ঢাকা ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাঁতের ক্ষয়রোগ থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৯:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১৩ বার

দাঁতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো শর্করা জাতীয় খাদ্যকণিকা ও মুখের থুতুর সঙ্গে মিলে ডেন্টাল প্ল্যাক তৈরি করে। ডেন্টাল প্ল্যাকে জীবাণুগুলোর বংশবিস্তার ঘটে। শেষে দাঁতের ওপর একজাতীয় অ্যাসিড নিঃসরিত হয়, যা দাঁতক্ষয়ের জন্য দায়ী। ব্রাশ করে যদি ডেন্টাল প্ল্যাক পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে ক্ষয়রোগ শুরু হতে পারে। দাঁতের রোগ শুরু হয় ছোট একটি গর্তের মাধ্যমে। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজ কোনো ব্যথা সৃষ্টি করে না। তবে ঠাণ্ডা পানি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে শিরশির করে।ক্রমে সমস্যা ক্রমে বড় হয়ে দাঁতের ভেতরের মজ্জা (পাল্প) আক্রান্ত করে। মজ্জার সঙ্গে স্নায়ুর সংযোগ থাকায় দাঁতের মজ্জা আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। এ অবস্থার নাম মজ্জার প্রদাহ। দীর্ঘদিন ধরে মজ্জার প্রদাহ চলতে থাকলে ক্রমে মজ্জা মরে যেতে থাকে। এ জাতীয় সমস্যায় জীবাণু সংক্রমণ দেখা দিয়ে মাড়ি ফুলে যেতে পারে, পুঁজ জমতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে গালও ফুলে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজ ধরা পড়লে, তা পরিষ্কার করে ভরাট করে দিয়ে সহজেই নিরাময় করা যায়।

চিকিৎসা : মুখের সামনের দিকের দাঁত ফিলিং করার জন্য দাঁতের রঙয়ের সঙ্গে মিল রেখে ফিলিং উপাদান নির্বাচন করা হয়। কিন্তু পেছনের দিকের দাঁতের ক্ষেত্রে তা না করলেও চলে। এ ক্ষেত্রে যে ফিলিং উপাদান খাবার চিবানোর চাপ সহ্য করতে পারে, এমন উপাদান ব্যবহার করা হয়। যদি ডেন্টাল ক্যারিজ যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হয়, তা হলে ক্যারিজ আরও বেশি বড় হয়ে দাঁতের মজ্জাকে আক্রান্ত করে। ফলে মজ্জার প্রদাহ শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে শুধু দাঁত ভরাট করে এ সমস্যার নিরাময় সম্ভব হয় না। তখন ‘রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট’ দরকার হয়। এ চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

ডেন্টাল ক্যারিজের কারণে যদি সংক্রমণ (ইনফেকশন) দেখা দেয় এবং মাড়িতে পুঁজ হয়, তখন ক্ষেত্রবিশেষে পুঁজ সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে। তবে মাড়ির সংক্রমণ হলে অনেক সময়ই দাঁতের চারপাশের হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। তখন দাঁত নড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দাঁতটি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো দাঁতের শেকড়ের শেষ মাথায় সিস্ট, গ্রানুলোমা বা ইনফেকশন দেখা যায়। তখন দাঁতটি সংরক্ষণের পদ্ধতি বেশ জটিল হয়ে ওঠে। সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে দাঁতটি তুলে ফেলার দরকার হতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হওয়ার কারণে দাঁতের গর্ত যদি খুব বেশি বড় হয়ে যায়, তখন শক্ত কিছু খেতে গিয়ে দাঁতের মুকুট ভেঙে যেতে পারে। তখন সাধারণ ফিলিং করে দাঁতটি মেরামত করা সম্ভব হয় না। দাঁতে ক্যাপ করার দরকার হতে পারে।

পরামর্শ : ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধের জন্য দরকার প্রতিদিন সকাল ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুবেলা নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা। ফোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো। ফোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যায়। ডেন্টাল কিনিকে দাঁতের ওপর স্থানীয়ভাবে ফোরাইড ব্যবহার করারও ব্যবস্থা আছে। শিশুদের দাঁতে যেন ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য দাঁতে ‘ফিশার সিলেন্ট’ নামক ফিলিং উপাদান ব্যবহার করে ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধ করা যায়। সবচেয়ে বেশি জরুরি, প্রতি ছয় মাস অন্তর অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁত ও মুখ গহ্বর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। এতে সহজেই দাঁতের চিকিৎসার জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দাঁতের ক্ষয়রোগ থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে

আপডেট টাইম : ১০:৪৯:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

দাঁতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো শর্করা জাতীয় খাদ্যকণিকা ও মুখের থুতুর সঙ্গে মিলে ডেন্টাল প্ল্যাক তৈরি করে। ডেন্টাল প্ল্যাকে জীবাণুগুলোর বংশবিস্তার ঘটে। শেষে দাঁতের ওপর একজাতীয় অ্যাসিড নিঃসরিত হয়, যা দাঁতক্ষয়ের জন্য দায়ী। ব্রাশ করে যদি ডেন্টাল প্ল্যাক পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে ক্ষয়রোগ শুরু হতে পারে। দাঁতের রোগ শুরু হয় ছোট একটি গর্তের মাধ্যমে। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজ কোনো ব্যথা সৃষ্টি করে না। তবে ঠাণ্ডা পানি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে শিরশির করে।ক্রমে সমস্যা ক্রমে বড় হয়ে দাঁতের ভেতরের মজ্জা (পাল্প) আক্রান্ত করে। মজ্জার সঙ্গে স্নায়ুর সংযোগ থাকায় দাঁতের মজ্জা আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। এ অবস্থার নাম মজ্জার প্রদাহ। দীর্ঘদিন ধরে মজ্জার প্রদাহ চলতে থাকলে ক্রমে মজ্জা মরে যেতে থাকে। এ জাতীয় সমস্যায় জীবাণু সংক্রমণ দেখা দিয়ে মাড়ি ফুলে যেতে পারে, পুঁজ জমতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে গালও ফুলে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজ ধরা পড়লে, তা পরিষ্কার করে ভরাট করে দিয়ে সহজেই নিরাময় করা যায়।

চিকিৎসা : মুখের সামনের দিকের দাঁত ফিলিং করার জন্য দাঁতের রঙয়ের সঙ্গে মিল রেখে ফিলিং উপাদান নির্বাচন করা হয়। কিন্তু পেছনের দিকের দাঁতের ক্ষেত্রে তা না করলেও চলে। এ ক্ষেত্রে যে ফিলিং উপাদান খাবার চিবানোর চাপ সহ্য করতে পারে, এমন উপাদান ব্যবহার করা হয়। যদি ডেন্টাল ক্যারিজ যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হয়, তা হলে ক্যারিজ আরও বেশি বড় হয়ে দাঁতের মজ্জাকে আক্রান্ত করে। ফলে মজ্জার প্রদাহ শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে শুধু দাঁত ভরাট করে এ সমস্যার নিরাময় সম্ভব হয় না। তখন ‘রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট’ দরকার হয়। এ চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

ডেন্টাল ক্যারিজের কারণে যদি সংক্রমণ (ইনফেকশন) দেখা দেয় এবং মাড়িতে পুঁজ হয়, তখন ক্ষেত্রবিশেষে পুঁজ সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে। তবে মাড়ির সংক্রমণ হলে অনেক সময়ই দাঁতের চারপাশের হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। তখন দাঁত নড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দাঁতটি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো দাঁতের শেকড়ের শেষ মাথায় সিস্ট, গ্রানুলোমা বা ইনফেকশন দেখা যায়। তখন দাঁতটি সংরক্ষণের পদ্ধতি বেশ জটিল হয়ে ওঠে। সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে দাঁতটি তুলে ফেলার দরকার হতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হওয়ার কারণে দাঁতের গর্ত যদি খুব বেশি বড় হয়ে যায়, তখন শক্ত কিছু খেতে গিয়ে দাঁতের মুকুট ভেঙে যেতে পারে। তখন সাধারণ ফিলিং করে দাঁতটি মেরামত করা সম্ভব হয় না। দাঁতে ক্যাপ করার দরকার হতে পারে।

পরামর্শ : ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধের জন্য দরকার প্রতিদিন সকাল ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুবেলা নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা। ফোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো। ফোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যায়। ডেন্টাল কিনিকে দাঁতের ওপর স্থানীয়ভাবে ফোরাইড ব্যবহার করারও ব্যবস্থা আছে। শিশুদের দাঁতে যেন ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য দাঁতে ‘ফিশার সিলেন্ট’ নামক ফিলিং উপাদান ব্যবহার করে ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধ করা যায়। সবচেয়ে বেশি জরুরি, প্রতি ছয় মাস অন্তর অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁত ও মুখ গহ্বর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। এতে সহজেই দাঁতের চিকিৎসার জটিলতা এড়ানো সম্ভব।