দেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মেয়েদেরকে ইতিহাস পরিবর্তনের নায়িকা বলে সম্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লবের কন্যাদের কীর্তিগাঁথা ও অবদানকে উপজীব্য করে ‘জুলাইয়ের কন্যারা আমরা তোমাদের হারিয়ে যেতে দেব না’ শীর্ষক নারী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘তোমরা বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছো, সেটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা।এই ঐতিহাসিক ঘটনার নায়িকারা বাংলাদেশে যা ঘটিয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে অনেক অভ্যুত্থান হয়েছে।কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। কেউ তোমাদের উদ্বুদ্ধ করেনি।তোমরা নিজেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছো।এটা তোমাদের সম্পূর্ণ নিজেদের হাতে গড়া এক বিপ্লব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, চাকরিজীবী, পরিবারের যে যেখান থেকে পেরেছে সবাই বিপ্লবে যোগ দিয়েছে এবং সমানভাবে এগিয়ে এসেছে ও একেবারে পরিবর্তন করে দিয়েছে।৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। এই নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ব, এটা আমাদের শপথ।’
গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তোমরা যারা প্রাণ দিয়েছো, আহত হয়েছো, তোমাদেরকে আমরা ভুলিনি’।
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মেয়েরা এমন শক্তি দেখিয়েছে, যা অন্য কোনো দেশের মেয়েরা এখনো দেখাতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়- তোমরা অনেক এগিয়ে। এই যে এগিয়ে থাকাটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। তোমরা একটা সুযোগ পেয়েছো এবং সুযোগটা গ্রহণ করে দেখিয়ে দিয়েছো যে আমাদের শক্তি আছে এবং আমরা সেটা প্রকাশ করতে পারি।’
নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তোমরা পুরনো বাংলাদেশ বদলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে ভূমিকা নিয়েছো সেটা পূরণ করতে হবে। শুধু সরকারের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হবে না। কাজেই এটার পেছনে থাকতে হবে, এটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তোমাদের মনে আছে, বাংলাদেশের সকল মানুষের মনে আছে সেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করেছো তোমাদের প্রজন্ম একেবারে ভিন্ন। তোমরা মহা শক্তিশালী মানুষ। এই শক্তি শেষ হয়ে যায়নি, আমাদের পৃথিবীর সামনে আরও দৃষ্টান্তমূলক ইতিহাস সৃষ্টি করে যাব। তোমাদের কাছে সে সম্ভাবনা আছে।’
নতুন প্রজন্মের মেয়েদেরকে কোনো ভুলপথে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তোমাদের মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে সেটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সম্পূর্ণ নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে। কেবল বাংলাদেশ নয়, নতুন এক পৃথিবী গড়ে তোলার মহা কর্মযজ্ঞে নিজেদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সমাবেশের আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা অংশ নেন। কর্মজীবী নারীদেরও এতে অংশ নিতে দেখা যায়।
এ সময় জুলাই-আগস্ট উত্তাল সময়ের বিপ্লবী কন্যাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শিক্ষার্থীরা উৎসাহ ও উদ্দীপনায় তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দাবির কথা তুলে ধরলে তা মনোযোগ দিয়ে শোনেন তিনি।