বর্ষাকালেই ডেঙ্গুরোগের প্রকোপ বাড়ে- এ কথা সবৈব সত্য। তবে এই নভেম্বরে প্রকৃতিতে হেমন্ত ঋতু অর্থাৎ শীত চলে এলেও ডেঙ্গুজ¦রের প্রকোপ কমছে তো না-ই, আরও বেড়ে গিয়েছে বলা যায়। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ। আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য জনসাধারণ। একটি কথা আমাদের খুব করে মনে রাখা প্রয়োজন, ডেঙ্গুরোগ সবসময় একইভাবে প্রকাশ পায় না। অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষণ হালকা হয়ে দেখা দেয়, আবার অনেকেরই গুরুতর হয়ে দেখা দিয়ে থাকে।
তবে এ জ্বরের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন- প্রবল জ্বর, মাথাব্যথা, গাঁটে গাঁটে এবং পেশিতে ব্যথা, ফুসকুড়ি ও ক্লান্তি ইত্যাদি। পরিস্থিতি গুরুতর হলে এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ডেঙ্গুজ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি উঠতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে যেমন এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তেমনি শিশুদের ক্ষেত্রেও একইভাবে দেখা দেয়।
এখন শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলেই অভিভাবকরা ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতংকিত বোধ করতে থাকেন। সব শিশুর ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা এক রকম নয় এবং সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজনও নেই। তবে সাতটি মারাত্মক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। নইলে জীবননাশের হুমকি থেকে যায়।
লক্ষণ : তীব্র জ্বর (১০২-১০৪ ০ঋ); তীব্র মাথা যন্ত্রণা; চোখের পেছনে ব্যথা; মাংসপেশি ও হাড়ে ব্যথা; তীব্র বমিভাব; প্রচণ্ড খাবারে অরুচি; মাথা ঘোরা অথবা দুর্বলতা অনুভব করা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বরের ২-৩ দিনের মাথায় অথবা জ্বর কমার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা শরীরে পানিশূন্যতা দূরীকরণ, নির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় শিরায় স্যালাইন দেওয়ার মাধ্যমে রোগের মারাত্মক জটিলতা পরিহার করানো। তবে যেসব শিশু আগে থেকেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, যেমনÑ কিডনি রোগ, রক্তজনিত রোগ, লিভার সংক্রান্ত জটিলতা অথবা বিশেষায়িত ওষুধ সেবন করছে, তাদের জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
ডেঙ্গু রোগে অনেকেই রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এ রোগে প্লাটিলেট-সংক্রান্ত জটিলতা স্বল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা দেয়। অধিকাংশ রোগী পানিশূন্যতা, বুকে ও পেটে পানি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসে। তাদের চিকিৎসা শুধু বিশেষায়িত হাসপাতালেই সম্ভব। তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগী মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা প্রাণনাশের কারণ হয়ে ওঠে।
চিকিৎসা : শিশুর জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করানো, প্রয়োজনে প্রতিদিন ঈইঈ পরীক্ষা করানো, অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
প্রতিরোধের উপায় : ডেঙ্গুজ্বর থেকে রক্ষা পেতে এর বিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। জলাবদ্ধতা নিরসন এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। মশার প্রজনন স্থান নির্মূল করুন। তিনদিনের বেশি পানি জমিয়ে রাখবেন না। লম্বা হাতার পোশাক পরুন। বাজারে কিছু ক্রিম পাওয়া যায়, যেগুলো মশা দূরে রাখতে কাজ করে। এ ধরনের ক্রিম হাত ও পায়ে ব্যবহার করতে পারেন। এ রোগের কার্যকরী টিকা এখনও সহজলভ্য নয়।