বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের ১৩টি কোম্পানিতে অনুমোদিত পদের বিপরীতে প্রায় অর্ধেকই খালি পড়ে আছে। ১৩টি কোম্পানিতে অনুমোদিত ১৪ হাজার ৮৬৯টি পদের বিপরীতে শূন্যপদ রয়েছে ছয় হাজার ৬১৩টি। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত আছেন এক হাজার ৬শ জন। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসর ও নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে একটু বেশি লোকবল শূন্য হয়ে পড়ে। দ্রুতই শূন্যপদে নিয়োগ হয়ে যাবে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, বাপেক্সের অনুমোদিত পদ ছিল এক হাজার ৯৯৯টি। এর মধ্যে পূরণকৃত পদ রয়েছে এক হাজার ১৫৪টি, লোকবল শূন্যপদ রয়েছে ৮৪৫টি। তবে বাপেক্সে আউটসের্সিং ভিত্তিতে অনেক জনবল নিয়োজিত রয়েছে। বাপেক্স বলছে, তাদের আউটসোর্সিং পদে ৯১৯ জন কর্মচারীর পদ পূরণযোগ্য রয়েছে।
এদিকে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অনুমোদিত পদ এক হাজার ১০৬টি, পূরণকৃত পদ রয়েছে ৭৯১টি, শূন্যপদ রয়েছে ৩১৫টি। বাখরাবাদে আউটসোর্সিং ব্যবস্থায় নিয়োজিত কর্মচারীর সংখ্যা ৩০৩ জন। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন
কোম্পানিতে অনুমোদিত পদ এক হাজার ১৬১ জন। ৭৭০ জন পূরণকৃত পদ থাকলেও শূন্যপদ রয়েছে ৩৯১ জন। আউটসোর্সিং ভিত্তিতে নিয়োজিত রয়েছে ৩৪৮ জন।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিতে শূন্যপদ রয়েছে ১৫৯টি। ৪৪৭টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ২৮৮টি পদে জনবল নিয়োগ রয়েছে। আউটসোর্সিং ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছে ১১১ জন। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানিতে ৪২৯টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১৭৭ জন নিয়োজিত রয়েছে। ২৫২টি শূন্যপদ রয়েছে। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিতে ৫২২টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য পদ রয়েছে ২৭৪টি। জনবল নিয়োজিত আছে ২৪৮টি পদে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিতে ৫১৫টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য পদ আছে ১৮৬টি। বর্তমানে নিয়োজিত আছে ৩২৯ জন।
এদিকে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে লোকবল সবচেয়ে বেশি। দেশের সবচেয়ে বড় এলাকাজুড়ে গ্যাস বিতরণ করে থাকে কোম্পানিটি। এ কোম্পানিতে অনুমোদিত পদের সংখ্যা তিন হাজার ৭৩৬টি, পূরণকৃত পদ রয়েছে এক হাজার ৯১১টি, শূন্যপদ খালি আছে এক হাজার ৮২৫টি। তবে তিতাসে সবচেয়ে বেশি আউটসোর্সিং পদে লোকবল নিয়োগ থাকলেও, সে হিসাব পেট্রোবাংলাকে দেয়নি কোম্পানিটি।
সূত্রে জানা যায়, তিতাসের বৃহৎ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান, জরুরি ভিত্তিতে অগ্নিসংযোগসহ নানা সংকট সমাধানে বেশিরভাগ আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত লোকবলই কাজ করে থাকে। তিতাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, তিতাসে শূন্যপদ থাকলেও জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শূন্যপদগুলো পূরণ হয়ে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানিতে অনুমোদিত পদের অর্ধেকের বেশিই শূন্য রয়েছে। এক হাজার ৬১৫টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে পূরণকৃত রয়েছে ৭৭৯টি, শূন্যপদ রয়েছে ৮৩৬টি। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানিতেও একই অবস্থ। এক হাজার ২১৫টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে পূরণকৃত পদ রয়েছে ৫৩৬টি, শূন্যপদ রয়েছে ৬৭৯টি। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিতে অনুমোদিত পদ রয়েছে এক হাজার ৭৫টি, শূন্যপদ রয়েছে ৪৮০টি, পূরণকৃত পদ রয়েছে ৫৯৫টি। জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিতে অনুমোদিত ৯২৪টি পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে ৪৬৫টি, শূন্যপদ রয়েছে ৪৫৯টি।
এদিকে সব কোম্পানিতেই প্রায় অর্ধেক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ধেকের বেশি লোকবল শূন্য থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, লোকবল শূন্য হওয়া স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরে যাচ্ছেন। ফলে পদ খালি হচ্ছে। তবে নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে একটু বেশি লোকবল শূন্য হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, এখন অনেক কোম্পানিতেই নিয়োগ চলছে। দ্রুতই শূন্যপদে নিয়োগ হয়ে যাবে।
আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব খাতে এত লোক নিয়োগ দেওয়া বিষয়টি সরকারের আর্থিক সক্ষমতার সঙ্গে জড়িত। ফলে এমন অনেক কাজ আছে, যেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে আউটসোর্সিং নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দেওয়া কর্মীরা নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।