ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশে থাকা কর্মকর্তাকে বাঁচাতে মরিয়া ডিপিডিসির সোনা মনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ০ বার

২০২১ সালে ১৬ মাসের ‘শিক্ষা ছুটি’ নিয়ে কানাডায় মাস্টার্স করতে যান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এইচআর বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান ভূঁইয়া। নানা অজুহাতে সেই ছুটি ৩৬ মাস পর্যন্ত বাড়ান তিনি। তারপরও শেষ পর্যন্ত আর দেশে ফিরে আসেননি। কানাডায় স্থায়ী বসবাসের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন এ কর্মকর্তা।

প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী তার চাকরি এতদিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তা ঠেকিয়ে রেখেছেন ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) সোনা মনি চাকমা।

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি, গ্রাহক হয়রানি, দালালদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরিতে সহায়তা, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানসহ অসংখ্য অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে বাড়ছে অসন্তোষ।

২০২১ সালে কানাডায় মাস্টার্স করতে যাওয়া কামরুজ্জামানের কোর্স অনেক আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ডিপিডিসিতে তিনি কোনো সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দেননি। বরং তিনি কানাডায় চাকরি এবং স্থায়ী বসবাসের চেষ্টা করছেন

ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ডিপিডিসিতে সবকিছু চলছে আগের নিয়মে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার কারণেই পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগছে না ডিপিডিসিতে।

অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্মকর্তাকে চাকরিতে বহাল

২০২১ সালে কানাডায় মাস্টার্স করতে যাওয়া কামরুজ্জামানের কোর্স অনেক আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ডিপিডিসিতে তিনি কোনো সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দেননি। বরং তিনি কানাডায় চাকরি এবং স্থায়ী বসবাসের চেষ্টা করছেন।

বর্ধিত ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজে যোগদান না করায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে সাত দিনের নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ডিপিডিসি সার্ভিস রুল ২০১৭ এর ৫.৩ (এফ) ধারা অনুযায়ী— কোনো কর্মকর্তা বিনা অনুমতিতে ১৫ দিন কাজে অনুপস্থিত থাকলে তা অসদাচরণ বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তবে কামরুজ্জামানের ক্ষেত্রে এরকম কিছু করা হয়নি।

অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে সোনা মনি চাকমা তাকে চাকরিতে বহাল রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের পাহাড়

ডিপিডিসিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে নিচের দিকের পদে বদলির ক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগে ডিপিডিসিতে সব পদের বদলি অনুমোদন করতেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সোনা মনি চাকমা প্রেষণে ডিপিডিসিতে এসেই প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে নিচের দিকের সব কর্মচারীর বদলির ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন তিনি।

অন্য বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানে (ডেসকো, ওজোপাডিকো) বদলি ও পদায়নের নীতিমালা থাকলেও ডিপিডিসিতে এমন কোনো নীতিমালা নেই। ডিপিডিসির বদলি ও পদায়ন হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। এ প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে।

ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ডিপিডিসিতে সবকিছু চলছে আগের নিয়মে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার কারণেই পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগছে না ডিপিডিসিতে

চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) ও ব্যবস্থাপক (অর্থ) পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়। এসবের হোতা হিসেবে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান, সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তফা ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার নাম শোনা যাচ্ছে। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এসব কর্মকর্তা ডিপিডিসিতে ব্যাপক অনিয়ম করছেন বলে অন্য কর্মকর্তাদের অভিযোগ।

ডিপিডিসিতে সাধারণত ভাইভার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী একটি তালিকা তৈরি করে ভাইভা নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় সেই ধারা বজায় না রেখে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, ডিপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের আমলে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সোনা মনি চাকমার প্রভাবে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ন্যায্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কোম্পানির নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি।

বৈষম্য দূরীকরণের কমিটি পরিবর্তন

সরকার পরিবর্তনের পর অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো ডিপিডিসিতেও বঞ্চিতরা বৈষম্যবিরোধী কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। গত ২২ আগস্ট ডিপিডিসি সার্ভিস রুল ২০১৭-এ বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সোনা মণি চাকমাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের পরই বঞ্চিত কর্মকর্তারা এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সোনা মণি চাকমাকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ২৮ আগস্ট নতুন কমিটি করতে বাধ্য হয়।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সংস্থাটির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ ডিপিডিসির যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তাদের মধ্যে রয়েছে সোনা মনি চাকমার নামও।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে হোয়াটসঅ্যাপে এক বার্তায় সোনা মনি চাকমা বলেন, ‘কামরুজ্জামান ভুঁইয়ার বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

তবে পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান বলেন, ‘যে অভিযোগগুলোর কথা আপনি বলেছেন, সেসব নিয়ে কাজ করা হবে। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিদেশে থাকা কর্মকর্তাকে বাঁচাতে মরিয়া ডিপিডিসির সোনা মনি

আপডেট টাইম : ০৬:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

২০২১ সালে ১৬ মাসের ‘শিক্ষা ছুটি’ নিয়ে কানাডায় মাস্টার্স করতে যান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এইচআর বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান ভূঁইয়া। নানা অজুহাতে সেই ছুটি ৩৬ মাস পর্যন্ত বাড়ান তিনি। তারপরও শেষ পর্যন্ত আর দেশে ফিরে আসেননি। কানাডায় স্থায়ী বসবাসের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন এ কর্মকর্তা।

প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী তার চাকরি এতদিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তা ঠেকিয়ে রেখেছেন ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) সোনা মনি চাকমা।

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি, গ্রাহক হয়রানি, দালালদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরিতে সহায়তা, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানসহ অসংখ্য অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে বাড়ছে অসন্তোষ।

২০২১ সালে কানাডায় মাস্টার্স করতে যাওয়া কামরুজ্জামানের কোর্স অনেক আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ডিপিডিসিতে তিনি কোনো সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দেননি। বরং তিনি কানাডায় চাকরি এবং স্থায়ী বসবাসের চেষ্টা করছেন

ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ডিপিডিসিতে সবকিছু চলছে আগের নিয়মে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার কারণেই পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগছে না ডিপিডিসিতে।

অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্মকর্তাকে চাকরিতে বহাল

২০২১ সালে কানাডায় মাস্টার্স করতে যাওয়া কামরুজ্জামানের কোর্স অনেক আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ডিপিডিসিতে তিনি কোনো সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দেননি। বরং তিনি কানাডায় চাকরি এবং স্থায়ী বসবাসের চেষ্টা করছেন।

বর্ধিত ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজে যোগদান না করায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে সাত দিনের নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ডিপিডিসি সার্ভিস রুল ২০১৭ এর ৫.৩ (এফ) ধারা অনুযায়ী— কোনো কর্মকর্তা বিনা অনুমতিতে ১৫ দিন কাজে অনুপস্থিত থাকলে তা অসদাচরণ বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তবে কামরুজ্জামানের ক্ষেত্রে এরকম কিছু করা হয়নি।

অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে সোনা মনি চাকমা তাকে চাকরিতে বহাল রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের পাহাড়

ডিপিডিসিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে নিচের দিকের পদে বদলির ক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগে ডিপিডিসিতে সব পদের বদলি অনুমোদন করতেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সোনা মনি চাকমা প্রেষণে ডিপিডিসিতে এসেই প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে নিচের দিকের সব কর্মচারীর বদলির ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন তিনি।

অন্য বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানে (ডেসকো, ওজোপাডিকো) বদলি ও পদায়নের নীতিমালা থাকলেও ডিপিডিসিতে এমন কোনো নীতিমালা নেই। ডিপিডিসির বদলি ও পদায়ন হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। এ প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে।

ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ডিপিডিসিতে সবকিছু চলছে আগের নিয়মে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার কারণেই পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগছে না ডিপিডিসিতে

চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) ও ব্যবস্থাপক (অর্থ) পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়। এসবের হোতা হিসেবে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান, সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তফা ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার নাম শোনা যাচ্ছে। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এসব কর্মকর্তা ডিপিডিসিতে ব্যাপক অনিয়ম করছেন বলে অন্য কর্মকর্তাদের অভিযোগ।

ডিপিডিসিতে সাধারণত ভাইভার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী একটি তালিকা তৈরি করে ভাইভা নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় সেই ধারা বজায় না রেখে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, ডিপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের আমলে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সোনা মনি চাকমার প্রভাবে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ন্যায্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কোম্পানির নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি।

বৈষম্য দূরীকরণের কমিটি পরিবর্তন

সরকার পরিবর্তনের পর অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো ডিপিডিসিতেও বঞ্চিতরা বৈষম্যবিরোধী কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। গত ২২ আগস্ট ডিপিডিসি সার্ভিস রুল ২০১৭-এ বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সোনা মণি চাকমাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের পরই বঞ্চিত কর্মকর্তারা এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সোনা মণি চাকমাকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ২৮ আগস্ট নতুন কমিটি করতে বাধ্য হয়।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সংস্থাটির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ ডিপিডিসির যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তাদের মধ্যে রয়েছে সোনা মনি চাকমার নামও।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে হোয়াটসঅ্যাপে এক বার্তায় সোনা মনি চাকমা বলেন, ‘কামরুজ্জামান ভুঁইয়ার বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

তবে পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান বলেন, ‘যে অভিযোগগুলোর কথা আপনি বলেছেন, সেসব নিয়ে কাজ করা হবে। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’