ঢাকা ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিন্ময় সমর্থক ৬৩ আইনজীবীর জামিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার

ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সংঘাত ও বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলায় ৬৩ আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিন পাওয়া আইনজীবীরা চিন্ময় সমর্থক বলে মামলায় দাবি করা হয়। এ আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।

আজ সোমবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে ৬৩ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য আদালত প্রাঙ্গণে মোতায়েন ছিল। এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জামিন প্রার্থী আইনজীবীরা এজলাসে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে এক ঘণ্টা ধরে শুনানি চলে।

আলোচিত এ মামলায় আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, এ আদালতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। জড়িতদের কঠিন ও কঠোর শাস্তি দাবি করছি। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ তিনটি মামলা করেছে। শহিদ আলিফের বাবা হত্যা মামলা করেছেন, আর আলিফের ভাই বাদী হয়ে আরেকটি ভাঙচুরের মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি হিসেবে থাকা ৬৩ জন আইনজীবীর পক্ষে আমরা জামিনের দরখাস্ত করেছিলাম। আদালত শুনানিতে মামলার চার্জশিট বা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন ঘিরে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার আসামি ৬৩ জন আইনজীবী আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। এক হাজার টাকার বন্ডে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন মামলার চার্জশিট দায়ের না হওয়া পর্যন্ত।

এদিকে জামিন আদেশের পর খুনের শিকার সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদীর আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, যাদের জামিন দেওয়া হয়েছে, তারাই ছিলেন ঘটনার উস্কানিদাতা। বিস্ফোরক আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে আসামিদের জামিনের নজির নেই। কিন্তু আজ আদালত এ মামলায় ৬৩ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ ধরনের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সেদিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। আইনজীবী সমিতি এ হামলার জন্য ইসকন সদস্য ও সমর্থকদের দায়ী করে আসছে।

এসব ঘটনায় একটি হত্যা মামলা ও একটি বিস্ফোরক এবং তিনটি মামলা পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ৬৬ জন আইনজীবীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চিন্ময় সমর্থক ৬৩ আইনজীবীর জামিন

আপডেট টাইম : ০৬:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সংঘাত ও বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলায় ৬৩ আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিন পাওয়া আইনজীবীরা চিন্ময় সমর্থক বলে মামলায় দাবি করা হয়। এ আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।

আজ সোমবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে ৬৩ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য আদালত প্রাঙ্গণে মোতায়েন ছিল। এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জামিন প্রার্থী আইনজীবীরা এজলাসে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে এক ঘণ্টা ধরে শুনানি চলে।

আলোচিত এ মামলায় আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, এ আদালতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। জড়িতদের কঠিন ও কঠোর শাস্তি দাবি করছি। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ তিনটি মামলা করেছে। শহিদ আলিফের বাবা হত্যা মামলা করেছেন, আর আলিফের ভাই বাদী হয়ে আরেকটি ভাঙচুরের মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি হিসেবে থাকা ৬৩ জন আইনজীবীর পক্ষে আমরা জামিনের দরখাস্ত করেছিলাম। আদালত শুনানিতে মামলার চার্জশিট বা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন ঘিরে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার আসামি ৬৩ জন আইনজীবী আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। এক হাজার টাকার বন্ডে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন মামলার চার্জশিট দায়ের না হওয়া পর্যন্ত।

এদিকে জামিন আদেশের পর খুনের শিকার সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদীর আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, যাদের জামিন দেওয়া হয়েছে, তারাই ছিলেন ঘটনার উস্কানিদাতা। বিস্ফোরক আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে আসামিদের জামিনের নজির নেই। কিন্তু আজ আদালত এ মামলায় ৬৩ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ ধরনের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সেদিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। আইনজীবী সমিতি এ হামলার জন্য ইসকন সদস্য ও সমর্থকদের দায়ী করে আসছে।

এসব ঘটনায় একটি হত্যা মামলা ও একটি বিস্ফোরক এবং তিনটি মামলা পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ৬৬ জন আইনজীবীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।