চোখের সামনেই কাঁচাকচু চিবিয়ে খেয়ে দেখালেন খুলনার চাষি নিউটন মণ্ডল। সাধারণত কচু ধরলে বা খেলে হাত-গাল চুলকায় অথচ থাই অগ্নিশ^র জাতের কচু একেবারেই চুলকানিমুক্ত। এটির স্বাদও সাধারণ কচুর চেয়ে আলাদা। থাই জাতের এ কচু চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নিউটন। শুরুতে স্ত্রীর পরামর্শে নিজের ঘেরের পাড়ে, উঁচু স্থানে ও বাড়ির আঙিনায় এই জাতের কচু চাষ করে সফল হয়েছেন এই চাষি। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই কচু চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। কচুচাষি নিউটন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনা মাদারডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।
একটি বেসরকারি জুট মিলে ১৬ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী প্রীতিলতা মণ্ডলের পরামর্শে আঙিনায় কচু চাষ শুরু করেন তিনি। শুরুতে কচুতে আগ্রহ ছিল না তার। ৩৪ শতক জমি বর্গা নিয়ে ধার আবাদ শুরু করেছিলেন। পরে স্ত্রীর পরামর্শে জমির একাংশে বুনে দেন ৬০০ পানি কচুর চারা। সেবার ২০টির মতো কচু বিক্রি হয়েছিল। বাকিগুলো চারা করার জন্য রেখে দেন। প্রথম দুই বছর ধান চাষ করলেও এরপর পুরো জমিতেই কচুর চাষ করেন এই কৃষক। কচু চাষে নিউটনের সাফল্য দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
নিউটন বলেন, থাই অগ্নিস্বর কচু চাষ করছি তা-ই নয়, এর চারা প্রস্তুত করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমার। এলাকাবাসী আমার চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমারই কাছ থেকে চারা নিয়ে অনেকেই এ চাষে আগ্রহী হয়েছে। তবে এবারের টানা বৃষ্টিতে আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেক টাকার কচু বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
কচুর চারার খোঁজে এলাকার ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন নিউটন। প্রতিটি অগ্নিশ^র জাতের কচুর চারা বিক্রি করছেন ৫০ টাকায়। গত ৩ বছরে প্রায় ৩ হাজার চারা বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। তবে প্রাকৃতিক পদ্ধতির চেয়ে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে চারা তৈরি করতে পারলে খরচ অনেক কমে আসত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিউটন বলেন, এই জাতের কচুর চারা করা বেশ কঠিন। চারা তৈরি করতে চাইলে সেই কচু আর খাওয়ার জন্য বিক্রি করা যায় না। পূর্ণবয়স্ক এই কচুর গোড়া ২০ কেজি পর্যন্ত হয়। খেতে ভীষণ সুস্বাদু হয় বলে এলাকায় এ কচুর চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে আমার কাছে ৫০০ গাছ এবং ৩ হাজার চারা আছে। কচু বিক্রি করে বর্তমানে আমার মাসিক আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা।
স্থানীয় রিতা বিশ্বাস বলেন, নিউটনের কচু লাগানো দেখে আমরাও কচু চাষ শুরু করি। তবে টানা বৃষ্টিতে আমাদেরও ঘের কচুর ক্ষেত সব ডুবে গেছে। ঘের ডুবে যাওয়ায় শুধু নিউটনের নয়, এই এলাকার হাজারো মানুষের ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি নেমে গেলে আবার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।