দুঃসময়ের কাণ্ডারিকে হারিয়ে কাঁদছে বিএনপি

ওয়ান ইলেভেনের কঠিন দুঃসময়ের কাণ্ডারি ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্। এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশে থাকা এই নেতার মৃত্যুতে দেশ-বিদেশে দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে কাঁদছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সিঙ্গাপুরের রাফেলস হার্ট সেন্টারে স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হান্নান শাহ্। এ খরব পাওয়া মাত্রই শোকে কাতর বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা ছুটে যান মহাখালীর নিউ ডিওএইচএসের বাসায়।

বারবার বিএনপির দুর্দিনে পাশে থেকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন হান্নান শাহ্। ১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনাবাহিনীর হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রেসিডেন্টের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসেন তিনিই।

এদিকে স্বামীর মৃত্যুর খবরে আ স ম হান্নান শাহ্’র স্ত্রী নাহিন হান্নান অচেতন অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দিচ্ছেন। মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সকাল ৯টায় মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায় ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি শোকাহত বড় ছেলে শাহ্ রেজাউল হান্নানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। বাসায় গিয়ে শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল ( অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চেীধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তৈয়মূর আলম খন্দকার, সাংগঠনিক

সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম।

হান্নান শাহ্’র মৃত্যুতে নয়াপল্টনে বিএনপির শোক বই:

প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহ্’র মৃত্যুতে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোকবই খোলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের স্বাক্ষরের জন্য তা আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শোক বইয়ে শোক জানিয়ে স্বাক্ষর করা যাবে।

হান্নান শাহ্’র মৃত্যুতে বিএনপির চারদিনের শোক:

আ স ম হান্নান শাহ্’র মৃত্যুতে বিএনপি চারদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার থেকে শোক কর্মসূচি চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত।

এ সময় দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং শোকসূচক কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সারাদেশে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

আ স ম হান্নান শাহ্’র মৃত্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসনএবগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি গভীরভাবে শোকাহত।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করে বলেছেন, আমি গভীরভাবে শোকাহত ও বেদনাহত চিত্তে আ স ম হান্নান শাহকে চিরবিদায় জানাচ্ছি। আমার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহকর্মী ও সহযোদ্ধা আ স ম হান্নান শাহ্’র ইন্তেকাল আমার কাছে অকল্পনীয় ও বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো। এটা যে কতবড় দুঃসংবাদ তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। এ বেদনা ও শোকের পরিমাপ নেই।

তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, দেশ হারালো জাতীয় স্বার্থ রক্ষার এক দেশপ্রেমিক অধিনায়ককে, জাতি হারালো তার এক সাহসী সন্তানকে। এ ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়। আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তার শোকাহত স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে একদল বিপথগামী সেনার হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর জীবনবাজী রেখে শহীদ জিয়ার লাশ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া এই সাহসী নেতা। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সাহসী যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করেছেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি কখনো কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে মাথানত করেননি, কোনো স্বেচ্ছাচারীর রক্তচক্ষুকে ভয় পাননি।

তিনি বলেন, বর্তমান দুঃশাসন ও দেশের চরম সংকটকালে তার মৃত্যু দেশ ও দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির সংগ্রামী ও পরিণত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। পৃথিবী থেকে হঠাৎ করে চলে গেলেন তিনি। এ রকম কঠিন সময়ে হান্নান শাহ্’র মতো লোকের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। তার শূন্যতা পূরণ হবার নয়। তার পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা একই বাহিনীর লোক ছিলাম। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও সাহসী লোক ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর