অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আমরা জাতির সূর্য সন্তানদের হারিয়েছি। তাদেরকে হারানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিতকে আঘাত করা হয়েছে। ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবর রচনা করে নৈরাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল পতিত আওয়ামী সরকার। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারিত্ব কায়েমের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশই ছিল পিলখানা হত্যাকান্ড। এটি কোন বিদ্রোহ ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশকে চোরাবালির সন্ধিক্ষণে দাঁড় করানো হয়েছিল। একটি রাষ্ট্র বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খুন-গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়ে সেই রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুই মাসের মাথায় ঢাকার পিলখানায় দেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা ইতিহাসের এক কালো দাগ। দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাত আনার লক্ষ্যে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। কোনো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নয় সেনাবাহিনী যাতে দুর্বল হয়ে যায়, বিডিআর নামে যাতে শক্তিশালী কোন বাহিনী না থাকে তার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার সুযোগ থাকলেও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার লোক দেখানো চেষ্টা করা হয়েছে। দরবার হলের কাছে র্যাবের একটি পেট্রোল টিম থাকলেও বিদ্রোহ দমনে তাদের পিলখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লজ্জিত, দুঃখিত সেই সব সন্তানদের প্রতি যারা পিলখানার নারকীয় হত্যাকান্ডে তাদের পিতামাতা হারিয়েছেন, যারা স্বামী হারিয়েছেন। স্বজনহারা এসব পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। যেদিন এই হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার হবে সেদিন হয়তো স্বজনহারারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।’
পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নের ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১. বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তের স্বার্থে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা অথবা তদন্ত টিম ভারতীয় সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তিনি যে স্থানে অবস্থান করছেন সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করা। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২. তৎকালীন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম,মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকসহ সন্দেহভাজনদের কার কী ভূমিকা ছিল তা উদ্ঘাটন করা।
৩. শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শোক দিবস হিসেবে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করা।
৪. বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা অনুসন্ধান করা। ৫. তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ যেহেতু স্বপ্রণোদিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিডিআর হত্যাকাণ্ড মোকাবিলায় সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সাবেক সেনাপ্রধানকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা।
৬. পিলখানা হত্যাকাণ্ড চলাকালে যারা বিডিআর সদর দপ্তরে সমবেত হয়ে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে ‘বিডিআর জনতা ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করা।
৭. বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত-আহত সামরিক/বেসামরিক ব্যক্তিদের বিডিআর সদর দপ্তরের সামনে তাদের নামফলক দৃশ্যমাণভাবে উল্লেখ করা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।
৮. সেনাকুঞ্জে যেসব সেনাকর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার কারণে চাকরি হারিয়েছিলেন তাদেরকে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা।
৮. একইসঙ্গে বিডিআরের যেসকল সদস্য পিলখানার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তাদেরও চাকরিতে পুনঃর্বহাল করা।
৯. পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার দেওয়া।
১০. বর্তমান প্রজন্মের কাছে পিলখানার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য পাঠ্যপুস্তকে প্রকৃত ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগ সরকার বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।