আমাদের শরীরের জোড়াগুলোর মধ্যে কাঁধের জোড়ায় সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া হয়। গঠনগতভাবে অপেক্ষাকৃত সবচেয়ে কম দৃঢ় অবস্থায় থাকে এই হাড়। ফলে স্বাভাবিক আঘাত ছাড়াও নানা রোগের কারণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে আমাদের কাঁধ। জীবনের কোনো না সময় প্রতি পাঁচজনের একজন কাঁধের ইনজুরিতে ভুগে থাকেন।
শরীরের ৩টি হাড়, ৪টি জোড়া ও ৩০টি পেশির সমন্বয়ে তৈরি আমাদের কাঁধ। শরীরের জোড়াগুলোর মধ্যে কাঁধের জোড়া বেশি নড়াচড়া করে। লেখাপড়া, হাতে জিনিস বহন করা, হাতলজাতীয় কিছু ধরাসহ হাতের যে কোনো কাজে এই সন্ধি কাজ করে। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, দুর্ঘটনা বা আঘাত ছাড়াও কিছু রোগের কারণেও কাঁধ জখম হয়ে থাকে। আবার পেশাগত কারণ, যেমন- ছবি আঁকা, গ্লাস পরিষ্কার করা, ওজন তোলা, বোর্ডে লেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা ইত্যাদির কারণে কাঁধের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিদের ব্যবহারজনিত হাড়ক্ষয়ও হতে পারে।
কাঁধে সমস্যা হলে কাঁধব্যথা ছাড়াও হাতের নড়াচড়া সীমিত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে হাত ওপরে তোলা বা পেছন দিকে নেওয়া, চুল আঁচড়ানো বা পেছনে বোতাম লাগানোর মতো কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
প্রাথমিক করণীয় : হঠাৎ আঘাত পেলে সন্ধি পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। তাতে জোড়ার ক্ষতি ও ব্যথা কম হবে। বরফের টুকরা বা ঠাণ্ডা পানি কাপড়ে বা প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা ২ ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট করে লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমে আসবে। এই প্রক্রিয়া আঘাতের পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। জোড়ায় ইলাসটো কমপ্রেশন, আর্ম সিলিং বা সিপ্লন্ট ব্যবহারে ফোলা ও ব্যথা কমে আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে। ব্যথা ও ফোলা সেরে উঠলে জোড়া নমনীয় ও পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করতে হবে। জোড়া স্থানচ্যুত হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ক্ষেত্রে : অল্প আঘাতপ্রাপ্ত রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যান। তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস বুঝে এবং জোড়ার বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষতি ও তার তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে। কখনও কখনও এক্স-রে এবং এমআরআইর সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজন হলে লিগামেন্ট, জোড়ার আবরণ ও পেশির ক্ষতি, জোড়ার ডিসপ্লেসমেন্ট, আর্থ্রাইটিস ও জোড়ায় অতিরিক্ত হাড়ের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসক দেখাতে হবে। লিগামেন্ট ও আবরণ এনকোর সুসার দিয়ে সেলাই শেষে হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে জোড়া ছুটে যাওয়া রোধ করা হয়।
আর্থ্রাইটিসের কারণে অতিরিক্ত হাড় সেভিং বা বের করা হয়। বার্সাইটিস ও আর্থ্রাইটিস হয়ে জোড়ায় জায়গা কমে গেলে বিসংকোচন করা হয়। কখনও কখনও বড় ধরনের আঘাতের ক্ষেত্রে পেশি প্রতিস্থাপন করা হয়। হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট নষ্ট হলে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে। প্রাথমিক বা শল্যচিকিৎসার পর নিয়মিত ও উপযুক্ত পরিচর্যা করে জোড়ার স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়।