ আয় হয়। প্রতি একর জমিতে সব মিলিয়ে লাখ টাকার মতো খরচ হলেও বিক্রি হয় তিন লাখ টাকার ওপর, যা অন্য ফসলে খুব কমই হয়।

এ জন্যই কৃষকরা তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাটি-পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে ধান উৎপাদন কমতে থাকে। চিংড়িঘেরের প্রবণতা শুরু হলে ধানের উৎপাদন আরো কমে। লবণাক্ততায় শুকনো মৌসুমে কৃষিজমি পড়ে থাকত অনাবাদি।

ধান উৎপাদন কমায় কৃষকরা বিকল্প হিসেবে তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০১১ সালের পর থেকেই এ অঞ্চলে তরমুজের চাষ বাড়তে থাকে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হচ্ছে। উপকূলের লবণাক্ত জমিতে এখন লাল সোনায় পরিণত হয়েছে তরমুজ।খুলনার ২ নম্বর দাকোপ ইউনিয়নের কৃষক তরুণ মণ্ডল জানান, অন্যের জমি ইজারা নিয়ে তিনি তরমুজের চাষ করেন।

প্রতি হেক্টরে হাড়ি (জমির ভাড়া) দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। জন নিয়ে জমি প্রস্তুত করে তরমুজের চাষ করে বিক্রির উপযোগী করতে হেক্টরে খরচ পড়ে লাখ টাকার মতো। তবে তিনি তাঁর ক্ষেত থেকেই তরমুজ বিক্রি করে দিয়েছেন। যাঁরা ক্ষেত কেনেন তাঁরা তরমুজ সংগ্রহ করে পাইকারি বিক্রি করেন। পাইকাররা সেগুলো ট্রাকযোগে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এই এলাকার প্রতি হেক্টর ক্ষেত তিন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে।দেশে অফ সিজনে সোনালি বর্ণের বিদেশি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেরি ও বাংলালিংক তরমুজের চাষ বাড়ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি কৃষকরা তরমুজের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন বেরি তরমুজের চাষ করে কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন। মৌসুমি তরজুমের মতো বেশি ফলন না হলেও প্রতি হেক্টরে ৪০ টন তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথাগত তরমুজের চেয়ে ব্ল্যাকবেরি ও গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বীজ বপনের দুই মাসের মাথায় ফল পাওয়া যায়। এই তরমুজ প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার বেশি মুনাফা দিচ্ছে কৃষকদের।

এভাবেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তরমুজের আবাদ। মৌসুম ও অমৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। ফসলোত্তর ক্ষতি বাদ দিয়ে দেশে তরমুজের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। সরকারি ও বাজারের তথ্য মতে, তরমুজের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যেই ওঠানামা করে। প্রতি কেজির দাম ৫৫ টাকা করে হিসাব করলেও তরমুজের বাজার ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। আর গড় দাম ৬৫ টাকা হিসাবে নিলে বাজার চার হাজার ২২৫ কোটি টাকার। ফলে গড় হিসাবে দেশে তরমুজের বাজার এখন চার হাজার কোটি টাকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেলায় এবার ১২ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে। রবি জাতের এই তরমুজ চাষ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাজারে ভালো দামের কারণে এবার কৃষক বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’

এক মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি শেষ হবে। তবে এ অঞ্চলের দুটি উপজেলায় অফ সিজনে বেশ ভালো তরমুজের উৎপাদন হয়। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা অফ সিজনে তরমুজ আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। সিডর, আইলা, আম্ফানসহ নানা প্রাকৃতিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে বেড়ে ওঠা খুলনার উপকূলবাসীর জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ।