ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের একের পর এক হামলা রক্তাক্ত করে তুলেছে গোটা অঞ্চলকে। যুদ্ধ, আগ্রাসন আর ধ্বংসের চিত্র যেন এখানকার প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলায় আরও অন্তত ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর ফলে মোট নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫১ হাজারেরও বেশি। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়। দুই মাসের এক অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল এই হামলা শুরু করে বলে জানা যায়। এই হামলার পেছনে কারণ হিসেবে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত মতানৈক্যকে দায়ী করা হচ্ছে। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে আবারও শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গত কয়েক সপ্তাহেই নিহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৬৩০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ থাকা সত্ত্বেও এই আগ্রাসন থেমে নেই।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় চালানো হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে একাধিক চিকিৎসা সূত্র। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর গত ১৮ মাসে মোট ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি—তাদের মতে নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের জীবিত পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা জানায়, ইসরায়েলি ও মার্কিন সেনাদের তত্ত্বাবধানে বন্দি থাকা এক ফিলিস্তিনি বন্দি এডান আলেকজান্ডারকে সরিয়ে নেওয়ার সময় যে স্থানটি লক্ষ্য করে সরাসরি বোমাবর্ষণ করা হয়, তার ফলে হামাসের সঙ্গে ওই বন্দি-সম্পর্কিত যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘ জানায়, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ জনগণ ইতিমধ্যেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এর আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। বর্তমানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখিও রয়েছে।