ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পেতে চরম ভোগান্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭ বার

রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যারা দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, সেই প্রবাসীরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রবাসীরা বলছেন, বেশির ভাগ ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। সময়মতো ভিসা নবায়ন করতে না পারলে গ্রেপ্তার ও জরিমানা হতে পারে। পাসপোর্ট না পেলে তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশে ফিরতে হবে। বেশি সমস্যায় আছেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা, বিশেষ করে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যারা আছেন।

পাসপোর্ট অফিসসূত্র বলছে, এমআরপির বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপার ঘাটতি ও এমআরপির প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ছাপা হতে দেরি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এমআরপি প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশে যেসব মিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু আছে, সেখানেও ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে এমআরপি সেবা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের।

কিন্তু আগামী জুনের মধ্যে এমআরপি সেবা বন্ধ হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের যৌথ মিটিংয়ে এমআরপি সেবা প্রদান ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগেই প্রবাসীদের কষ্ট লাঘবে অন্তর্বর্তী সরকার এমআরপি সেবার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে দেশে ও বাইরে অধিকাংশ বাংলাদেশ মিশনে পুরোদমে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু থাকায় পর্যায়ক্রমে আগামী জুনের মধ্যে এমআরপি সেবা প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করার লক্ষ্য ছিল আমাদের। ফলে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত করা হয়। বর্তমানে বইয়ের সংকট রয়েছে। আবার প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে এমআরপি প্রদানের মেয়াদ আগামী বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক কিছু আবার নতুন করে করতে হচ্ছে। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এমআরপি আবেদন প্রিন্টিংয়ে অপেক্ষমাণ থাকা আবেদনকারীরা ফি জমা দিয়ে আবেদন করলে দ্রুত ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, এমআরপি সেবায় ইতোমধ্যে নতুন মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে ও পাসপোর্ট বইও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংকট অতি দ্রুত কেটে যাবে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্যমতে, মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি প্রবাসী এমআরপি নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২৮ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি ১৪ হাজারের বেশি পাসপোর্ট এখনও প্রক্রিয়াধীন। শুধু মালয়েশিয়া নয়, বাংলাদেশি কর্মীদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবেও একই পরিস্থিতি। সেখানকার দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, এক লাখের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় আটকে আছে। কাতারে ১০ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা রয়েছে। দূতাবাসগুলো থেকে পাওয়া এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সময়মতো পাসপোর্ট না পেলে তিন দেশের দেড় লাখের বেশি কর্মীর অবৈধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, পাসপোর্ট না থাকায় কেউ কেউ এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে গেছেন। অনেকে আবার অবৈধ হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

সৌদি আরবে প্রায় ৩০ লাখ প্রবাসী। বেশির ভাগই পাসপোর্ট নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। এতে অনেকে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ-ছয় মাস ধরে এমআরপি পাসপোর্টের জটিলতায় কারও ইকামা ও কারও ভিসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এতে অনেক সময় দেশে ঘুরে যাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। পাসপোর্ট নবায়নের জটিলতায় কাতারে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। ভোগান্তি বাড়ছে রেসিডেন্সি নবায়নেও। দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে দেশে ফেরত আসা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকবে না বলে জানান তারা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পেতে চরম ভোগান্তি

আপডেট টাইম : ১০:২৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যারা দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, সেই প্রবাসীরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রবাসীরা বলছেন, বেশির ভাগ ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। সময়মতো ভিসা নবায়ন করতে না পারলে গ্রেপ্তার ও জরিমানা হতে পারে। পাসপোর্ট না পেলে তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশে ফিরতে হবে। বেশি সমস্যায় আছেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা, বিশেষ করে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যারা আছেন।

পাসপোর্ট অফিসসূত্র বলছে, এমআরপির বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপার ঘাটতি ও এমআরপির প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ছাপা হতে দেরি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এমআরপি প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশে যেসব মিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু আছে, সেখানেও ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে এমআরপি সেবা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের।

কিন্তু আগামী জুনের মধ্যে এমআরপি সেবা বন্ধ হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের যৌথ মিটিংয়ে এমআরপি সেবা প্রদান ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগেই প্রবাসীদের কষ্ট লাঘবে অন্তর্বর্তী সরকার এমআরপি সেবার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে দেশে ও বাইরে অধিকাংশ বাংলাদেশ মিশনে পুরোদমে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু থাকায় পর্যায়ক্রমে আগামী জুনের মধ্যে এমআরপি সেবা প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করার লক্ষ্য ছিল আমাদের। ফলে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত করা হয়। বর্তমানে বইয়ের সংকট রয়েছে। আবার প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে এমআরপি প্রদানের মেয়াদ আগামী বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক কিছু আবার নতুন করে করতে হচ্ছে। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এমআরপি আবেদন প্রিন্টিংয়ে অপেক্ষমাণ থাকা আবেদনকারীরা ফি জমা দিয়ে আবেদন করলে দ্রুত ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, এমআরপি সেবায় ইতোমধ্যে নতুন মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে ও পাসপোর্ট বইও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংকট অতি দ্রুত কেটে যাবে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্যমতে, মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি প্রবাসী এমআরপি নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২৮ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি ১৪ হাজারের বেশি পাসপোর্ট এখনও প্রক্রিয়াধীন। শুধু মালয়েশিয়া নয়, বাংলাদেশি কর্মীদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবেও একই পরিস্থিতি। সেখানকার দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, এক লাখের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় আটকে আছে। কাতারে ১০ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা রয়েছে। দূতাবাসগুলো থেকে পাওয়া এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সময়মতো পাসপোর্ট না পেলে তিন দেশের দেড় লাখের বেশি কর্মীর অবৈধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, পাসপোর্ট না থাকায় কেউ কেউ এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে গেছেন। অনেকে আবার অবৈধ হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

সৌদি আরবে প্রায় ৩০ লাখ প্রবাসী। বেশির ভাগই পাসপোর্ট নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। এতে অনেকে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ-ছয় মাস ধরে এমআরপি পাসপোর্টের জটিলতায় কারও ইকামা ও কারও ভিসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এতে অনেক সময় দেশে ঘুরে যাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। পাসপোর্ট নবায়নের জটিলতায় কাতারে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। ভোগান্তি বাড়ছে রেসিডেন্সি নবায়নেও। দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে দেশে ফেরত আসা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকবে না বলে জানান তারা।