ঢাকা ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক বাড়বে তেল উৎপাদন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৬:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৩ বার
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কয়েক বছর ধরেই সূর্যমুখী চাষ ক্রমে বাড়ছে। এর বীজ থেকে পাওয়া তেল উৎপাদনে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল দেখতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যে আগ্রহ, তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেক শৌখিন কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কৃষকদের এ আগ্রহে চাষাবাদে আরো বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। নির্দ্বিধায় সে কথাই জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে কিছু কৃষক কয়েক বছর ধরে এখানে সূর্যমুখী চাষে যুক্ত হওয়ায় এটি উপজেলার কৃষির সাফল্যে নতুন পালক যোগ করেছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার সীতাকুণ্ড উপজেলার দুই হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ১৪ কৃষক। তাঁদের ক্ষেতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

এতে তাঁরা লাভবান হবেন আশা করলেও চৈত্রের দাবদাহে পানিসংকট তীব্র হওয়ায় কোথাও কোথাও ফলন কম হয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ও বারৈয়াঢালা এলাকায় সূর্যমুখীর ক্ষেত পরিদর্শনকালে কথা হয় বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ও রাজনীতিবিদ ডা. কমল কদর। তিনি জানান, এবার তিনি ১২ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

এ জমি চাষের জন্য বীজ, সার, ফসফেট ও কীটনাশক দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরীও সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে চাষাবাদে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। এসব সহযোগিতা পেয়ে তিনি চাষাবাদ করে এখন সফল। কৃষক ডাক্তার কমল কদর আরো বলেন, এই জমি চাষ করতে তাঁর খরচ হয়েছে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার মতো। এরই মধ্যে ফুলগুলো বীজে পরিণত হয়েছে।

১২ শতক জমিতে বীজ উৎপন্ন হবে ৯০ থেকে ১০০ কেজি। তিন কেজি বীজে এক লিটার তেল হয়। আর বাজারে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এ হিসাবে ৯০ কেজি বীজ থেকে ৩০ লিটার তেল পাওয়া গেলে তা বিক্রি হবে ১৫ হাজার টাকা।তবে কত টাকা আয় হলো তার চেয়েও তিনি বেশি আনন্দিত এ কারণে, যখন ক্ষেতে সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে তখন চারপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসে। অনেক আত্মীয়-স্বজন এসে এই ফুলের সঙ্গে ছবি তুলেছে দারুণ আনন্দে। তিনি বলেন, এর চেয়ে ভালো লাগার আর কী হতে পারে।

প্রায় একই কথা বলেন, বাঁশবাড়িয়া কোট্টাবাজারের আরেক সফল কৃষক ইব্রাহিম হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ২৪ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়ে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। জমিতে ফুল আসার পর থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে এসেছে এই ফুল দেখতে ও ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। এই জমিতে তাঁর মোট খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এখন ফুলগুলো বীজে পরিণত হচ্ছে। তবে পানিসংকটে এই জমির ফুলগুলো আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। পানি পেলে আরো বড় হতো গাছ ও ফুল। তবু তিনি খরচের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি টাকার তেল পাবেন বলে আশাবাদী। তবে তিনিও উচ্ছ্বসিত সূর্যমুখীর টানে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে ছুটে আসায়। তিনি বলেন, এই ফুল চাষের মাধ্যমে মানুষকে যে আনন্দ দেওয়া যায়, তা আর কোনো চাষেই বোধ হয় দেওয়া যায় না। পানির চাহিদা পূরণ করা গেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করবেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লা বলেন, ‘আসলে সূর্যমুখীর চাষ দিন দিন বাড়ছে। আমরা সূর্যমুখী চাষে উৎসাহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। এতে অনেক শৌখিন কৃষক এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। ফলে চাষাবাদ বিগত কয়েক বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তবে পানিসংকটের জন্য কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এটি প্রাকৃতিক বিষয় হলেও আমরা স্যালো বা ডিপ মেশিন স্থাপনের বিষয়ে কী করা যায়, তা দেখছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে নিহত ৩ আহত ১

সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক বাড়বে তেল উৎপাদন

আপডেট টাইম : ০৫:১৬:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কয়েক বছর ধরেই সূর্যমুখী চাষ ক্রমে বাড়ছে। এর বীজ থেকে পাওয়া তেল উৎপাদনে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল দেখতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যে আগ্রহ, তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেক শৌখিন কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কৃষকদের এ আগ্রহে চাষাবাদে আরো বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। নির্দ্বিধায় সে কথাই জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে কিছু কৃষক কয়েক বছর ধরে এখানে সূর্যমুখী চাষে যুক্ত হওয়ায় এটি উপজেলার কৃষির সাফল্যে নতুন পালক যোগ করেছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার সীতাকুণ্ড উপজেলার দুই হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ১৪ কৃষক। তাঁদের ক্ষেতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

এতে তাঁরা লাভবান হবেন আশা করলেও চৈত্রের দাবদাহে পানিসংকট তীব্র হওয়ায় কোথাও কোথাও ফলন কম হয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ও বারৈয়াঢালা এলাকায় সূর্যমুখীর ক্ষেত পরিদর্শনকালে কথা হয় বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ও রাজনীতিবিদ ডা. কমল কদর। তিনি জানান, এবার তিনি ১২ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

এ জমি চাষের জন্য বীজ, সার, ফসফেট ও কীটনাশক দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরীও সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে চাষাবাদে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। এসব সহযোগিতা পেয়ে তিনি চাষাবাদ করে এখন সফল। কৃষক ডাক্তার কমল কদর আরো বলেন, এই জমি চাষ করতে তাঁর খরচ হয়েছে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার মতো। এরই মধ্যে ফুলগুলো বীজে পরিণত হয়েছে।

১২ শতক জমিতে বীজ উৎপন্ন হবে ৯০ থেকে ১০০ কেজি। তিন কেজি বীজে এক লিটার তেল হয়। আর বাজারে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এ হিসাবে ৯০ কেজি বীজ থেকে ৩০ লিটার তেল পাওয়া গেলে তা বিক্রি হবে ১৫ হাজার টাকা।তবে কত টাকা আয় হলো তার চেয়েও তিনি বেশি আনন্দিত এ কারণে, যখন ক্ষেতে সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে তখন চারপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসে। অনেক আত্মীয়-স্বজন এসে এই ফুলের সঙ্গে ছবি তুলেছে দারুণ আনন্দে। তিনি বলেন, এর চেয়ে ভালো লাগার আর কী হতে পারে।

প্রায় একই কথা বলেন, বাঁশবাড়িয়া কোট্টাবাজারের আরেক সফল কৃষক ইব্রাহিম হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ২৪ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়ে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। জমিতে ফুল আসার পর থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে এসেছে এই ফুল দেখতে ও ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। এই জমিতে তাঁর মোট খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এখন ফুলগুলো বীজে পরিণত হচ্ছে। তবে পানিসংকটে এই জমির ফুলগুলো আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। পানি পেলে আরো বড় হতো গাছ ও ফুল। তবু তিনি খরচের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি টাকার তেল পাবেন বলে আশাবাদী। তবে তিনিও উচ্ছ্বসিত সূর্যমুখীর টানে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে ছুটে আসায়। তিনি বলেন, এই ফুল চাষের মাধ্যমে মানুষকে যে আনন্দ দেওয়া যায়, তা আর কোনো চাষেই বোধ হয় দেওয়া যায় না। পানির চাহিদা পূরণ করা গেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করবেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লা বলেন, ‘আসলে সূর্যমুখীর চাষ দিন দিন বাড়ছে। আমরা সূর্যমুখী চাষে উৎসাহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। এতে অনেক শৌখিন কৃষক এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। ফলে চাষাবাদ বিগত কয়েক বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তবে পানিসংকটের জন্য কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এটি প্রাকৃতিক বিষয় হলেও আমরা স্যালো বা ডিপ মেশিন স্থাপনের বিষয়ে কী করা যায়, তা দেখছি।