ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই বলেছেন, এ দেশের মানুষ শুধু একটা নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেনি। মানুষের মুক্তি এবং অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জীবন দিয়েছে মানুষ। শুধু তাই না, বৈষম্যহীনভাবে বসবাস করার জন্য তারা জীবন ও রক্ত দিয়েছে। কিন্তু এই সুযোগে জুলুম, অত্যাচার, অভিচার, নির্বিচারে হত্যা, মিথ্যা মামলা, দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে একদল।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে চরফ্যাশন বাজারে ফ্যাশন স্কয়ারে ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা দক্ষিণের আয়োজনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও সখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘বহু নেতার শাসন আমরা দেখেছি। সবুজ বাংলা, সোনার বাংলা, নতুন বাংলা, ডিজিটাল বাংলা এবং স্মার্ট বাংলা দেখেছি। আইয়ুব খান, শেখ সাহেব, জিয়াউর রহমান, সাত্তার সাহেব, খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার শাসন দেখেছি।
বহু শাসক দেখেছি কিন্তু মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন দেখিনি। জনগণকে বুঝতে হবে তেঁতুল গাছ লাগিয়ে যেমন মিষ্টি ফলের আশা করা যায় না, তেমনিভাবে চোরের মাধ্যমে চুরিমুক্ত দেশ হতে পারে না। বার বার বাংলাদেশে ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন হয়নি। শুধু ব্যক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে, সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে, ভূখণ্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের শান্তি আসতে পারে না। মুক্তি আসতে পারে না।’
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে পুরো দেশের সব গরীব দরিদ্র সীমার ওপরে চলে যাবে। ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে মানুষ মুক্তি পাবে, শান্তি পাবে ও স্বাধীনতা পাবে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সে-যে ধর্মেরই হোকে না কোনো সম-অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। ইসলামী হুকুমত হলে জুলুম, অত্যাচার, অভিচার থাকবে না।
কেউ ১০ তলায় আবার কেউ গাছতলায় থাকবে না। কেউ অট্টালিকায় ঘুমাবে আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করবে তা হবে না। এক মুঠো খাবারের জন্য ডাস্টবিনে কাক এবং কুকুরের সঙ্গে লড়াই করবে হবে না। কেউ বস্ত্রহীন ও ক্ষুধার্ত থাকবে তা আর দেখতে চাই না। কোনো মা ক্ষুধার জ্বালায় তার সন্তানকে বিক্রি করে দিবে এরকম সমাজ আমরা দেখতে চাই না। এ সমাজ পরিবর্তন করতে চাই, ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই। যেখানে শাসকরা জনগণের খাদেম হবে।’নতুন নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, জুলুম, অত্যাচার-অবিচার, পেশি শক্তির ব্যবহার ও অবৈধ টাকার ছড়াছড়ি বন্ধের জন্য সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যেখানে কোনো ব্যক্তিকে ভোট দিবে না, প্রতিপক্ষকে ভোট দিবে। তাই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন দিতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান পল্লী বিদ্যুতের চলমান অস্থিরতা ও বৈষম্য দূর করে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে জ্বালানি উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি বরিশাল বিভাগে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান মুফতি ফয়জুল করিম।
ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা দক্ষিণের সভাপতি আলহাজ আলাউদ্দিন তালুকদারের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহা. সিরাজুল ইসলাম।