চলতি বছর বৈশাখের শুরুতেই ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যা দেখা দেয় হাকালুকি হাওর এলাকায়। সেই বন্যা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ভাদ্র মাসে প্রকৃতির নিয়মে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কথা থাকলেও অবনতি ঘটে। ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিন, এখনও বন্যা পরিস্থিতি সেই আগের মতোই। ভারি বর্ষণ না হলেও সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর তীরে পানি ক্রমেই বাড়ছে।
আশ্বিন মাসেও বন্যায় টুইটুম্বুর হাওরাঞ্চল। অব্যাহতভাবে পানি বাড়ায় হাওর তীরের মানুষজন রয়েছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। স্মরণকালের দীর্ঘতম এ বন্যার কবলে পড়ে ভালো নেই হাকালুকি হাওর তীরের পাঁচ উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ।
সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়ে হাকালুকি হাওরের দক্ষিণ তীরের কুলাউড়া উপজেলার চার ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ, পূর্ব তীরের জুড়ি উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ, উত্তর পূর্ব তীরের বড়লেখা উপজেলার চার ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ, পশ্চিম তীরের সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ, গোলাপগঞ্জের ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশার যেন শেষ নেই।
সরেজমিনে হাকালুকি তীরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে মানুষের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ভাদ্র মাসের শেষ দিকে এমন বন্যায় হতবাক তারা। যখন শীতের জন্ম হয়, তখন এমন বন্যা হয়নি। জলাবদ্ধতা ও বন্যাকবলিত এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও লোকজন জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি ভেঙে নৌকা দিয়ে চলাচল করছে।
স্থানাভাব ও খাদ্যাভাবে লোকজন কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছে। বহু মানুষের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে দূর-দূরান্তে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি গবাদি পশুরও খাদ্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাদ্যাভাবে গবাদি পশুর মড়ক দেখা দিয়েছে। হাওর তীরের মৃত গবাদি পশু পানিতে ভাসিয়ে দেন স্থানীয় লোকজন। ফলে এসব গবাদি পশু পচে দূষিত হচ্ছে পানি। এতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাওর তীরের মানুষ।
হাকালুকি হাওরের দক্ষিণ তীর কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের মাজহারুল ইসলাম ও কামিল আহমদ জানান, ইতোমধ্যে টানা বন্যার ছয় মাস চলছে। দুটি ঈদ গেছে। মানুষ বন্যার কারণে রীতিমত ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। তাদের জীবনে এতো দীর্ঘদিন বন্যা দেখেননি। তাদের মতে, ভাদ্রের ১৩ তারিখ শীতের জন্ম। আশ্বিন মাসে শীত আর কুয়াশা থাকে। কিন্তু এবার প্রকৃতি যেন বিরূপ আকার ধারণ করেছে। আশ্বিন মাসের মধ্যে বন্যার পানি না কমলে আগামী বোরো মৌসুমে এর প্রভাব পড়বে।